তিনি বলেন, ইতিমধ্যে বিস্তার শিল্পোৎসব আলাদা বৈশিষ্ট্য, সুনাম, পরিচিতি তৈরি করেছে। সারা বছর মানুষ এ উৎসবের জন্য অপেক্ষা করে থাকে।
এ বছর পশ্চিমবঙ্গের শান্তিনিকেতনের শিল্প শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কলা ভবন এবং জার্মান ভিত্তিক বাউ হাউস মুভমেন্টের ১০০ বছর পূর্তি। দুই জায়গার তিনজন করে ছয়জন শিল্পীর চিত্রকর্ম দিয়ে মঞ্চ সাজিয়েছি।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের অ্যাপ্লাইড আর্টস বিভাগকে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। এবার ফলিত শিল্পের ওপর প্রদর্শনী হচ্ছে। আমাদের মূল থিম হচ্ছে ফেস্টিভ্যাল। যেখানে বিশ্বের বড় বড় ফেস্টিভ্যালগুলোর সঙ্গে দর্শকদের পরিচিত করার চেষ্টা করেছি। আমাদের ধারণা ও দৃঢ় বিশ্বাস বিস্তার শিল্পোৎসবও এ ধরনের বড় ফেস্টিভ্যালের মর্যাদা অর্জন করবে। এর মধ্য দিয়ে চট্টগ্রামকে বিশ্ব চিনতে পারবে। এ লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি।
চট্টগ্রামে সাধারণত লোকনৃত্য বা ধ্রুপদী নৃত্য হয়ে থাকে। আধুনিক নৃত্যচর্চা নেই। বিশ্বে কিন্তু ডান্স থিয়েটারের মাধ্যমে গল্প বলা হয়। প্রথমবারের মতো সমকালীন নৃত্য নকশা, ড্যান্স থিয়েটারের মাধ্যমে সামাজিক বক্তব্য গল্প বলার উদ্যোগ নিয়েছি। সহযোগী হিসেবে এসেছে গ্যাটে ইনস্টিটিউট। তারা তিনটি নৃত্য নকশার প্রযোজনা নিয়ে এসেছে। তারা একজন কোরিওগ্রাফার পাঠিয়েছেন চট্টগ্রামের নৃত্য শিল্পীদের প্রশিক্ষণ দিয়ে একটি প্রযোজনা করার জন্য। বিস্তার নিজস্ব কনটেমপরারি ডান্সের একটি প্রযোজনা করেছি। আমি মনে করে, চট্টগ্রামের নৃত্যশিল্পীরা নতুন কিছু পাবে, নৃত্যভাষার সন্ধান পাবে।
খুবই গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে-আন্ডার ওয়াটার ফটোগ্রাফির প্রদর্শনী। সমুদ্রের নিচের দৃশ্যের আলোকচিত্র। বিশ্বের সেরা ১০ জন আলোকচিত্রীর ছবি কানাডা থেকে পাঠানো হয়েছে। সেটি আমরা প্রদর্শন করছি।
চট্টগ্রামে নারীদের মূকাভিনয়ের প্রথম দল ‘মূকন্যা’। তাদের প্রথম পরিবেশনা ‘অনিবার্য’ বিস্তার শিল্পোৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। সব মিলে মনে করি সত্যিকারের উৎসব করছে বিস্তার।
বিস্তার প্রতিষ্ঠার পাঁচ বছরে অর্জন সম্পর্কে আলম খোরশেদ বলেন, আমাদের নিজেদের অর্জন একেবারে কম নয়। আমরা সারা বছর ধরে শিল্পকলার সমস্ত শাখায় নানা ধরনের সৃজনশীল, অভিনব ও নিরীক্ষামূলক কার্যক্রম চালিয়েছি। এতে ব্যাপক সাড়াও পেয়েছি। আমাদের প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে নানা রকম স্বীকৃতি পেয়েছে দেশের বাইরে থেকে।
হংকং ভিত্তিক একটি প্রতিষ্ঠান আছে আসেফ, এশিয়া ইউরোপ ফাউন্ডেশন। তারা এশিয়ার সেরা সাতটি সংগঠনের মধ্যে আমাদের নির্বাচন করেছে। আমাদের কেস স্টাডি তারা পড়ায়।
গত বছর বিস্তারকে নিয়ে বড় একটি স্টোরি করেছে অস্ট্রেলিয়া ভিত্তিক একটি আর্ট ম্যাগাজিন।
এ বছর জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমাদের আমন্ত্রণ জানিয়েছিল থিয়েটার ফেস্টিভ্যালে। বিশ্বের ২০ জন সেরা নাট্য ব্যক্তিত্বকে ডেকেছিল। আমাকেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। এগুলো আমাদের কাজেরই স্বীকৃতি। আমাদের প্রাপ্তি একেবারে কম নয়।
কমপ্লেক্স করার পরিকল্পনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা ভেবেছিলাম এ পাঁচ বছরে নিজস্ব ঠিকানা হবে বিস্তারের। স্থায়ী কিছু পাবো আমরা। হয় সরকারের মাধ্যমে নয়তো বেসরকারি ভাবে। বিস্তারকে রিয়েল অর্থে কমপ্লেক্স করা আমাদের লক্ষ্য। যেখানে শিল্পীদের থাকার ব্যবস্থা, কাজ করার ব্যবস্থা, গ্যালারি, লাইব্রেরি, ক্যাফেটেরিয়াসহ শিল্পপল্লির মতো গড়ে তোলা। সেই স্বপ্ন আমরা ছাড়িনি। আশা করি, এ শহরের বিত্তশালী মানুষ, সরকার এগিয়ে এলে অদূর ভবিষ্যতে এটি করা সম্ভব হবে। এটি আমাদের করতেই হবে। স্থায়ী ভিত্তি না পেলে কোনো এক সময় এত বছরের অর্জন অন্য হাতে পড়লে ধারাবাহিকতা থাকবে না। ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য এটি দরকার।
>> সৃজনশীলতা মানুষকে আলোড়িত আন্দোলিত করে
বাংলাদেশ সময়: ২১১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৯
এআর/টিসি