ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

উৎপাদন বাড়ার কারণে বাড়ছে রপ্তানি আয়

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৪ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৩
উৎপাদন বাড়ার কারণে বাড়ছে রপ্তানি আয়

ঢাকা: গত এপ্রিলে ঈদুল ফিতরের ছুটি থাকায় রপ্তানিমুখি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ছিল আট থেকে ১০ দিন। দীর্ঘ ছুটি বন্ধ থেকে উৎপাদন, এতে রপ্তানি আয়ে ভাটা পড়ে।

গত মে মাসে সব কারখানা চালু হলে বাড়ে উৎপাদন, সঙ্গে রপ্তানি আয়ও। ধারাবাহিকতা জারি থাকায় ক্রমেই এ আয় বাড়ছে।

রোববার (৪ জুন) বিকেলে রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রকাশিত হাল নাগাদ প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

ইপিবি’র তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের জুলাই-মে ১১ মাসে রপ্তানি আয় হয় ৫ হাজার ৫২ কোটি ৭২ লাখ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রয় ৫ লাখ ৪০ হাজার ৬৪১ কোটি টাকা। যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৭ দশমিক ১১ শতাংশ বেশি। তবে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩ দশমিক ৬৪ শতাংশ কম।

আগের মাসে রপ্তানি আয়ের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৩৮ শতাংশ। সে হিসাবে মে মাস শেষে রপ্তানি আয় কিছুটা বেড়েছে।

গত ১১ মাসে দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাক রপ্তানি বেড়েছে ১০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ দশমিক ৪০ শতাংশ। এ সময়ে তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয় হয়েছে ৪২ দশমিক ৬৩০ বিলিয়ন ডলার। ১১ মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানির কৌশলগত রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রয় ১ শতাংশ বেশি রপ্তানি হয়েছে।

তৈরি পোশাক দেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য। যা মোট রপ্তানি আয়ের ৮৪ ভাগ দখল করে আছে। এ কারণে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমলে মোট রপ্তানিতে কমে যায়। এপ্রিল মাসে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমে গেলে মোট রপ্তানিতে হতাশা তৈরি করে।

গত এপ্রিলে ঈদুল ফিতরের কারণে লম্বা ছুটি পড়ে। এতে করে পুরো রপ্তানি সক্ষমতা কাজে লাগানো যায়নি। পুরো মে মাস জুড়ে রপ্তানি করা সম্ভব হওয়ার কারণে রপ্তানি আয় বেড়েছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, গত ১১ মাসে রপ্তানি আয় আগের মাসের বা আগের বছরের চেয়ে বেড়েছে। তার মানে এই নয় যে তৈরি পোশাক বছর জুড়ে ভালো থাকবে। এখন আমরা যে রপ্তানি করছি তা আমাদের উৎপাদন সক্ষমতার প্রায় ৩৫ শতাংশ। আমাদের হাতে যথেষ্ট কাজ নেই। আগামীতে হয়তো এর প্রভাব পড়বে।

দেশের বৈদেশিক মুদ্রার সংকট চলছে। বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চায়ন-রিজার্ভও ক্রমান্বয়ে কমে আসছে। এটা একটি বিপদজনক পর্যায়ে পৌঁছানোর উপক্রম হয়েছে। এ সময়ে আমদানি আয় কমানোর পরও ডলারের চাহিদা মেটানো যাচ্ছে না। ডলারের বিপরীতে টাকার মান কমেছে প্রায় ২৫ শতাংশ। এ অবস্থায় বৈদেশিক মুদ্রা ডলারের প্রধান দুই উৎস রপ্তানি আয় ও প্রবাসী আয় অর্থনীতির অনিবার্য ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত কয়েক মাস ধরে শত চেষ্টার পরও প্রবাসী আয় বাড়ানো যাচ্ছে না। এক মাসে বাড়লে, আরেক মাসে কমে। এপ্রিল মাসে রপ্তানি আয়ও কমে গিয়েছিল। কিন্তু মে আসে এসে আবারও বেড়েছে। এর ফলে ১১ মাসে রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি থাকলো। কিছুটা হলেও অর্থনীতিতে স্পেস তৈরি করেছে, বলছেন রপ্তানিকারকরা।      

এ বিষয়ে বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বাংলানিউজকে বলেন, এক মাসের রপ্তানি আয় দেখে পুরো চিত্র বোঝা যাবে না। বছর শেষে বোঝা যাবে তৈরি পোশাক থেকে রপ্তানি আয় কম হয়েছে, না বেশি হয়েছে। যে মাসে রপ্তানি হয় সে মাসেই রপ্তানি আয় দেশে আসে না। আসে পরের মাস বা তারও পরে। তবে মে মাসে রপ্তানি আয়ে একটি ইতিবাচক চিত্র দেখা যাচ্ছে।

জুলাই থেকে মে এক মাসে তৈরি পোশাকের বাইরে হিমায়িত চিংড়ি রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৩৯৯ মিলিয়ন ডলারের, কৃষিজাত পণ্য রপ্তানি করে আয় হয়েছে ৭৯৭ মিলিয়ন ডলারের, জামড়া ও চামড়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে ১ দশমিক ১২০ বিলিয়ন ডলারের, প্রকৌশল পণ্য রপ্তানি হয়েছে ৫১৮ মিলিয়ন ডলারের, জাহাজ ও বোট রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৫১৮ মিলিয়ন ডলার এবং এক সময়ের প্রধান রপ্তানিপণ্য সোনালী আঁশ পাট ও পাটজাত দ্রব্য থেকে আয় এসেছে ৮৪৮ মিলিয়নে ডলারের।

তৈরি পোশাক বাদে অপ্রধান এ সব রপ্তানি পণ্যের কোনোটিতেই আগের বছরের সমান রপ্তানি আয় আসেনি। প্রতিটাই ১০ থেকে ৩০ শতাংশ নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। তবে পরিমাণে খুবই কম, এমন বেশ কিছু পণ্য রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৫ ঘণ্টা, জুন ৪, ২০২৩
জেডএ/এমজে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।