ঢাকা, শনিবার, ১৯ পৌষ ১৪৩১, ০৪ জানুয়ারি ২০২৫, ০৩ রজব ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

সেতুর টোল আদায়ে ধীরগতি, গাড়ি চলে ধুঁকে ধুঁকে

সৈয়দ বাইজিদ ইমন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪
সেতুর টোল আদায়ে ধীরগতি, গাড়ি চলে ধুঁকে ধুঁকে টোল আদায়ের ধীরগতির কারণে সেতুর উভয় প্রান্তে আটকা পড়ে যানবাহন। ছবি: বাংলানিউজ

চট্টগ্রাম: কর্ণফুলীর শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজার উভয় পাশে প্রতিনিয়তই লেগে থাকে যানজট। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে কক্সবাজার, বান্দরবানসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারীদের।

বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে  মইজ্জ্যারটেক থেকে শুরু করে সেতুর টোল প্লাজা পর্যন্ত দেখা যায় যানবাহনের দীর্ঘ সারি। আবার টোল প্লাজা থেকে সেতুর অংশেও যানবাহন আটকে থাকে।
অভিযোগ রয়েছে, নতুন ও অনভিজ্ঞ কর্মকর্তা-কর্মচারী দিয়ে টোল প্লাজা পরিচালনার কারণেই যাত্রীদের এই দুর্ভোগ।

এর আগে দুই পাশে তিনটি করে ছয়টি বুথে টোল আদায় করা হতো। এখন দুই পাশে চারটি করে মোট আটটি বুথ খুলে দেওয়া হয়েছে। এরপরেও টোল আদায়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তৃপক্ষকে।

এদিকে, শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজার যানজট নিরসনে দুই পাশে আরও দুটি লেইন বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ)।  

জানা গেছে, বর্তমানে টোল প্লাজা এলাকায় দুই পাশে ৪টি করে ৮টি বুথ রয়েছে। তারপরও প্রতিদিন বিশেষ করে সন্ধ্যার পর যানবাহনের সারি দীর্ঘ হতে থাকে। সপ্তাহের বৃহস্পতি, শুক্র ও শনিবার অসহনীয় যানজটের সৃষ্টি হয়।  

এদিকে যানজট নিরসনে দুটি লেইন বাড়ানোর জন্য ইতোমধ্যে টেন্ডার আহ্বান করেছে সওজ চট্টগ্রাম অঞ্চলে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষে এখন ওয়ার্ক অর্ডার পর্যায়ে আছে। আগামী জানুয়ারি থেকে কাজ শুরু করার পরিকল্পনা কর্তৃপক্ষের। নতুন করে দুই পাশে দুটি বুথ বাড়লে তখন উভয় পাশে বুথের সংখ্যা দাঁড়াবে ১০টি। এখন যে যানজট দেখা যায় তখন সেটি আর থাকবে না বলে মনে করছেন সওজের সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

সওজ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মোসলেহ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজা এলাকায় যানজট নিরসনে বিদ্যমান টোল প্লাজার দুই পাশে আরো দুটি লেইন বাড়ানো হচ্ছে। টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। এখন ওয়ার্ক অর্ডার পর্যায়ে আছে। আমরা আশা করছি জানুয়ারিতে কাজ শুরু হবে।

মইজ্জ্যারটেক এলাকার ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই) আবু সাঈদ বাকার বলেন, এই রুটে যানবাহনের সংখ্যা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। আমাদের ট্রাফিক পুলিশ সদস্যরা সর্বোচ্চ চেষ্টা করছেন যানজট নিয়ন্ত্রণ রাখতে। নতুন করে ট্রাফিক পুলিশ বক্স নির্মাণের কাজ চলছে। তবুও গাড়ির চাপ সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

শাহ আমানত সেতু থেকে টোল প্লাজা হয়ে মইজ্জ্যারটক এলাকা পর্যন্ত যানজটের কারণে যাত্রী, অ্যাম্বুলেন্সের রোগী, শিক্ষার্থী, চাকরিজীবীসহ সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছে মাসের পর মাস। যাত্রী থেকে ব্যবসায়ী সবার অভিযোগ, টোল আদায়ে ধীরগতি, অব্যবস্থাপনা এবং কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণেই যানজট সমস্যার সমাধান হচ্ছে না।

স্থানীয়রা জানান, নতুন ও অনভিজ্ঞ কর্মচারী দিয়ে টোল আদায় করা হচ্ছে। আগে টাকা দিলেই দ্রুত সময়ে টোল প্লাজা পার হয়ে যাওয়া যেত। এখন টাকা দিলে টোল প্লাজায় কর্মরত কর্মচারীরা প্রথমে টাকা নেয়, পরে কম্পিউটার চাপে এরপর বাকি টাকা ভাংতি দিতেই সময় পার। টোল প্লাজায় যানজট কমাতে অন্তত আরো চারটি লেন বাড়ানো দরকার বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

ট্রাক চালক আনু মিয়া অভিযোগ করে বলেন, কর্ণফুলী সেতুর চেয়ে মেঘনা-গোমতী বা যমুনা সেতু দিয়ে অনেক বেশি গাড়ি চলে, কিন্তু ওখানে টোল আদায় অনেক দ্রুত হয়। শাহ আমানত সেতুতে টোল আদায় ধীরগতির পাশাপাশি নতুন ও অনভিজ্ঞ কর্মচারী দিয়ে কাজ করানো হয় যার কারণে জ্যাম বেড়ে যাচ্ছে।

বন্ধ ফাস্ট ট্র্যাক সার্ভিস:

২০১৯ সালের ২৭ অক্টোবর সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে শাহ আমানত সেতুতে ফাস্ট ট্র‍্যাক (টোল কালেকশন সিস্টেম) পদ্ধতি চালু করা হয়। নগদহীন টোল সংগ্রহ ও টোল গেইটে যানজট নিরসনের জন্য এ পদ্ধতি। কিন্তু উদ্বোধনের কিছু সময়ের মধ্যেই বন্ধ হয়ে যায় এ পদ্ধতি। আবারও যে লাউ সেই কদু। টোল প্লাজার সামনে প্রতিনিয়তই দীর্ঘ যানজট। এরইমধ্যে যু্ক্ত হয়েছে অনভিজ্ঞ ও নতুন টোল আদায়কারী, অব্যবস্থাপনা এবং বিভিন্ন অবৈধ যানবাহনের চাপ। যার কারণে প্রায় প্রতিদিনই চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এ সড়কে যাতায়াতকারী হাজারো পর্যটক ও যাত্রীদের।  

দেশের বাণিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রাম এবং দক্ষিণ চট্টগ্রাম, বান্দরবান ও কক্সবাজারের মতো গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকার সংযোগ স্থাপনকারী এই সেতুর যানজট দ্রুত নিরসন না হলে অর্থনীতি ও পর্যটনখাতও ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

দৈনিক ২০ হাজারের বেশি যানবাহনের টোল আদায় হয় ছয় লাইনে। ২০১০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর শাহ আমানত সেতু চালু হয়। টোল প্লাজায় তিনটি করে উভয়দিয়ে ৬টি লেন নিয়ে সেতুর কার্যক্রম চালু হয়। সেতুর ওপর যানবাহনের চাপ অত্যধিক হওয়ার কারণে ৩ বছর আগে টোলপ্লাজার দুই পাশের অযান্ত্রিক যান চলাচলের জন্য রাখা ফ্রি টোল লেন দুটির পরিসর বাড়িয়ে ছোট যানবাহন চলাচলের উপযোগী করে করা হয়। এরপর থেকে বর্তমানে শাহ আমানত সেতু টোল প্লাজা এলাকায় দুই পাশে ৪টি করে ৮টি বুথ রয়েছে। তারপরও দীর্ঘ যানজটের কারণে যাত্রীদের সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

স্থানীয় সূত্র, চালক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় প্রতিদিন সকাল ১০টার পর শাহ আমানত সেতুর টোল প্লাজায় যানজট শুরু হয়। গভীর রাতেও পড়তে হয় যানজটে। চট্টগ্রাম শহর থেকে দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী লেনে যানজটের কবলে পড়ে যানবাহনগুলো।

গত বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) দুপুর ১২টার দিকে দেখা যায়, শাহ আমানত সেতুর গোড়া থেকে টোল প্লাজা পর্যন্ত দক্ষিণ চট্টগ্রামমুখী ৩০০ মিটারের বেশি জায়গাজুড়ে যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ওই সময় সব ধরনের যান দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে।

সিএনজি অটোরিকশার এক চালক বাংলানিউজকে বলেন, শাহ আমানত সেতুর পূর্ব পাশ (নোমান কলেজ মুখ) থেকে আমি নিয়মিত যাত্রী নিয়ে কক্সবাজার জেলার চকরিয়া উপজেলার বদরখালীর উদ্দ্যেশ্যে রওনা হই। আগে দ্রুত সময়ে সেতুর টোল আদায় করে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেও বর্তমানে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা সময় ব্যয় হয় শাহ আমানত সেতুর যানজটে।

বাসের চালক জসিম উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, প্রায় প্রতিদিনই সকাল-বিকেল টোলপ্লাজার সামনে তীব্র যানজট তৈরি হয়। টোল আদায়কারী আটটি লেন চালু থাকলেও, ধীরগতির কারণে গতি কমে যায়। সেতুর দুই প্রান্তেই এমনিতেই জ্যাম লেগে থাকে, তার উপর টোল আদায়ের সময়ও বাড়তি বিড়ম্বনা সৃষ্টি হয়।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটের বাসচালক রহমতুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, সাতকানিয়া থেকে টোল প্লাজা পর্যন্ত আসতে এক ঘণ্টা তার কম বেশি সময় লাগে। টোল প্লাজায় ধীরগতির কারণে কোনো সময় শাহ আমানত সেতুর আশপাশেই ঘণ্টা পার হয়ে যায়। টোল আদায় দ্রুত করা গেলে এই জট অনেকটাই কমে যেত। কিন্তু কর্তৃপক্ষের টোল আদায়ের অব্যবস্থাপনা আর ধীরগতি আমাদের ভোগান্তি বাড়িয়ে দিচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৩০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০২৪ 
বিই/পিডি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।