ঢাকা, শুক্রবার, ২৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

পাট শিল্পের পথেই হাঁটছে টেক্সটাইল শিল্প: বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২০ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩
পাট শিল্পের পথেই হাঁটছে টেক্সটাইল শিল্প: বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট

ঢাকা: পাট শিল্পের মতো টেক্সটাইল শিল্পও হারিয়ে যাচ্ছে বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আলী।  

মঙ্গলবার (৩০ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজার ইউনিক ট্রেড সেন্টার কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

 

এর আগে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমাদের স্থানীয় টেক্সটাইল স্পিনিং ও উইভিং মিলগুলোর বাজার মূলত রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য সুতা ও কাপড় তৈরি এবং তা সরবরাহ। দ্বিতীয়টি হচ্ছে- স্থানীয় ১৭ কোটি জনগোষ্ঠীর বস্ত্রের মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য সুতা ও কাপড় তৈরি এবং তা বাজারজাত করা। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক আমাদের মিলগুলোর উৎপাদন ও পচিালনার অবস্থা বর্তমানে চরম পর্যায়ে উপনীত হয়েছে। পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে। টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির বর্তমান অবস্থা সৃষ্টির পেছনে আমরা যে বিষয়গুলোকে মূল কারণ হিসাবে চিহ্নিত করেছি তার একটি হলো, শুল্ক মুক্তভাবে আমদানিকৃত টেক্সটাইল পণ্যের স্থানীয় বাজারে অবাধ বিক্রয়।

তিনি বলেন, আশা করেছিলাম করোনা পরবর্তী ঈদুল ফিতরের বাজার ধরতে পারব। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনক হলেও সত্য যে তীব্র ডলার সংকটের মধ্যেও সুতা, কাপড় আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সে কারণে স্থানীয় মিলগুলোর অবস্থা অত্যন্ত সংকটাপন্ন।

ভারত ও চীন থেকে আসা সুতা, কাপড়ের কথা উল্লেখ করে মোহাম্মদ আলী বলেন, শুধু পাকিস্তান থেকেই নয়, এর পাশাপাশি আমাদের প্রতিবেশী দেশ ভারত ও চীন থেকে আসা সুতা, কাপড়সহ বিভিন্ন ড্রেস-ম্যাটেরিয়েলও বিভিন্ন নগরী ছাড়াও দেশের বিভিন্ন মোকামে তথ্য ঢাকার ইসলামপুরের বিক্রমপুর প্লাজায় (কোতয়ালী থানার পাশে) নারায়ণগঞ্জ, আড়াইহাজার, গাউসিয়া, মাধবদী, বাবুরহাট, নরসিংদী ও সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়েছে এবং হচ্ছে। আমরা জানি না সরকার তাদের কাছ থেকে কতটা রাজস্ব পেয়েছে। তবে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এর ফলে দীর্ঘ দিনে গড়ে ওঠা প্রাইমারি টেক্সটাইল সেক্টরে বিদ্যমান ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিটি আজ অস্তিত্ব সংকটের মধ্যে রয়েছে।

গ্যাস ও বিদ্যুতের নিরবচ্ছিন্ন সরবরাহ সংকটসহ অস্বাভাবিক হারে গ্যাসের দাম নেওয়ায় সৃষ্ট সমস্যা উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমাদেরকে বিদ্যুৎ জেনারেশনের জন্য অবকাঠামো নির্মাণে ব্যাপক বিনিয়োগ করতে হয়েছে। গ্যাস সংযোগের জন্য নিরাপত্তা জামানত হিসাবে বিপুল পরিমাণ অর্থ প্রদান করতে হয়েছে। বিভিন্ন সময় গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে। আমাদের তথ্য মতে, ২০০৯ সাল থেকে ২০২৩ সনের জানুয়ারি পর্যন্ত গ্যাসের দাম বাড়ানো হয়েছে ৬১৭ শতাংশের মতো। অন্যদিকে ১ বছরের কম সময়ের মধ্যে গ্যাসের ট্যারিফ বৃদ্ধি করা হয়েছে ৮৬ শতাংশ।  

দুঃখ প্রকাশ করে বিটিএমএ প্রেসিডেন্ট বলেন, অত্যন্ত দুঃখজনক যে, গ্যাস ট্যারিফ বৃদ্ধির আগে এবং ট্যারিফ বৃদ্ধির পরবর্তী সময় থেকে গ্যাস সরবরাহ অবস্থা অদ্যাবধি অত্যন্ত শোচনীয়, যা বর্তমানে অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে। স্পিনিং মিলগুলোর সুতা উৎপাদন খরচ প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। একই সঙ্গে মিলগুলোর উৎপাদন ক্ষমতা অর্ধেকে নেমে এসেছে।  

তারপরও শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন-ভাতা পরিশোধসহ ইউটিলিটি বিল দিতে ১৮ থেকে ২০ শতাংশ কম দামে সুতা বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে মিলগুলো। ফলে গড়ে একটি মিলকে গ্যাস ব্যবহার না করেও বর্ণিত গ্যাস ট্যারিফে বিল দিতে হচ্ছে বছরে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। অতিরিক্ত গ্যাস বিল ও অতিরিক্ত নিরাপত্তা জামানত প্রদানের কারণে স্পিনিং মিলগুলোর আর্থিক ক্ষতির পরিমাণ গত ১৫ মাসে (জানুয়ারি ২০২২-মার্চ ২০২৩) প্রায় ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি টাকায় ৪৫ হাজার কোটি টাকার বেশি।  

মোহাম্মদ আলী আরও বলেন, বাংলাদেশের টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রি আজ একটি গভীর চক্রান্তের সম্মুখীন। সরকার ২০৩০ সালে টেক্সটাইল ও ক্লথিং থেকে ১০০ বিলিয়ন ডলার রপ্তানি আয় অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। কিন্তু বিদ্যমান পরিস্থিতি অব্যাহত থাকলে তা অর্জন সম্ভব হবে না।  

প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করে তিনি বলেন, বিটিএমএর রপ্তানিমুখী স্পিনিং মিলগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে রপ্তানিমানের সুতা রয়েছে, যা আমরা প্রতিযোগিতামূলক মূল্যে তৈরি পোশাক শিল্পে সরবরাহ করতে পারব। এ সেক্টরটির অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য আমরা অনতিবিলম্বে ৫টি পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন করছি।  

১. টেক্সটাইল খাতের স্পিনিং ও উইভিং মিল যারা রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক শিল্পের প্রয়োজনীয় সুতা ও কাপড় দীর্ঘ দিন যাবত সরবরাহ করে আসছে, বর্তমান সংকট বিবেচনায় নিয়ে ও বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে বিটিএমএর রপ্তানিমুখী স্পিনিং মিলে তৈরি সুতার ন্যূনতম একটি অংশ ব্যাক-টু-ব্যাক এলসির মাধ্যমে সংগ্রহের বিধান।

২. বন্ডের মাধ্যমে আমদানিকৃত সুতা, কাপড় ও ড্রেস-ম্যাটেরিয়েলের অবৈধ বিক্রয় বন্ধের লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ, আড়াইহাজার, রূপগঞ্জ, মাধবদী, বাবুরহাট, নরসিংদী, বেলকুচি ও সিরাজগঞ্জের মোকামগুলিতে এখন থেকেই ঘন ঘন তল্লাশি অভিযান পরিচালনা করতে হবে এবং এরূপ অবৈধ কার্যক্রমের সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে শান্তি দিতে হবে।

৩. ইডিএফ সুবিধা অব্যাহত রাখাসহ কাঁচামাল আমদানির জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে এলসি খোলা অব্যাহত রাখার নির্দেশনা।

৪. নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করা। বর্ধিত গ্যাস ট্যারিফের ওপর অতিরিক্ত নিরাপত্তা জামানত আদায় থেকে বিরত থাকাসহ গ্যাসের মূল্য সমন্বয়।

৫. ব্যাংক ঋণের কিস্তি ও সুদ, অন্তবর্তীকালীন সময় তথা আগামী জুন, ২০২৪ পর্যন্ত ব্লক অ্যাকাউন্টে রাখার সুযোগ প্রদানসহ পরবর্তী সময় হতে সহজ কিস্তিতে প্রদানের সুবিধা প্রদান।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০২৩
এমএমআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।