চট্টগ্রাম: একটি প্রতিষ্ঠান পাল্টে দিতে পারে একটি জনপদ। একটি নগরীকে নিয়ে যেতে পারে অন্য উচ্চতায়।
১ মার্চ ২০১৫। দিনটি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নগরী চট্টগ্রামের জন্য স্মরণীয় দিন। ওই দিন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন র্যাডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ’র। মধ্য এপ্রিলে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। অতি অল্প সময়ের মধ্যে দেশ-বিদেশের পর্যটক, অতিথি ও শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীদের ঠিকানা হয়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটি। স্বপ্নিল ভুবনে স্বর্গসুখের হাতছানিতে মেতে ওঠে বাণিজ্যিক রাজধানী।
৮০০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ৫ একর জায়গার ওপর সেনা হোটেল ডেভেলপমেন্টস লিমিটেড তৈরি করেছে হোটেলটি। বর্তমানে এটি ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে রয়েছে বিশ্বখ্যাত হোটেল ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠান কার্লসন।
চট্টগ্রাম কেন প্রাচ্যের রানি বোঝা যায় র্যাডিসনের টপ ফ্লোরে উঠলে। যেখানে পাহাড়, অরণ্য, সাগর, নদী আর সমতলের নৈসর্গিক যে সৌন্দর্যের পসরা তার তুলনা কই। আন্তর্জাতিক চেন হোটেল হিসেবে র্যাডিসন ব্লু বে ভিউ চিটাগাং সাজানো হয়েছে সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থেকে।
যুগের পর যুগ যাবে কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি কখনো পুরোনো হবে না, এমনভাবেই নকশা করা হয়েছে। থোকা থোকা সবুজ। সুপরিসর লবি। দৃষ্টিনন্দন ফোয়ারা, ঝর্নাধারা। আলোর বান। সব মিলে আধুনিক ও নান্দনিকতার দিক থেকে এটিই দেশের সেরা হোটেল। এমন অভিমত গ্রাহকদের।
দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরি পোশাক। তৈরি পোশাকশিল্প মালিকদের শীর্ষ সংগঠন বিজিএমইএর সাবেক প্রথম সহসভাপতি নাসির উদ্দিন চৌধুরী বৃহস্পতিবার (৩১ ডিসেম্বর) রাত সাড়ে নয়টায় বাংলানিউজকে বলেন, একটা সময় ছিল নিরাপত্তা ও অবকাঠামোগত সংকটের কারণে চট্টগ্রামে বিদেশি বায়াররা আসতেন না। এমনকি বড় কোনো প্রদর্শনী (এক্সপো) করতে চাইলে বিদেশি অতিথিদের আনা যেত না। কারণ একটি পাঁচতারকা হোটেল ছিল না।
এক্ষেত্রে র্যাডিসন ব্লু চিটাগাং বে ভিউ আমাদের জন্য আশীর্বাদ। প্রতিষ্ঠানটি শুরুর বছরেই আমরা বিজিএমইএর তিন দিনব্যাপী জমকালো অনুষ্ঠান করতে পেরেছি।
তিনি বলেন, শুধু র্যাডিসন নয়, চট্টগ্রামে নিকেতনসহ অনেক পাঁচতারা হোটেল আসছে। পাইপলাইনে আছে অনেক। এক্ষেত্রে র্যাডিসন পাইওনিয়ার, চট্টগ্রামের ল্যান্ডমার্ক।
র্যাডিসনের নকশাটি এমনভাবে করা হয়েছে যাতে ২৪১টি কক্ষের প্রতিটির জানালা, ব্যালকনি থেকে নৈসর্গিক চট্টগ্রামকে উপভোগ করা যাবে। ২২ তলা মূল ভবনের দুটি বেজমেন্ট বাদ দিয়ে লেবেল গোনা শুরু। লেবেল ৮ থেকে ১৯ এর মধ্যে সব কক্ষ। লেবেল ১৬-১৯ এর কক্ষগুলো কার্লসন’র কার্ডধারীদের জন্য। যেখানে আছে সুপরিসর সব বিজনেস ক্লাসের কক্ষ। লেবেল ১৮ তে রয়েছে সবচেয়ে দামি প্রেসিডেন্সিয়াল স্যুট, রুম নম্বর ১৮১৭। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দামি স্যুট রয়েলও এ লেবেলে, নম্বর ১৮০১। এ দুটি স্যুটের সঙ্গে রয়েছে পার্সোনাল সুইমিং পুল। অবশ্য বড় গোলাকার সুইমিং পুলটির যে সৌন্দর্য ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
পাঁচতারা হোটেলের ঐতিহ্যাবাহী সব খাবারের স্বাদের পাশাপাশি এখানকার অতিথিদের জন্য রয়েছে বাঙালি খাবারের ব্যবস্থাও। বর্ণিল সাজানো হয়েছে দেশি স্বাদের খাবারে। রয়েছে মেজবান নামের বিশাল একটি হল।
যেখানে একসঙ্গে খেতে পারবেন ৯০০ অতিথি। আছে মোহনা বলরুম, যেখানে অনুষ্ঠান উপভোগ করতে পারেন ১ হাজার ৪০০ অতিথি। এর বাইরে ১৪ জনের মিটিং রুমের নাম রাখা হয়েছে কাপ্তাই, কর্ণফুলী, সেন্টমার্টিন, পতেঙ্গা ও সোনাদিয়া। ছয়জনের মিটিং রুমের নাম হচ্ছে হালদা, নাফ, সাঙ্গু ও সন্দ্বীপ।
র্যাডিসনের জনসংযোগ বিভাগের সহকারী ব্যবস্থাপক তাকরিন খান বাংলানিউজকে বলেন, শুধু ব্যবসা নয়, আমরা চট্টগ্রামকে এগিয়ে নিতে চাই। ঐতিহ্যবাহী এ জনপদের কৃষ্টি, কালচার, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি তুলে ধরতে চাই। তারই অংশ হিসেবে হলের নামকরণ করা হয়েছে ‘মেজবান’। মিটিং রুমের নামকরণ করা হয়েছে এখানকার নদ-নদী-হ্রদ-দ্বীপের নামে। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যে পরিণত হওয়া একটি আস্ত সাম্পান রাখা হয়েছে লবির পাশে।
বাংলাদেশ সময়: ২২৪২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৫
এআর/টিসি