ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

ফিরে দেখা ২০১৫

সক্ষমতায় আরও একধাপ এগিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর

মো. মহিউদ্দিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭১৬ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
সক্ষমতায় আরও একধাপ এগিয়ে চট্টগ্রাম বন্দর ছবি : বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

চট্টগ্রাম: নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল (এনসিটি) নির্মাণ শুরু হয় ২০০৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে কাজ শেষ হয়।

এতে চট্টগ্রাম বন্দরের খরচ হয় ৪৬৮ কোটি ৯০ লাখ টাকা। পরে দু’টি জেটির পেছনের কনটেইনার রাখার চত্বর তৈরিতে ব্যয় হয় প্রায় ৯৮ লাখ টাকা।


বেসরকারি অপারেটর যন্ত্রপাতি কিনে টার্মিনাল পরিচালনা করবে এবং নির্দিষ্ট সময় পর বন্দরকে হস্তান্তর করবে (এসওটি) এই নীতিতে টার্মিনালটি চালুর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল ২০০৭ সালে। সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে সব কাজ গুছিয়েও আনা হয়।
২০০৯ সালে মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিশ্বখ্যাত চারটি প্রতিষ্ঠানকে (হাচিসন পোর্ট ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড, ডিপি ওয়ার্ল্ড, এপিএম টার্মিনালস এবং ইন্টারন্যাশনাল কনটেইনার সার্ভিসেস) দরপত্রে অংশ নেওয়ার যোগ্য নির্বাচিত করা হয়।

২০০৯ সালের নভেম্বরে দরপত্র জমা দেওয়ার সময়ও নির্ধারণ করে বন্দর। তবে তৎকালীন সংসদীয় কমিটি এই প্রক্রিয়ায় বাধা দেয়। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারিতে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের এক সভায় দেশিয় প্রতিষ্ঠানকে সুযোগ দিতে এই দরপত্র বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বন্দর দরপত্র বাতিল করে। এরপর দেশিয় সাইফ পাওয়ারটেক ও বিদেশি পিএসএ ইউরোপ নামে আরও দুটি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রে অংশ নেওয়ার যোগ্য হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়।

মামলা পাল্টা মামলায় দীর্ঘদিন ঝুলে থাকার পর দুইভাগে চারটি জেটি পরিচালনায় অপারেটর নিয়োগের দরপত্র আহ্বান করা হয়।   একটি জেটি বন্দরের জন্য সংরক্ষিত রাখা হয়।

চলতি বছরের ২৫ জুন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের মধ্যে নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনালের ৪ ও ৫ নম্বর জেটি পরিচালন সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর হয়। চুক্তিমূল্য ছিল ৪৯ কোটি ৬৪ লাখ ২০ হাজার টাকা। এই দরপত্রে সাইফ পাওয়ারটেকের সঙ্গে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিনের প্রতিষ্ঠান এম এইচ চৌধুরী লিমিটেডের ৩০ শতাংশ এবং নোয়াখালীর সদর আসনের সরকারদলীয় সাংসদ একরামুল করিম চৌধুরীর প্রতিষ্ঠান এ অ্যান্ড জে ট্রেডার্সের ৩০ শতাংশ রয়েছে।

চলতি বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর টার্মিনালটির ২ ও ৩ নম্বর জেটি পরিচালনার জন্য বন্দরের সঙ্গে সাইফ পাওয়ারটেকের চুক্তি হয়। চুক্তিমূল্য ছিল ৪৯ কোটি ৮৭ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।

৯৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের এনসিটি টার্মিনালে একসঙ্গে কনটেইনারবাহী পাঁচটি জাহাজ বার্থ নিতে পারবে। চারটি জেটিতে বছরে ১২ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং করা সম্ভব।

মামলা পাল্টা মামলায় প্রায় আট বছর ঝুলে থাকা চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় এ টার্মিনালটি গত ১৭ অক্টোবর বেলুন উড়িয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান। প্রতিষ্ঠার আট বছর পর একসঙ্গে চালু হয় এ টার্মিনালের চারটি জেটি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মন্ত্রীর সঙ্গে ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, স্থানীয় সংসদ সদস্য এমএ লতিফ, চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ, টার্মিনাল পরিচালনার দায়িত্ব পাওয়া সাইফ পাওয়ারটেক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরফদার রুহুল আমীন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌ-মন্ত্রী বলেন, ‘দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরের প্রবৃদ্ধি বাড়লে দেশের অর্থনীতি গতিশীল হবে। এজন্য চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া প্রয়োজন। ’

‘দীর্ঘদিন পরে হলেও এনসিটি চালু হয়েছে। কোন প্রকার বাধা, সমালোচনা আমাদের এই অগ্রযাত্রাকে আটকাতে পারেনি। ’ বন্দরের সক্ষমতা বাড়াতে অনেক কাজ করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘বন্দরকে সম্প্রসারিত করতে বে-টার্মিনাল, লালদিয়ার চরে বাল্ক টার্মিনাল নির্মাণ করা হবে। ’ 

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ৮ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দরের সবচেয়ে বড় টার্মিনালটির নির্মাণ শেষ হলেও কাজ শুরু করা যায়নি। এতে দেশের অর্থনীতির ক্ষতি হয়েছে। বন্দর উপকৃত হলে দেশের অর্থনীতি গতি পাবে।  

ব্যবসায়ীরা বলছেন, একটি স্বার্থান্বেষী মহলের বিরোধীতার কারণে ৮ বছর ধরে এনসিটি চালু করা যায়নি। অবশেষে সত্যের বিজয় হয়েছে। বন্দরকে এগিয়ে নেওয়া মানে দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া। এনসিটিতে পণ্য ওঠানো-নামানোর কাজ শুরুর মাধ্যমে চট্টগ্রাম বন্দর আরও একধাপ এগিয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম বন্দরের প্রবৃদ্ধি ক্রমান্বয়ে বাড়ছে জানিয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত বছর ১৮ দশমিক ৫ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। প্রতিবছর ১২ থেকে ১৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। এনসিটিতে পুরোপুরি কাজ শুরু হলে বছরে ১২ লাখ টিইইউএস কনটেইনার হ্যান্ডেলিং সম্ভব হবে জানিয়ে তিনি বলেন, এজন্য সব ধরনের যন্ত্রপাতি ক্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এমইউ/আইএসএ/টিসি 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।