ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মোল্লারহাট সপ্তাহে বিক্রি হয় ১৫-১৬ কোটি টাকার শুকনা মরিচ

মো. রোমান আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩
মোল্লারহাট সপ্তাহে বিক্রি হয় ১৫-১৬ কোটি টাকার শুকনা মরিচ

শরীয়তপুর: শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ উপজেলার চরকুমারিয়া ইউনিয়নের মোল্লারহাটে সপ্তাহে শনিবার ও মঙ্গলবার হাট বসে। এই হাটে বিক্রি হয় কোটি কোটি টাকার শুকনা মরিচ।

ভরা মৌসুমে সপ্তাহে দুই হাটবারে ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকার মরিচ বিক্রি হয় বলে জানিয়েছেন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর।

মঙ্গলবার (২৩ মে) সরেজমিন গিয়ে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে- ভেদরগঞ্জ উপজেলাটি পদ্মা-মেঘনা নদীবেষ্টিত। এই উপজেলার মাটি অনেক উর্বর। তাই প্রতিবারই মরিচের বাম্পার ফলন হয় এখানে। এই উপজেলার ঐতিহ্যবাহী হাট হচ্ছে মোল্লারহাট। এখানে শনি ও মঙ্গলবার মরিচ কেনাবেচা হয়।

বিভিন্ন এলাকার কৃষকরা নিজেদের উৎপাদিত মরিচ বিক্রি করতে আসেন এই হাটে। আবার দেশের বিভিন্ন জেলা ও কোম্পানি সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে মরিচ কিনতে আসেন এই হাটে। গত মঙ্গলবার প্রতি কেজি মরিচ বিক্রি হয়েছে ২৮০ থেকে ৩৩০ টাকায়।

বাজারে দোকানঘরের সংখ্যা কম থাকলেও ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ২৫০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। এছাড়াও ৩০০ থেকে ৩৫০ জন শ্রমিক এখানে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে ৬ হাজার ৪৭৫ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ফলন হয়েছে ৯ হাজার ৮৭০ মেট্রিক টন। শুধু শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের মোল্লারহাটে ভরা মৌসুমে সপ্তাহে দুই হাটবারে ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকার মরিচ বিক্রি হয়। এছাড়াও প্রতি হাটবারে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার মরিচ বিক্রি হয়।

আরশিনগরের কৃষক ওয়াদুদ মিয়া বলেন, চলতি বছর আমি ৮০ শতাংশ জমিতে মরিচ চাষ করেছি। এখন পর্যন্ত ৭০ হাজার টাকা বিক্রি করেছি। আজকে ৩১৫ টাকা কেজি দরে ২১ হাজার ৭০০ টাকার মরিচ বিক্রি করেছি। এখনো আমার বাড়িতে প্রায় ৭০ হাজার টাকার মরিচ রাখা আছে। গাছে এখনও মরিচ ধরছে।

কৃষক আব্দুল বারেক বলেন, আমার উৎপাদন করা মরিচ ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। বাড়ির কাছে বাজার। ভালো দাম পাচ্ছি শুরু থেকে।  

স্থানীয় শফিকুল ইসলাম ও স্বপন বলেন, সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে মরিচ কিনে এনে মোল্লার হাট বাজারে বিক্রি করি। এতে যে ব্যবসা হয়, তা দিয়ে সংসার ভালোভাবে চলে যায়।

শ্রমিক মহসিন বলেন, মরিচ কিনে রাখার পর বাজারের ব্যবসায়ীদের কথা অনুযায়ী মরিচগুলো আমরা প্রস্তুত করে ট্রাকে তুলে দিলে কেজি প্রতি আমাদের দুই টাকা দেন। এতে আমাদের প্রতিদিন ৬০০ থেকে হাজার টাকা পর্যন্ত আয় হয়। বাজারের আয়ে আমাদের সংসার ভালোভাবে চলছে।

শান্তা এন্টারপ্রাইজের মালিক শাহাবুদ্দিন বলেন, সপ্তাহে দুই দিন হাটবার। প্রতি হাটে গড়ে কমপক্ষে তিন হাজার মণ মরিচ বিক্রি হয়। তিন হাজার মণ মরিচের দাম প্রায় সাড়ে চার কোটি থেকে পাঁচ কোটি টাকা। এই বাজারের উছিলায় আমাদের এলাকার ৩০০ থেকে ৩৫০ জন শ্রমিক কাজ করে তাদের সংসার পরিচালনা করছে। বাজারে ঘর সংখ্যা কম থাকলেও ছোটবড় মিলিয়ে প্রায় ২৫০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। মরিচের কারণে বাজারের ডাক ১০ লাখ হয়েছে এখন। এতে সরকার রাজস্ব পাচ্ছে। দেশেে বিভিন্ন স্থান থেকে এই বাজারে মরিচ ও পাইকাররা আসার কারণে বিক্রিও বেশি হচ্ছে।

জাকির অ্যান্ড ব্রাদার্সের মালিক জাকির হোসেন মোল্লা বলেন, হাটবারে প্রতিটি পাইকারি দোকানে কমপক্ষে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকার মরিচ বেচাকেনা হয়। এরপর মরিচগুলো ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল, কুষ্টিয়া, ফেনি, চৌমুহুনীর পাইকার ও দেশের বড় বড় কোম্পানি ক্রয় করে নিয়ে যায়।  

ঢাকার শ্যাম বাজারে আসা মাহবুব হোসেন নামে এক পাইকার বলেন, শ্যামবাজারের বড় বড় আড়ৎ ও বড় কোম্পানিগুলোর কাছ থেকে এই বাজারের নাম শুনেছি। এই বাজারের মরিচগুলো অন্য বাজারের মরিচের তুলনায় ভালো। ভালো মরিচ পেতে হলে মোল্লারহাটে আসতে হবে।  

এ ব্যাপারে শরীয়তপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. রবীআহ নূর আহমেদ বলেন, চলতি বছর মরিচ আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬ হাজার ৫৮০ হেক্টর জমিতে। ইতোমধ্যে অর্জিত হয়েছে ৬ হাজার ৪৭৫ হেক্টর। এখন পর্যন্ত ফলন হয়েছে ৯ হাজার ৮৭০ মেট্রিক টন। শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জের মোল্লারহাটে ভরা মৌসুমে সপ্তাহে দুই হাটবারে ১৫ থেকে ১৬ কোটি টাকার মরিচ বিক্রি হয়। সাধারণত প্রতি হাটবারে ৫ থেকে ৬ কোটি টাকার মরিচ বিক্রি হচ্ছে। এই ধারা অব্যাহত থাকলে কৃষকরা তাদের উৎপাদিত মরিচ বিক্রি করে বেশ লাভবান হবে বলে আমরা মনে করি।

বাংলাদেশ সময়: ১৭১৪ ঘণ্টা, মে ২৪, ২০২৩ 
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।