ঢাকা: দেশের রপ্তানি আয়ের প্রধান উৎস তৈরি পোশাক শিল্প খাতের শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণে গঠিত বোর্ড আজ (২৪ মে) বৈঠকে বসছে। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে শ্রমিকদের জীবন যাত্রার ব্যয় সামাল দিতে পুনর্গঠিত বোর্ডের এটি প্রথম বৈঠক।
২০১৮ সালে সর্বশেষ গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি নির্ধারণ হয়। সে সময় ন্যূনতম ৮০০০ টাকা টাকা মজুরি ঘোষণা করে গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য গঠিত মজুর বোর্ড। বর্তমানে সেই মজুরিতে চলছে তৈরি পোশাক শিল্প। এক মজুরি ঘোষণা থেকে পাঁচ বছর পর নতুন মজুরি বোর্ড গঠনে শ্রম আইনের বাধ্যবাধকতা থাকায় গত মাসে (এপ্রিল’ ২০২৩ ) বোর্ড পুনর্গঠন করা হয়। আজ সেই বোর্ড শুভেচ্ছা বিনিময়ের জন্যই মূলত বসছে।
পুনর্গঠিত বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন সিরাজুল ইসলাম, মালিক প্রতিনিধি রয়েছেন বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ও এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সহ-সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান। দুইজন স্থায়ী সদস্যসহ মোট ৬ সদস্যের এই বোর্ড।
সাম্প্রতিক সময়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতির ফলে গার্মেন্টস শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে। বিদায়ী বোর্ড সরকারের প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি বিবেচনা করে প্রতি বছর ৫ শতাংশ মজুরি বৃদ্ধির নির্দেশনা দিয়েছিল। কিন্তু প্রাক্কলিত মূল্যস্ফীতি যেমন নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। আবার সব কারখানা প্রতি বছর মজুরি বাড়ায়নি বলে অভিযোগ করেছেন শ্রমিক নেতারা।
তারা বলেন, গত দুই বছর লাগাম ছাড়া মূল্যস্ফীতি পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শ্রমিকদের মজুরি পুনর্নির্ধারণে এ বোর্ড আরও আগে গঠন করা জরুরি ছিল। উচিত ছিল আরও আগেই শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি। তারপরও বোর্ড গঠন হয়েছে; দ্রুততম সময়ের মধ্যে মজুরি বৃদ্ধি করা হোক।
শ্রমিকরা বলছেন, জীবন নির্বাহের খরচ মেটাতে মজুরি বাড়ানোর তাগিদ থাকলেও চাকরি হারানো ও গ্রেপ্তারের ভয়ে কোনো কর্মসূচি নেই; তাই মজুরিও বাড়েনি। নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ফলে প্রাপ্ত মজুরিতে চলছে না, ধার-বাকি করে মাস সামাল দিতে হয়। বেতন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সব টাকা পরিশোধ করতে চলে যায়।
মিরপুর-১০ নম্বরের গার্মেন্টস কারখানার শ্রমিকরা বেতন বাড়ানোর দাবিতে বিক্ষেভ করলে মজুরি বোর্ড গঠনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল, দেওয়া হয়েছিল স্বল্পমূল্যে নিত্যপণ্য বিক্রির প্রতিশ্রুতি। তখন ধরপাকড় ও চাকরিচ্যুত করে শ্রমিকদের থামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
গত বছর সবচেয়ে বেশি বেড়েছিল পণ্যমূল্য। মাঝে কিছুদিন থেমেছিল। আবারও প্রতিদিনই কোনো না কোনো পণ্যের দাম বাড়ছে; জানান মিরপুর-১১ এর একটি কারখানার শ্রমিক আসমা খাতুন।
তিনি বাংলানিউকে বলেন, পাঁচ বছর আগে যখন মজুরি বাড়ে তখন সংসার ভালোই চলতো। সংসার চালানোর পর গ্রামে বাড়িতেও কিছুটা টাকা পাঠানো যেত। এখন বাজার খরচ এতো বেড়েছে যে আর সংসার চলে না। ধার-দেনা করে চলতে হয়, বেতন পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ধার-দেনা শোধ করতেই টাকা শেষ হয়ে যায়। নতুন করে আবার ধার-বাকি শুরু হয়ে যায়।
এ বিষয়ে গার্মেন্টস ও সোয়েটার শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্রের (জিডব্লিউটিইউসি) সভাপতি ইদ্রিস আলী বাংলানিউকে বলেন, পাঁচ বছর আগে মজুরি বৃদ্ধি হয়েছে। কিন্তু নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে প্রতিবছর, এমনকি প্রতিমাসেও। আগের মাসে যে খরচ হয়েছে, পরের মাসে আর সেই খরচে চলেনি। এটা এখন শ্রমিকদের প্রধান সমস্যা। এসব বিষয় মাথায় নিয়ে দ্রুততম সময়ের মধ্যে মজুরি নির্ধারণ করতে হবে।
তিনি বলেন, পণ্যমূল্য বৃদ্ধিসহ জীবন যাত্রার পাগলাঘোড়া আগামীতেও অব্যাহত থাকবে। এসব বিষয় রেখে মজুরি গঠন করতে হবে।
এর আগে ২০০৬ সালে মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে পোশাক শিল্পে ন্যূনতম মজুরি ৯৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১ হাজার ৬৬২ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়। ২০১০ সালের মজুরি বোর্ড পুনর্গঠন করে ৩ হাজার টাকা মজুরি ঘোষণা করে। সেবার সরকারের পক্ষ থেকেও মজুরি বৃদ্ধির তাগিদ দেওয়া হয়। এরপর ১০১২ সালে আরেকবার বোর্ড পুনর্গঠন করে নতুন মজুরি ঘোষণা করা হয় ৫ হাজার ৩০০ টাকা। যেটি ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে কার্যকর হয়। সর্বশেষ ২০১৮ সালে বোর্ড পুনর্গঠনের মাধ্যমে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয় ৮ হাজার টাকা।
বর্তমান মজুরি বোর্ড মূল্যস্ফীতি, জীবন যাত্রার ব্যয় ও শিল্পের সক্ষমতা বিবেচনা করে নতুন মজুরি ঘোষণা করবে-, এমনটাই প্রত্যাশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৩৩৬ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
জেডএ/এমএমজেড