কিন্তু বছরের শেষের দিকে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সম্পাদক দিয়াজ ইরফান চৌধুরীর অস্বাভাবিক মৃত্যু গৌরবের বছরকে পরিণত করলো শোকে।
দিয়াজের পরিবার ও সহকর্মীরা অভিযোগ করে আসছেন, টেন্ডার নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে প্রতিপক্ষ গ্রুপ দিয়াজকে হত্যা করে মরদেহ বাসার সিলিং ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে রেখে পালিয়ে যায়।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, দিয়াজকে যদি ‘হত্যা’ করা হয়ে থাকে তাহলে এর পেছনে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯৫ কোটি টাকার টেন্ডার কোন্দল। দিয়াজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধারের পর থেকে এ বিষয়টিই ঘুরে-ফিরে আসছে বারবার।
যদিও দিয়াজের মৃত্যুর ৩৭ দিনের মাথায় সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু টেন্ডার নিয়ে কোনো সমস্যা হয়নি বলে দাবি করেন। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ কোনো টেন্ডারের সঙ্গে জড়িত না বলেও দাবি করেন তিনি।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু স্বীকার না করলেও দিয়াজ গ্রুপের একাধিক নেতাকর্মী ও পরিবারের সদস্যদের দাবি, বঙ্গবন্ধু হলের সম্প্রসারণ ও নতুন কলা অনুষদ ভবনের সম্প্রসারণের ৯৫ কোটি টাকার টেন্ডার নিয়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের মধ্যে মাস কয়েক ধরে দ্বন্দ্ব ছিল।
তার প্রমাণও পাওয়া যায় ওই সময়ের ঘটনায়।
দুটি ভবন নির্মাণে প্রায় ৯৫ কোটি টাকার টেন্ডারকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দু’গ্রুপ ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে অন্তত ছয়বার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ জড়ায়। এর মধ্যে অন্তত তিনবার দিয়াজ ইরফান গ্রুপ ও সভাপতি আলমগীর টিপু গ্রুপ সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
টেন্ডারের জেরে ২৯ অক্টোবর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ আবদুর রব হলের সামনে কুপিয়ে আহত করা হয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তাইফুল হক তপুকে। অভিযোগ ছিল, বাংলার মুখ নিয়ন্ত্রিত দিয়াজের অনুসারীরা তাকে কুপিয়ে আহত করে।
এর জেরে ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেটে দিয়াজের বাসাসহ ছাত্রলীগের চার নেতার বাসায় তাণ্ডব ও লুটপাট চালানো হয়। অভিযোগ ছিল, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপুর অনুসারীরা ওই ঘটনা জড়িত। হামলার এসব ঘটনার সঙ্গে দরপত্রের ভাগ-বাটোয়ারার বিষয়টিও জড়িত ছিল।
এসব কারণে ২৬ ও ২৭ সেপ্টেম্বর ক্যাম্পাসে অবরোধের ডাক দেয় ছাত্রলীগের একটি পক্ষ। এর জের ধরে ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৪ অক্টোবর পর্যন্ত দু’পক্ষে চার দফা সংঘর্ষ হয়।
পরে গত ২০ নভেম্বর রাতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের দুই নম্বর গেট এলাকার নিজ বাসা থেকে দিয়াজের ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এ ঘটনায় ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রামের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট শিবলু কুমার দে'র আদালতে দিয়াজের মা জাহেদা আমিন চৌধুরী বাদি হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু ও বিশ্ববিদ্যালয় সহকারী প্রক্টর আনোয়ার চৌধুরীসহ ১০ জনের বিরুদ্ধে আদালত সরাসরি মামলা গ্রহণ করে সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেন।
তবে মঙ্গলবার (২৭ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলন করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আলমগীর টিপু দিয়াজের মৃত্যুর পেছনে তার অনুসারী ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মো. মামুন, নাজিম, সৌমেন পালিত ও পাঠাগার সম্পাদক আবু বকর তোহাকে দায়ী করেন। পাশাপাশি প্রেমিকার কারণেও দিয়াজ আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন টিপু।
দিয়াজ হত্যায় জড়িত সন্দেহ থাকলে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে নিজের কললিস্ট যাচাইয়ের দাবি করেন আলমগীর টিপু। ঘটনার সময় তারা কে, কোথায় ছিলেন, কার সঙ্গে কী কথা বলেছেন তা তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে তদন্তের দাবি জানান।
তবে অভিযোগ পাল্টা-অভিযোগ সব মিটে যাবে যখন দিয়াজের মৃত্যুর রহস্য উদঘাটন হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা অর্থ্যাৎ দিয়াজের মৃত্যুর মামলার দায়িত্ব পাওয়া সিআইডি সুষ্ঠ তদন্ত করে মূল রহস্য বের করে আনবেন সেটাই এখন পরিবার ও দিয়াজের সহকর্মীদের একমাত্র চাওয়া।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৭ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
জেইউ/আইএসএ/টিসি