চট্টগ্রাম: সিলেটের পর প্রথম চট্টগ্রামের বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে মাটির নিচে নিয়ে গেছে বিদ্যুতের তার। কর্ণফুলীর রাঙ্গাদিয়া ফ্লাইওভার অংশে ১০০ মিটার মতো লাইন মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া হয়েছে।
শুধু এ প্রকল্পের ১০০ মিটার নয়, চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেডের (সিইউএফএল) কারখানা সংশ্লিষ্ট একটি অংশ উপরে হওয়ায়, সেখানে আরও ৪০০ মিটারের মতো বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচ দিয়ে নেওয়া হয়েছে।
মাটির নিচ দিয়ে তার নিতে পারায়, এটিকে অন্যতম সফলতার অংশ হিসেবে দেখছে বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ। কারণ পুরো চট্টগ্রাম শহরে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নেওয়ার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। সেক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পের অভিজ্ঞতা কাজে লাগবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
সরেজমিনে দেখা যায়, আনোয়ারা প্রান্তে বঙ্গবন্ধু টানেলের প্রবেশ মুখ থেকে সংযোগ সড়কে গাড়ি চলাচলের জন্য একটি ফ্লাইওভার তৈরি করা হচ্ছে। ফ্লাইওভারের জন্য ২১টি পিলার স্থাপন করা হয়েছে। মূলত ফ্লাইওভারের ওপরে বিদ্যুতের তার নেওয়া সম্ভব না হওয়ায়, মাটির নিচ দিয়ে ১০০ মিটার বিদ্যুতের তার নেওয়া হয়েছে। যে লাইনটি আবার রাঙ্গাদিয়ায় মূল লাইনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সূত্র জানায়, হালিশহর সাবস্টেশন থেকে প্রথম টানেলের কাজে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হয়। সেখান থেকে পতেঙ্গা ও আনোয়ারার উভয় প্রান্তে দুই মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। পরে পটিয়া বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ থেকেও সংযোগ দেওয়া হয় টানেলে।
পতেঙ্গা অংশে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুতের স্থায়ী সংযোগ ও আনোয়ারায় ১৫ মেগাওয়াট সাব স্টেশন নির্মাণ করে পুরো টানেলে বিদ্যুতের সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। আর বিদ্যুতের ক্যাপাসিটি হলো ১৬/২০। আনোয়ারা অংশে ৭২৭ মিটার ভায়াডাক্ট নির্মাণ কাজের ১২১টি কেস্ট-ইন-সিচু বোরড পাইলের নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে।
পটিয়া বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, টানেলের কাজে প্রথমে হালিশহর সাব স্টেশন, পরে আনোয়ারায় সাব স্টেশন এবং পটিয়া বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ থেকেও বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে। টানেলের একটি ফ্লাইওভারের সংযোগ সড়ক হচ্ছে। কিন্তু ফ্লাইওভারের ওপরে-তো বিদ্যুতের লাইন নেওয়া যায় না। তাই ১০০ মিটার বিদ্যুতের লাইন মাটির নিচ দিয়ে গিয়ে মূল লাইনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ মাটির নিচ দিয়ে লাইন নেওয়া হয়েছে।
তিনি জানান, এ ছাড়া চট্টগ্রাম ইউরিয়া সার কারখানা লিমিটেডের (সিইউএফএল) একটি স্থাপনার উপরে হওয়ায়, নিরাপত্তার স্বার্থে মাটির নিচ দিয়ে তার নেওয়া হয়েছে। সবমিলিয়ে ৫০০ মিটার আন্ডারগ্রাউন্ড লাইন নেওয়া হয়েছে আনোয়ারায়।
সূত্র জানায়, প্রায় তিন বছর আগে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় চট্টগ্রাম মহানগরীতে মাটির নিচ দিয়ে তার নেওয়ার জন্য ৪৫৮ কোটি টাকা অনুমোদন দেওয়া হয়। ‘পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট’ প্রকল্পের অধীনে এটি বাস্তবায়ন হওয়ার কথা। প্রাথমিকভাবে নগরের ২৪টি পয়েন্টে ৮৩ কিলোমিটার বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন ভূগর্ভ দিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
বিদ্যুৎ বিতরণ লাইন নির্মাণের জন্য নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। তিন-চার মাস পর দরপত্র আহ্বান করা হতে পারে। এরপর কাজ পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি হবে। তারপর সব ঠিকঠাক হলে ছয় মাস পর কাজ শুরু হতে পারে। তাই বড় এ প্রকল্পের আগে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুতের তার নিয়ে সফল হওয়াটা ভালো দিক বলে জানান বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের কর্মকর্তারা।
প্রকৌশলী ইসমাইল হোসেন বলেন, টানেল প্রকল্পের ফ্লাইওভার অংশসহ আনোয়ারায় ৫০০ মিটার মাটির নিচ দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত কোনো ত্রুটি দেখা যায়নি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম দক্ষিণ অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী শামসুল আলম বাংলানিউজকে বলেন, টাকা পরিশোধ করার পর বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পে বিদ্যুৎ সরবরাহ দিই। এখন পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ দেওয়া হচ্ছে। যেহেতু এটি দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ, তাই বিদ্যুৎ সরবরাহে যাতে ত্রুটি না থাকে সেদিকে সার্বক্ষণিক নজর রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২০
জেইউ/টিসি