ঢাকা, শনিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

দিল্লি, কলকাতা, আগরতলা

ইবনে বতুতার হেঁসেল থেকে কলকাতার বাটি চোখা

ভাস্কর সরদার, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৭২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
ইবনে বতুতার হেঁসেল থেকে কলকাতার বাটি চোখা ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

‘বাটি চোখা’ পদটি কলকাতায় বেশ কয়েক বছর জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এর আগমন ঘটেছে বিহার থেকে। এটি বিহার, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও নেপালের নিত্যদিনের খাবার এবং খুবই জনপ্রিয় একটি পদ।

কলকাতা: ‘বাটি চোখা’ পদটি কলকাতায় বেশ কয়েক বছর জনপ্রিয় হয়ে উঠলেও এর আগমন ঘটেছে বিহার থেকে। এটি বিহার, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও নেপালের নিত্যদিনের খাবার এবং খুবই জনপ্রিয় একটি পদ।

কলকাতার পথের খাবার বা স্ট্রিট ফুডের দিকে যারা নজর রাখেন, তারা উত্তর কলকাতার পথের ধারে কিংবা দক্ষিণ কলকাতার নানা জায়গায় অবশ্যই জিভে জল আনা এই পদটিকে অন্তত একবার চেখে দেখেছেনই।

কলকাতায় বসবাসকারী বিহার, রাজস্থান, উত্তরপ্রদেশ ও নেপালের মানুষের প্রিয় নাস্তা এই বাটি চোখা। তবে যে রাজ্যের বা যে অঞ্চলেরই মানুষ হোন না কেন যিনি একবার এই পদটি চেখে দেখেছেন, তিনি সুযোগ পেলেই চাইবেন আবারও চেখে দেখতে।
বাটি চোখা পদটির সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। ইবনে বতুতার লেখায় বাটি চোখার উল্লেখ পাওয়া যায়। জানা যায়, মেওয়ার রাজ্যে বাপ্পা রাওয়ালের শাসন প্রতিষ্ঠার সময় তার সেনাবাহিনীর প্রধান খাদ্য ছিলো বাটি চোখা। এর কারণ হিসেবে যেটা জানা যায় সেটিও বেশ চমকপ্রদ, যুদ্ধের সময় খাদ্য আসার পথ মাঝে মধ্যেই বন্ধ হয়ে যেতো। জমিয়ে রাখা খাদ্য অনেক সময় পচে যেতো। কিন্তু বাটি চোখা এমন একটি পদ যা অনেকদিন সংরক্ষণ করে রাখা যেতো এবং এর আকর্ষক স্বাদ সৈন্যদের উজ্জীবিত রাখতো।

সাধারণভাবে এই পদটিকে ঘিয়ের মধ্যে অনেক দিন ডুবিয়ে রাখা যায়। বাটি চোখার আকার গোল বলের মতো। এটি আটা দিয়ে তৈরি। গোল বলের মতো আকারের অংশটিকে বলা হয় বাটি। বাটির ভিতর থাকে ছাতুর পুর। ছাতুর সঙ্গে আদা, রসুন কুচি, কাঁচা মরিচ, কালো জিরা, লবণ, সরিষার তেল একসঙ্গে মেখে পুর তৈরি করা হয়। এই মিশ্রণটি আটা, খাবার সোডা, জোয়ান, ঘি ও দইয়ের সঙ্গে ভালো করে মেখে নিতে হয়।
এরপর কড়াইয়ে তেল ছাড়া মিশ্রণটিকে ভেজে নিতে হয়। এরপর আটার লেচি বানিয়ে এর মধ্যে পুরটিকে দিয়ে গোল বলের মতো বানিয়ে নিতে হয়। আটার লেচি বানাবার সময় আটার সঙ্গে সামান্য খাবার সোডা, সামান্য দই, অল্প জোয়ান আর বেশ কিছুটা গালানো ঘি মিশিয়ে নেওয়া হয়।

কাঠকয়লার উনুনে আটার তৈরি বলগুলিকে পুড়িয়ে নিতে হয়। তবে কাঠকয়লার উনুন হাতের সামনে না পাওয়া গেলে ওভেনে ৩০ মিনিট ১৮০ ডিগ্রি সেলসিয়াসে বেক করে নেওয়াও যেতে পারে।
এরপর চোখা তৈরির পালা। চোখা বানানো হয় বেগুন দিয়ে। চোখার সঙ্গে বেগুনের ভর্তার কিংবা বেগুন পোড়ার খানিকটা মিল রয়েছে। বেগুন ও টমেটো উনুনের আঁচে সেঁকে নিয়ে বেগুনের খোসা ছাড়িয়ে নেওয়া হয়। একটা বাটিতে বেগুন, টমেটো, আলু সেদ্ধ, আদা, রসুন, ধনেপাতা, লঙ্কা ও তেল একসঙ্গে ভালো করে মেখে ফেললেই চোখা তৈরি। নুন দিয়ে তেল ছাড়া ভাজা শুকনো মরিচ, কাঁচা পেঁয়াজ বা ঝলসানো পেঁয়াজ, টমেটোর চাটনি বা ধনেপাতার চাটনি দিয়ে পরিবেশন করা হয়।

আর পরিবেশনের সময় বাটি অর্থাৎ পুর ভর্তি আটার বলের মতো  বস্তুটিকে ভেঙে তার মধ্যে গরম ঘি দিয়ে দেওয়া হয়। নিশ্চিতভাবে বলা যায়, শীতের সন্ধ্যায় একবার কেউ চেখে দেখলে তার এই পদটি বারবার খাওয়ার ইচ্ছে আটকানো প্রায় অসম্ভব!

বাংলাদেশ সময়: ১৩২০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৭, ২০১৬
ভিএস/ওএইচ/এসএনএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।