এরপর একে একে ভুল চিকিৎসা এবং চিকিৎসকদের অবহেলায় অনেক রোগী মারা গেছেন। পঙ্গুত্ববরণ ও অঙ্গহানির সংখ্যাও কম নয়।
অভিযোগ তদন্তে কমিটি গঠন করা হলেও কাগজে-কলমেই সীমাবদ্ধ থাকে কমিটির কার্যক্রম।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, ব্যবস্থা গ্রহণে সরকারি সংস্থাগুলোর নিস্ক্রিয়তায় এ ধরনের ঘটনা বার বার ঘটছে।
গত বছরের ২২ মে পিপলস হাসপাতালে চান্দগাঁও থানার বাসিন্দা আমেনা বেগমের মৃত নবজাতককে ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর স্বজনদের দাবির প্রেক্ষিতে নবজাতকের মরদেহ ফেরত দিতে বাধ্য হয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
২৩ মে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দারোয়ানের ধাক্কায় সীতাকুণ্ডের বাসিন্দা আবু তাহের বেলাল নামে এক রোগীর মৃত্যু হয়। একই মাসে পাঁচলাইশ থানার ফরটিস হার্ট ইনস্টিটিউটেও ভুল চিকিৎসায় এক রোগীর মৃত্যুর অভিযোগ ওঠে।
গত ১১ জুন বিদেশ যেতে ইচ্ছুক কোরবান আলী নামে এক যুবককে এইডস রোগী উল্লেখ করে রিপোর্ট দেয় মেডিকেয়ার মেডিক্যাল চেকআপ সেন্টার নামে একটি প্রতিষ্ঠান। পরে চমেক হাসপাতালে পরীক্ষা করে তার শরীরে এইডসের কোনো নমুনা মেলেনি।
একই মাসের ১৪ জুন চট্টগ্রাম শিশু হাসপাতালে চিকিৎসায় অবহেলায় হালিশহরের বাসিন্দা মিজানুর রহমানের তিনদিনের নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ উঠে। ১৪ জুন হাটহাজারীর আলিফ হাসপাতালে চিকিৎসকের অবহেলায় এক প্রসূতি মৃত নবজাতক জন্ম দেয়। পরে তার স্বামী চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব মেরিন সায়েন্সেস অ্যান্ড ফিশারিজের সহকারী অধ্যাপক শহিদুল আলম শাহীন অভিযুক্ত চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযো্গ দায়ের করেন।
২৯ জুন ম্যাক্স হাসপাতালে ভুল চিকিৎসায় আড়াই বছরের রাফিদা খান রাইফার মৃত্যু হয়। গলা ব্যথা ও জ্বর নিয়ে রাইফাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছিল তার পরিবার। রাইফার মৃত্যুর সঙ্গে জড়িত চিকিৎসক ও ম্যাক্স হাসপাতাল বন্ধের দাবি উঠে। পরবর্তীতে রাইফার বাবা রুবেল খান অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চকবাজার থানায় মামলা করেন। এছাড়া ৩০ জুন ম্যাক্স হাসপাতালে পুলিশের স্পেশাল রায়ট ফোর্সের (এসআরএফ) নায়েক জাহাঙ্গীর ভুল অস্ত্রোপচারের শিকার হন।
৪ সেপ্টেম্বর শেভরন ক্লিনিক্যাল ল্যাবরেটরিতে নাজির আহমদ নামে এক বৃদ্ধের মেরুদণ্ডে ব্রেন ক্যান্সার ধরা পড়ে! ১০ সেপ্টেম্বর পিপলস হাসপাতাল থেকে আবু তালেব লিটন নামে এক রোগীকে গোপনে সার্জিস্কোপ হাসপাতালে স্থানান্তরের ঘটনা ঘটে। তিনিও ভুল চিকিৎসার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ উঠে। সর্বশেষ ১৫ নভেম্বর নগরের কেয়ার ইনভেস্টিগেশনের ফজলুর রহমান মুরাদ নামে এক যক্ষ্মা রোগীর শরীরে ক্যান্সার শনাক্ত এবং পরবর্তীতে ভুল চিকিৎসায় ওই রোগীর মৃত্যু হয়।
চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. আজিজুর রহমান সিদ্দিকী বাংলানিউজকে বলেন, 'ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যুর ঘটনার অভিযোগ অনেক আসে। এসব তদন্তের জন্য কমিটি গঠন করা হয়। ’
‘আমরা তদন্ত করে রিপোর্ট দেই। ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা আমাদের নেই। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি) ব্যবস্থা নিতে পারে’ যোগ করেন সিভিল সার্জন।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সাধারণ সম্পাদক ডা. ফয়সল ইকবাল বাংলানিউজকে বলেন, 'এ ধরনের অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিএমএ সদস্যপদ স্থগিত করা হয়। '
‘চিকিৎসা পেশার লাইসেন্স দেয় বিএমডিসি। মূলত তারাই যে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে। আমরা তদন্ত করে তাদের কাছে রিপোর্ট জমা দেই। অভিযোগ প্রমাণিত হলে বিএমডিসি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়’ বলেন ডা. ফয়সল ইকবাল।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২, ২০১৯
এসইউ/এসি/টিসি