গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে জেতাতে ‘গুন্ডাগিরির’ মাধ্যমে নিজে কেন্দ্র দখলের যে দাবি ওই বক্তব্যে তিনি করেছেন তা নিয়ে চরম অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, দলের সংসদ সদস্য হয়ে সিটি নির্বাচনে ‘কেন্দ্র দখল করেছেন’ দাবি করে যে বেফাঁস বক্তব্য সংসদ সদস্য নদভী দিয়েছেন তা দলীয় নীতি ও আদর্শের পরিপন্থি।
জানতে চাইলে নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন বাংলানিউজকে জানান, গত সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন। বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার নির্দেশে নির্বাচনে তাকে জয়ী করতে দলের নেতা-কর্মীরা কাজ করেছেন।
তিনি জানান, মানুষ বঙ্গবন্ধু কন্যাকে ভালোবেসে, চট্টগ্রামের উন্নয়নে তার মনোনীত প্রার্থীর উপর আস্থা রেখে স্বতস্ফুর্তভাবে ভোট দিয়েছেন।
‘নির্বাচনের এতোদিন পরে এসে সংসদ সদস্যের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে নদভীর কেন্দ্র দখলের দাবি- উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এসব মন্তব্য দলীয় নীতি ও আদর্শের পরিপন্থি। ’
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, সংসদ সদস্য নদভীর বক্তব্যে আমরা বিস্মিত। তিনি রাজনীতিতে অর্বাচীনের মতো বক্তব্য রেখেছেন। তার এমন বক্তব্যে আমরা বিব্রত।
বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) রাতে নগরের লালখান বাজারে চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে নৌকার প্রার্থী মোছলেম উদ্দীন আহমদের বাসভবনে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় অপ্রাসঙ্গিকভাবে চসিক মেয়রকে জড়িয়ে সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নদভী তার ‘গুণ্ডা-সন্ত্রাসী’ ভূমিকার কথা জানান প্রকাশ্যে।
তার বক্তব্যে প্রার্থী মোছলেম উদ্দীন ছাড়াও চন্দনাইশের সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম চৌধুরী, বাঁশখালীর সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ উপস্থিত চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতারা বিস্ময় প্রকাশ করেন।
নদভীর এ বক্তব্যের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলে দলের ভিতরে বাইরে ব্যাপক প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। চট্টগ্রাম-৮ আসনের উপনির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী আবু সুফিয়ান বৃহস্পতিবার (২৬ ডিসেম্বর) আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামানের কাছে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে আবু সুফিয়ান উল্লেখ করেছেন, ‘বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে সংসদ সদস্য আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দিন নদভীর ভিডিওসহ বক্তব্য প্রচারিত হয়েছে। মাননীয় সংসদ সদস্যের এমন নীলনকশা, দম্ভোক্তি এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কথা শুনে সাধারণ ভোটাররা শঙ্কিত। ’
‘তিনি যে বক্তব্য প্রদান করেছেন তা নির্বাচন বিধিমালা-২০০৮ এর পুরোপুরি লঙ্ঘন ও বেআইনি। মাননীয় সংসদ সদস্যের এ বক্তব্য রীতিমতো নির্বাচন কমিশন এবং নির্বাচন আচরণ বিধিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শন করার শামিল। ’
এর আগে সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার পর তার বিরোধিতা করেন নদভী। গত ৮ সেপ্টেম্বর নিজের ফেসবুক পেইজে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে তিনি দলীয় প্রার্থী নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।
গত বছরের ৩০ নভেম্বর সাতকানিয়ায় নিজ বাড়িতে আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভায় বিতর্কিত মন্তব্য করে ব্যাপক সমালোচিত হন আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দিন নদভী।
লোহাগাড়া ও সাতকানিয়ার আংশিক এলাকা নিয়ে গঠিত চট্টগ্রাম-১৫ আসনে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনে জয়ের পর ২০১৮ সালের একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও দলের মনোনয়ন পেয়ে জয়ী হন নদভী।
তবে নদভীর সঙ্গে সাতকানিয়া-লোহাগাড়া উপজেলা আওয়ামী লীগের বেশির ভাগ নেতা-কর্মীর বিরোধ রয়েছে। নদভীর আত্মীয়–স্বজনেরা জামায়াত-শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত- এমন অভিযোগ তুলে আওয়ামী লীগের অনেক নেতা-কর্মী তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করেন।
বাংলাদেশ সময়: ২০৫০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৭, ২০১৯
টিসি