ঢাকা, শুক্রবার, ১২ পৌষ ১৪৩১, ২৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

জেএমবি কমাণ্ডারের আস্তানায় অভিযান, অস্ত্র-গুলিসহ আটক ৩

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৫০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
জেএমবি কমাণ্ডারের আস্তানায় অভিযান, অস্ত্র-গুলিসহ আটক ৩ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের হাটহাজারী থানার অধীন নগরীর এক নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের আমানবাজার এলাকায় নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মোজাহিদিন বাংলাদেশের (জেএমবি) বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক কমাণ্ডারের আস্তানার সন্ধান পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়েছে নগর গোয়েন্দা ‍পুলিশ।  

অভিযানে ওই আস্তানা থেকে ভারি অস্ত্রশস্ত্র, গোলাবারুদ, বোমা তৈরির সরঞ্জাম উদ্ধার হয়েছে।

  এছাড়া জেএমবির তিন সদস্যকে আটক করা হয়েছে।  

আটকরা হলেন- নয়ন, রাসেল ও ফয়সাল।
  এদের বয়স ২৪ থেকে ২৬ বছরের মধ্যে।

গোপন সূত্রে জেএমবির বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সামরিক কমাণ্ডার ফারদিন ওরফে পিয়াসের আস্তানার বিষয়টি নিশ্চিত হয়ে শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) রাত ১২টার দিকে আমানবাজারের জয়নব কমিউনিটি সেন্টারের পেছনে অবস্থান নেয় নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার (উত্তর-দক্ষিণ) বাবুল আক্তারের নেতৃত্বে একটি টিম।   টিমের সদস্যরা শুরুতেই হাজী ইছহাক ম্যানশন নামের একটি দোতলা বাড়ি তিনদিক থেকে ঘিরে ফেলে।   এরপর বাড়ির নিচতলায় ফারদিনের ভাড়া নেয়া বাসায় অভিযান চালায়।  

সেখানে একটি এমকে-১১ স্নাইপার রাইফেল, ২৫০ রাউণ্ড গুলি, দুই কেজি জেল এক্সপ্লোসিভ, ১০টি ডেটোনেটর, বোমা তৈরির বিভিন্ন সরঞ্জাম, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ১৪টি পোশাক, নেমপ্লেট ও বেইজ র‌্যাংক এবং সাংগঠনিক বিভিন্ন নথিপত্র পাওয়া যায়।  

নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমরা এর আগে খোয়াজনগর থেকে পাঁচ জেএমবি সদস্যকে আটক করেছিলাম।    জিজ্ঞাসাবাদে তারা সামরিক কমাণ্ডারের আস্তানা সম্পর্কে কিছু তথ্য দিয়েছিল।   এরপর আমি অনুসন্ধানে নামি এবং আরও গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহ শুরু করি।   আস্তানার সঠিক স্থান নিশ্চিত হওয়ার পর রাত ১২টায় অভিযান শুরু করি।   ভোর চারটায় অভিযান শেষ হয়েছে।

বাবুল আক্তার জানান, তিনদিক থেকে বাড়ি ঘিরে ফেলার পর অনেক অনুরোধের পরও ভেতর থেকে কেউ গেট খুলে দেয়নি।   পরে দেয়াল টপকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকজন সদস্য কমাণ্ডো স্টাইলে ভেতরে ঢুকে যান।   তারা দ্রুত গেট খুলে দেয়ার পর নগর গোয়েন্দা পুলিশের অন্যান্য সদস্যরাও ভেতরে ঢুকে অবস্থান নেয়।   এরপর ফারদিনের বাসার দরজা খোলা নিয়ে শুরু হয় বিপত্তি।   বারবার দরজা ধাক্কানোর পরও ভেতর থেকে কোন ধরনের সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না।   এক পর্যায়ে দরজা ভেঙে তারা বাসার ভেতরে ঢোকেন।   সেখানে রাসেলকে পাওয়া যায়।  

‘নয়ন এবং ফয়সালকে আমরা শহর থেকে আটক করেছি।   রাসেলকে আস্তানায় পাওয়া গেছে।   নয়ন এবং ফয়সালের সঙ্গে কথা বলেই মূলত আস্তানার সঠিক সন্ধান আমরা পাই। ’ বলেন বাবুল আক্তার।

এদিকে অভিযানের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য এবং নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ান।   অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে হাটহাজারী থানা পুলিশও ঘটনাস্থলে যায়।

দেবদাস ভট্টাচার্য বাংলানিউজকে বলেন, জেএমবির সামরিক কমাণ্ডারের আস্তানা থেকে আমেরিকার তৈরি একটি স্বয়ংক্রিয় রাইফেল উদ্ধার করা হয়েছে।   বাংলাদেশে অতীতে কোনদিন এই ধরনের অস্ত্র উদ্ধার হয়নি।   দেখা যাচ্ছে জেএমবি বিস্ফোরকের পাশাপাশি ভারি অস্ত্রও মজুদ করছে।  

বাবুল আক্তার বাংলানিউজকে বলেন, আমাদের কাছে যে তথ্য ছিল তা হচ্ছে ফারদিনের আস্তানা থেকে মূলত আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছিল।   আর কিছুদিন সময় পেলে তারা বড় ধরনের নাশকতা ঘটাতে সক্ষম হত।   এ অভিযানের মধ্য দিয়ে জেএমবির চট্টগ্রামে বড় ধরনের সহিংসতার পরিকল্পনা ঠেকিয়ে দেয়া গেল।

নগর গোয়েন্দা ‍পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এস আই) সন্তোষ কুমার চাকমা বাংলানিউজকে বলেন, যে পরিমাণ বিস্ফোরক সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়েছে তা দিয়ে বিপুল পরিমাণ ককটেল-বোমা বানানো যেত।   এসব বিস্ফোরক দিয়ে বড় ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে পারত জঙ্গিরা।

আটকের পর ভোর ৫টার দিকে জেএমবি সদস্যদের ওই বাসা থেকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের কার্যালয়ে নেয়া হয়েছে।   তবে বাড়িটি ঘিরে এখনও অবস্থান করছে হাটহাজারী থানা পুলিশের টিম।

বাংলাদেশ সময়: ০৫০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫/আপডেট: ০৫৫১ ঘণ্টা
আরডিজি/ইউএম/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।