ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৮ আষাঢ় ১৪৩১, ০২ জুলাই ২০২৪, ২৪ জিলহজ ১৪৪৫

চট্টগ্রাম প্রতিদিন

দামের চাপে হারিয়েছে আতরের ঘ্রাণ

নিউজরুম এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২২
দামের চাপে হারিয়েছে আতরের ঘ্রাণ ...

চট্টগ্রাম: হজরত শাহ আমানত মাজার পেরিয়ে জেল রোড ধরে হাঁটলেই নাকে এসে লাগতো আতরের ঘ্রাণ। বিকিকিনির সময় আতর উড়ে মিশে যেতো বাতাসে।

এখন সেখানে আতর নয়, বাতাসে উড়ে ধুলো।  

আছদগঞ্জের মুখে আট বছর আগেও ছিল সারি সারি ২৫ থেকে ৩০টি ছোট-বড় আতরের দোকান ও কারখানা।

এখন আছে ৩-৪টি। সেগুলোতেও নেই আগের মতো ব্যবসা। নগরের রিয়াজুদ্দিন বাজার, টেরিবাজার, আন্দরকিল্লাসহ অভিজাত বিপণী বিতানের দোকানগুলোতে ঈদের আগেই চলে আতর কেনার হিড়িক। তবে বর্তমান প্রজন্মের কাছে পারফিউম, বডি স্প্রে বা ডিওডরেন্ট এর চাহিদাই বেশি। মূলত বয়স্ক ও ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরাই আতরের ক্রেতা।

আতর রাসুল (সা.) এর অত্যন্ত প্রিয় ছিল, সাধ্যমতো অন্য লোকদেরও আতর ব্যবহারের আদেশ দিয়েছেন। বিশেষ করে লোকসমাগমে গেলে, জুমার দিন, ঈদের দিন আতর ব্যবহারের বিশেষ তাগিদ রয়েছে।

জেল রোডের রাজা পারফিউমারি সাপ্লায়ার্স চট্টগ্রামের সবচেয়ে পুরোনো আতরের দোকান। দোকানের আলমিরায় নানান আকৃতির শিশি ভরা আতর। কেউ আসেন দরদাম করতে, কেউ নেন সামান্য পরিমাণ। ১৯৪০ সালে ওমদা মিঞা সওদাগর এই ব্যবসা শুরু করেন। মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার সুজানগর থেকে আসতো আগর-আতর। এছাড়া ভারত, স্পেন ও ফ্রান্স থেকে আতর আমদানি করে বোতলজাত করা হতো। ওমদা মিঞা সওদাগর অনেক ব্যবসায়ীকে  আতর বানানোর পদ্ধতিও শিখিয়ে দিয়েছিলেন।

দোকানীরা জানান, অনেক রাসায়নিক মিশিয়ে একটি আতর তৈরি হয়। কখনও ঠাণ্ডা এবং কখনও গরম কম্প্রেসারে তরল উপকরণ রেখে দিতে হয়। বারবার ঘ্রাণ পরখ করে ঠিক গন্ধটা পেতে অনেক সময় ৫০ থেকে ৬০ ধরনের উপকরণ মেশানো হয়।  

তবে এখন আখতারি মদিনা, কাছি বেলি, মেশকা আম্বর, আতর খস, ফিরদাউসসহ নানান নামের যেসব আতর বাজারে মিলছে, তার ঘ্রাণ নেই আগের মতো। মসজিদ-মাজারের গেটে বসা দোকানির কাছ থেকে ছোট শিশিভর্তি আতর কিনেই স্বস্তি খুঁজেন গ্রাহকরা। ফুটপাতের টেবিলে ছোট বোতলের আতর মিলে ৫০ থেকে ২০০ টাকায়, আর বড় বোতলের আতরের দাম ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা।

দুই বছর আগে জেল রোডের দোকানগুলোতে ভেজাল আতরের সঙ্গে স্যানিটাইজার বিক্রির দায়ে জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত শাহ আমানত পারফিউমকে ১০ হাজার টাকা এবং লাইসেন্স ছাড়া কেমিক্যাল মজুদ ও বিক্রির দায়ে যমুনা পারফিউমকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করে। এরপর থেকে অনেক দোকান বন্ধ হয়ে যায়।

ব্যবসায়ীরা জানান, বেশি দাম হওয়ায় দোকানগুলোতে আগর আতর রাখা হয় না। মৌলভীবাজারের অনেক কারখানা করোনাকালে বন্ধ হয়ে গেছে। আগর-আতরের উৎস আগরগাছ। এই গাছ সেদ্ধ করে আতর তৈরি করা হয়। আগর গাছও কমে যাচ্ছে। ৪০ কেজির এক ডেকচি গাছের টুকরো সেদ্ধ করে ৮ থেকে ১০ তোলা আতর পাওয়া যায়। প্রতি তোলা আতরের দাম ৮-৯ হাজার টাকা। এক কেজি কাঠের টুকরোর দাম ৫ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত।  

আবার চন্দন ও আগর গাছের রস থেকে তৈরি চন্দন আতর ২৫ গ্রামের এক শিশি বিক্রি হয় ৩ হাজার টাকায়। দুবাইয়ে তৈরি উদে কাসাস এক তোলা সাড়ে ৭ হাজার টাকা, সৌদি আরবের মরিয়ম আতর সাড়ে ৪ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। বাজারে কামার, মাজমা, আল হারামাইন ব্র্যান্ডের আতরের চাহিদা আছে।

আন্দরকিল্লা মসজিদ মার্কেটের আতর ব্যবসায়ী ওমর ফারুক জানান, ঈদ উপলক্ষে বেচাবিক্রি তেমন নেই। সর্বোচ্চ ছাড়ে আতর বিক্রি করা হচ্ছে। সৌদি আল রিহাব কোম্পানির ৬ মিলিলিটারের সিলভার, আল ফারেস, রেড রোজ, লর্ডস, আসিল, অরজিনাল, সিলভার স্টোন নামের আতর মজুদ আছে।  

কানুজ কোম্পানির ১ আউন্স (২৫ এমএল) আতরের দাম ১২০ থেকে ১৬০ টাকা, জান্নাতুল ফেরদৌস আতর ৬ এমএল ৮০ টাকা, পাকিস্তানি গুলে লালা ৯০ থেকে ১০০ টাকা, স্কয়ারের মদিনা আতর ৫০ টাকা ও কিউটের চন্দন আতর ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেশি দামের আতরের মধ্যে রয়েছে আল হারমাইন শেখ, ২০ হাজার টাকা তোলা। এছাড়া ১২শ টাকায় তুর্কি আতরের শিশি, লন্ডন ম্যাগনেট, জান্নাতুল ফেরদাউস, রজনীগন্ধা, বকুল ও বেলিফুলের আতর প্রতি তোলার দাম ৮০ থেকে ২০০ টাকা।

আমিন সেন্টারের দোকানি মো. হানিফ জানান, বিদেশ থেকে আমদানি করা আতরের দাম সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা। জনপ্রিয়তার শীর্ষে রয়েছে আমিরি, ডেনাল মালিকি আতিক, খানতালট আল থানি, আতর আল কাবা।

বাংলাদেশ সময়: ১১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০২২
এসি/টিসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।