১০ আগস্ট থিয়েটার ইনস্টিটিউট চট্টগ্রাম (টিআইসি) মিলনায়তনে ‘স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ শহর’ শীর্ষক নগর সংলাপ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মেয়রের এ মন্তব্য প্রথম প্রকাশ করেছিল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। এরপর এটি টক অব দ্যা কান্ট্রিতে পরিণত হয়।
ওই দিন সাম্প্রতিক কিছু ঘটনা তুলে ধরে মেয়র বলেছিলেন, যুগ্ম সচিব পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা এসেছিলেন।
একনেকে পাস হওয়ার পরও বরাদ্দ ছাড় করাতে নানা আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হচ্ছে উল্লেখ করে মেয়র বলেন, বরাদ্দের ৫ শতাংশ দিয়ে দিলে নাকি যত বরাদ্দ চাইবো পাবো। আমি কোথা থেকে দেবো, কোন খাতে দেখাবো জানতে চাইলে বলা হলো, ঠিকাদারের কাছ থেকে ম্যানেজ করতে। এ কথার কোনো যুক্তি আছে? আমি চোর হয়ে আপনার পকেট ভারী করবো? গত অর্থবছরে সাধারণভাবে আমরা পেলাম ৮০ কোটি টাকা। ৫ শতাংশ দিলে ৩০০-৩৫০ কোটি টাকা পেতাম! এই হলো বাস্তবতা।
ওই সংলাপে বিশেষ অতিথি ছিলেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের চট্টগ্রাম চ্যাপ্টার সভাপতি এম আলী আশরাফ, ওয়ার্ল্ডভিশন বাংলাদেশের রিজিওনাল ফিল্ড ডিরেক্টর অঞ্জলি জাসিন্তা কস্তা, ব্র্র্যাকের পরিচালক কেএএম মোর্শেদ। চসিকের সচিব মোহাম্মদ আবুল হোসেনের সভাপতিত্বে স্বাগত বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম নগর সংলাপ আয়োজক কমিটির আহ্বায়ক শ্যামল ফ্রান্সিস রোজারিও।
সংলাপে ‘শিশু সুরক্ষা ও উন্নয়ন’, ‘পানি, পয়োনিষ্কাশন ও পরিচ্ছন্নতা’ ও ‘দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন স্থপতি জেরিনা হোসেন, চুয়েটের অধ্যাপক ড. স্বপন কুমার পালিত ও সৌরভ দাশ।
পরদিন ১১ আগস্ট মেয়রের কাছে ব্যাখ্যা চায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব জ্যোতির্ময় দত্ত স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়, ‘চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রকল্প অনুমোদন এবং বরাদ্দ পেতে মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘুষ চান; মন্ত্রণালয়ের জনৈক যুগ্মসচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তা আপনার কাছে একটি নতুন পাজেরো জিপ চেয়েছেন; ৫ শতাংশ ঘুষ দিলে ৮০ কোটি টাকার পরিবর্তে ৩শ কোটি টাকা বরাদ্দ পেতেন ইত্যাদি তথ্য উল্লেখ করে গত ১০ আগস্ট চট্টগ্রাম থিয়েটার ইনস্টিটউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মর্মে ১১ আগস্ট তারিখে বিভিন্ন পত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। আপনার আনীত এ অভিযোগসমূহ গুরুতর। এতে মন্ত্রণালয় তথা সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে, যার প্রমাণ প্রদান আবশ্যক। ’
‘এর পরিপ্রেক্ষিতে কোন কর্মকর্তা কোথায় কখন আপনার কাছে ঘুষ দাবি করেছেন, কে কখন কোথায় পাজেরো জিপ চেয়েছেন, কোন প্রকল্পের অর্থ ছাড়ে কোন কর্মকর্তা জটিলতার সৃষ্টি করেছেন, সুনির্দিষ্টভাবে উল্লেখপূর্বক উপযুক্ত প্রমাণ আগামী সাতদিনের মধ্যে মন্ত্রণালয়ে দাখিল করার জন্য অনুরোধ করা হলো। ’
ওইদিন সকালে সচিবালয়ে ঈদে কোরবানির পশু জবাই করা বর্জ্য অপসারণ সংক্রান্ত বৈঠকে আ জ ম নাছির উপস্থিত থাকাকালে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।
১২ আগস্ট নগরীর মুসলিম ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে একটি অনুষ্ঠান শেষে ফেরার পথে সাংবাদিকরা মুখোমুখি হলে বলেন, ‘প্রমাণ তো অবশ্যই আছে। আমি দায়িত্ব নিয়েই কথা বলেছি। যে বলছে সে, যে চাইছে সে, আর কী! প্রমাণ বলতে আবার কী?’
আশার কথা, সম্প্রতি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) ৭১৬ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে অনুমোদন পেয়েছে।
মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা অনুষ্ঠানে মেয়র জানিয়েছেন, ২১০ কোটি টাকার প্রকল্প অনুমোদনের অপেক্ষায় আছে। এ ছাড়া ৭০০ কোটি টাকার বেশি প্রকল্প তিন মাসের মধ্যে অনুমোদন পাবে আশাকরি।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩১, ২০১৬
এআর/আইএসএ/টিসি