ঢাকা: মাছ, মাংস, শাক, সবজিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি পণ্যের দামের ঊর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে নিম্ন ও মধ্যবিত্তদের বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সংসার চালাতে প্রতিনিয়ত হিমশিম খেতে হচ্ছে।
আলু বাঙালির রান্নাঘরের অতিপ্রয়োজনীয় একটি উপাদান। প্রায় প্রতিটি রান্নায় ব্যবহার করা যায় এ পণ্যটি। এমনকি যখন মাছ, মাংস, শাক, সবজিসহ অন্যান্য পণ্যের আকাশ ছোঁয়া দাম থাকে, তখন স্বল্প মূল্যে পাওয়া আলু দিয়েই অন্তত প্রতি বেলার আহার সারতে পারতেন নিম্ন ও মধ্যবিত্তরা। তবে এখন এ অতি প্রয়োজনীয় পণ্যটিরও দাম বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হওয়ায় টানা-পোড়নের মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের।
রোববার (১১ জুন) রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি আলুর বাজার ঘুরে দেখা যায়, প্রতি পাল্লা (৫ কেজি) আলু বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। অর্থাৎ, পাইকারি বাজারে প্রতি কেজি আলুর দাম পড়ছে ৩৬ টাকা। অথচ এ একই বাজারে দুই সপ্তাহ আগে প্রতি পাল্লা আলু বিক্রি করা হয়েছে ১৬০-১৭০ টাকা, কেজিতে ৩২-৩৪ টাকা। দুই মাস আগে ছিল ১০০ টাকা, কেজিতে ২০ টাকা। অর্থাৎ দুই মাসের ব্যবধানে আলুর দাম বেড়ে হয়েছে দ্বিগুণ।
এছাড়া কারওয়ান বাজারের খুচরা বাজারে বর্তমানে মানভেদে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৬০ টাকা। এর মধ্যে ডায়মন্ড ও কাটি লাল নামে পরিচিত আলু বিক্রি হচ্ছে ৩৮-৪০ টাকা, জাম আলু নামে পরিচিত আলু বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা এবং গুড়া আলু বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা। তবে রাজধানীর স্থানীয় বাজারগুলোতে আলুর দাম আরো বেশি বলে জানা গেছে।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, মূলত এবার আলুর উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেশি। তবে বড় বড় ব্যবসায়ীরাও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হিমাগারে আলু মজুদ করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে। যার কারণে দাম বেড়েছে বলে দাবি তাদের।
মো. মোস্তফা নামে এক খুচরা ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, বাজারে আলুর চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ কম। তাই দাম বেশি। এছাড়া বাজারে কোনো কিছুরই তো দাম কম নয়, তাই আলুর দামও বেশি হওয়া স্বাভাবিক।
মো. মিন্টু মোল্লা নামে এক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, যতদূর জানি এবার আলুর আবাদ ও উৎপাদন কম হয়েছে। তারপরও যা উৎপাদন হয়েছে সেটি বড় বড় ব্যবসায়ীরা কিনে হিমাগারে রেখে সেখান থেকে ছাড়ছে না। যার কারণে বাজারে আলুর সংকট দেখা দিয়েছে। আর সংকট সৃষ্টি হলে তো দাম বাড়বেই।
তবে তার দাবি, বাজারে প্রতিটি পণ্যের দাম যে পরিমাণ বেড়েছে, সে তুলনায় আলুর দাম কমই আছে।
কারওয়ান বাজারের পাইকারি আলু বিক্রেতারা সেখানকার আড়ৎ থেকে আলু কিনেনে। তেমনি একটি আড়ৎ বিক্রমপুর বাণিজ্যালয়। এ আড়তের মালিক মো. হানিফ বলেন, আমরা মানভেদে ২৮-৩১ টাকায় আলু বিক্রি করি। সেটিই পাইকারি বাজারে ৩৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আলুর দাম বাড়ার জন্য বড় বড় ব্যবসায়ীদের দুষলেন এ ব্যবসায়ী। তিনি বলেন, আমরা নিজেরা আলু কিনে বিক্রি করি না। আমরা ব্যবসায়ীদের আলু আমাদের আড়তে রেখে বিক্রি করি। এ জন্য ৬৫ কেজির প্রতি বস্তায় আমরা ৪০ টাকা করে কমিশন পাই। এসব বড় বড় ব্যবাসায়ীরা কৃষকদের কাছ থেকে ১৫ টাকা করে আলু কিনে হিমাগারে মজুদ করে রেখেছে। তারাই হিমাগার থেকে বাজারে আলুর সরবরাহ না করে সংকট সৃষ্টি করছে, আর দাম বাড়াচ্ছে। এদের কেউ ধরে না।
এদিকে ক্রেতারা বলছেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলুর দাম বাড়িয়েছে। এতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে শুধু ক্রেতাদের। সরকারের যথাযথ তদারকি নেই বলেই ব্যবসায়ীরা এমন সুযোগ নিচ্ছে।
অবসরপ্রাপ্ত বেসরকারি চাকরিজীবী দেলোয়ার হোসেন দুলাল বলেন, আলুর দাম বাড়ার জন্য আসলে অন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য দায়ী। কারণ শাক-সবজির দাম বাড়লে সাধারণভাবে আলুর দামও বাড়ে। কিন্তু এখানে আমাদের কিছু করার নেই। এভাই কষ্ট করে কিনতে হবে, খেতে হবে। সরকারের তদারকি সংস্থাগুলোর এসব বিষয়ে দেখার কথা থাকলেও তারা দুই একদিন বাজারে অভিযান করে দায় সারছে। মূল জায়গায় কিছু করছে না।
লিমা আক্তার নামের আরেক গৃহিণী বলেন, আলুর দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের ভোগান্তি তো হচ্ছেই। দুই সপ্তাহ ধরে আলুর দাম কমার অপেক্ষা করছিলাম। কিন্তু কমেনি। তাই বাধ্য হয়ে আজ বাড়তি দাম দিয়েই কিনতে হলো। বর্তমান বাজার পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে এক কেজির জায়গায় আধা কেজি পণ্য কিনতে হচ্ছে। অথচ কৃষকরাও প্রকৃত মূল্য পাচ্ছে না।
মনিরুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে আলু মজুদ করে রেখেছে। সরকারের তদারকির অভাবে এ সিন্ডিকেট ভাঙা যাচ্ছে না। আলুর দাম ২০ টাকা হলে সাধারণ ক্রেতাদের জন্য ভালো হতো।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৩ ঘণ্টা, জুন ১১, ২০২৩
এসসি/জেএইচ