চট্টগ্রাম: তেঁতুল, আমড়া, জলপাই, বড়ই, চালতা, আমলকীর তৈরি টক-ঝাল-মিষ্টি আচারের পাশাপাশি সাজানো আছে চিকেন আচার, বিফ আচারের মতো আনকমন আচার। আলুবোখরা, আদা, রসুন, কতবেল, আনারস, তিতাকরলা, গাজর, কিসমিস, সাতকড়া, পেঁপে, লেবু, চেরিফল, বোম্বাই মরিচ ইত্যাদি হরেক উপকরণ দিয়ে তৈরি আচার তো আছেই।
আচারের মৌ মৌ গন্ধে ছুটে এসেছে শত শত মৌমাছি। বিক্রেতার ‘ফরমালিন স্যাকারিনমুক্ত’ হাঁকডাকের সাফাই সাক্ষী যেন মৌমাছির ওড়াওড়ি, নাচানাচি।
নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলায় আচারের স্টলগুলোতে এত ভিড় যে চোখ পড়বেই। বিশেষ করে বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত। নানা বয়সী মানুষ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আচার খাচ্ছেন। মেয়েরা তো বটে, অনেক ছেলেকেও দেখা গেল সবান্ধবে আচার খাচ্ছেন।
এবারের মেলায় আচারের স্টল আছে তিনটি। সবচেয়ে বড় স্টলটি চাঁদনীঘাটের সিরাজের। ত্রিমুখী স্টলটিতে বিক্রয়কর্মী আছেন আটজন। মৌমাছির ওড়াওড়ি দেখা গেল তরিকুল ইসলাম বাদলের কাশ্মিরী আচারের স্টলে। রুহানি আচারের স্টলে মিলবে চিকেনের (মুরগি) আচার।
সিরাজের আচারের মধ্যে সবচেয়ে দামি বোম্বাই মরিচের আচার, কেজি ১ হাজার টাকা। ৬০০ টাকার মধ্যে আছে লাল চেরিফল, আদা, রসুন, আলুবোখরা, কাঁচামরিচের তৈরি আচার। ৪০০ টাকা বিক্রি হচ্ছে আম, আমড়া, আমলকী, সাতকড়া ও পঞ্চরসের আচার। ৩০০ টাকায় মিলবে জলপাই, চালতা, বড়ই, তেঁতুল, কাঁচা আমড়া, কামরাঙার তৈরি আচার। একই উপকরণ দিয়ে টক, ঝাল, মিষ্টি, পাকা-কাঁচা, শুকনো ইত্যাদি একাধিক পদ তৈরি করা হয়েছে।
গোলাম মোস্তফা ১১ বছর ধরে সিরাজের আচারে বিক্রি করছেন। বাংলানিউজকে বললেন, চট্টগ্রামের মেলায় আচারের এত বেশি চাহিদা যে দু-এক দিন পরপর ট্রাকে করে আচার আনতে হচ্ছে। হালিশহরের আবাহনী মাঠের মেলায়ও আমাদের স্টল আছে। কারখানায় ২৪ ঘণ্টা আচার তৈরি করছেন ২ জন পুরুষ, আটজন নারী আচারের বিভিন্ন উপকরণ কাটা, বাছা, ধোয়া ইত্যাদি কাজ করছেন।
রোববার দুপুরে স্টলের সামনে দাঁড়িয়ে আচার খাচ্ছিলেন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা আলমগীর হোসেন। অনুভূতি জানতে চাইলে বলেন, বাঙালির রসনাবিলাসের কমন অনুষঙ্গ আচার, ভর্তা, ভাজা-পোড়া এসব। একসময় আমাদের মা-দাদিরা রকমারি পদের আচার, বড়া বানাতেন। এখন সেই দিনগুলো যেন সোনালি অতীত। অনেক শিশু-কিশোর তো আচার তৈরির ফলগুলোই ঠিকমতো চেনে না। অবশ্য, বোতলজাত অনেক আচার আছে। কিন্তু আসল আচারের স্বাদই আলাদা।
একই স্টলের বিক্রয়কর্মী শরিয়তুল্লা জানালেন, একটা সময় ছিল মেয়েরাই আচার পছন্দ করতো। কিন্তু মেলায় এসে দেখছি ছেলেরাও প্রচুর আচার খাচ্ছেন। আমাদের তৈরি আচারে কৃত্রিম রং, স্যাকারিন (ঘনচিনি), প্রিজারভেটিভ নেই। বংশপরম্পরায় আচার তৈরির যে কৌশল আমরা রপ্ত করেছি তাতে ছয় মাস পর্যন্ত এ আচার ভালো থাকে। তাই প্রচুর বিক্রি হচ্ছে।
রুহানি আচারের স্টলে ১ হাজার টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে আলু বোখারা ও চিকেন আচার। ৬০০ টাকা কেজি আমলকী ও রসুনের আচার। হাফেজ মো. আল আমিন ও মো. আলাউদ্দিন চিশতির মালিকানাধীন এ কারখানাটি রিয়াজউদ্দিন বাজারে বলে জানান একজন বিক্রয়কর্মী।
কাশ্মিরী আচারের স্টলে রয়েছে শতাধিক পদের আচার। বিফ আচার ও চিকেন আচার শেষ। বিক্রয়কর্মী মহসিন জানালেন, আমাদের আচারে ফরমালিন নেই। তাই মোমাছির আনাগোনা এত বেশি যে নেট দিয়ে আচারের শোকেস ঢেকে রেখেও ঠিকমতো সামলাতে পারছি না। এখানে সবচেয়ে দামি আচারটি আলু বোখরার, কেজি ৮০০ টাকা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৫৪ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৫
এআর/টিসি