ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যক্তি ও কর্পোরেটের ওপর করের বোঝা হ্রাসের আহ্বান

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১৪ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
ব্যক্তি ও কর্পোরেটের ওপর করের বোঝা হ্রাসের আহ্বান

ঢাকা: ২০২৩-২৪ অর্থ বছরের প্রস্তাবিত জাতীয় বাজেট এবং আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২০-এর খসড়া নিয়ে কিছু উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগকারীদের সংস্থা ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি)।

বুধবার (১৪ জুন) এক সংবাদ সম্মেলনে ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরের জন্য প্রস্তাবিত বাজেটে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের জন্য বড় বরাদ্দের প্রশংসা করার পাশাপাশি স্বাস্থ্য, কৃষি এবং শিক্ষাখাতে বরাদ্দের অপ্রতুলতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩-এর বিধানগুলোর গভীর ও বিস্তৃত পর্যালোচনা করা প্রয়োজন। কারণ এই আইনের কিছু বিধান আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর বিবেচনায় অযৌক্তিক বলে মনে হয়।

ফিকি আশা করেছিল নতুন আইনে ন্যূনতম কর বিধানগুলো ধীরে ধীরে প্রত্যাহার করা হবে। তার পরিবর্তে সেগুলো উল্লেখযোগ্যহারে বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিশেষ করে কার্বোনেটেড পানীয় শিল্পের (বেভারেজ ইন্ডাস্ট্রি) ন্যূনতম কর ০.৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে মোট প্রাপ্তির ৫ শতাংশ (৮ গুণ বৃদ্ধি) করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। যার ফলে কোমল পানীয়ের দাম ৩০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পাবে। এই খাতে ইতোমধ্যে ৫-১০ শতাংশ শুল্কের পাশাপাশি পরোক্ষ কর (এসডি+ভ্যাট) ৪৩.৭৫ শতাংশ দিতে হয়, যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ। এর ফলে পণ্যের ভোগ কমে যাবে এবং পরবর্তীতে সরকারি কর আদায় হ্রাস পাবে, যা শেষ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগ পরিকল্পনা এবং এই খাতে কর্মসংস্থানকে প্রভাবিত করতে পারে। তাই এই শিল্পের বিকাশের সুযোগ দিতে সরকারকে ন্যূনতম কর ১ শতাংশ করার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।

অন্য আরেকটি উল্লেখযোগ্য উদ্বেগের বিষয় হলো ধার্য করের বিধান থেকে একটি অনুবিধি বাদ দেওয়া। এই অনুবিধির অনুপস্থিতিতে অনিশ্চয়তা তৈরি হতে পারে এবং বিধানটি তার কার্যকারিতা হারাতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪-এর মতো একই বিধান প্রস্তাবিত আইনে বা বিধিতে অব্যাহত না থাকলে আধুনিক বাণিজ্যে ডিস্ট্রিবিউটরদের সরবরাহের উপর করের বোঝা, আমদানিকৃত পণ্যের সরবরাহ, ইত্যাদি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পাবে। প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী, প্রণোদনা বোনাস অতিরিক্ত লভ্যাংশ হিসেবে বিবেচিত হবে। ফিকি -এর পর্যালোচনা অনুসারে, এটি কোম্পানির উপর আরও করের বোঝা চাপিয়ে দেবে এবং পরবর্তীতে কর্মচারীদের উপার্জনের উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।

কর পদ্ধতিতে কর্মকর্তাদের স্বেচ্ছাচারী ক্ষমতা হ্রাসের প্রস্তাব করেছে ফিকি এবং নিরবচ্ছিন্ন লেনদেনের জন্য এনবিআরের তিনটি শাখা এবং বাইরে থেকে সংযুক্ত সিস্টেমগুলোর ডিজিটালাইজেশন করার পরামর্শ দিয়েছে।

খসড়া আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩ অনুযায়ী, বিনিয়োগকারীগণ এখন থেকে ডব্লিওপিপিএফ, মিউচুয়াল ফান্ড এবং ডিভিডেন্ড থেকে আয়ের উপর হার কোনো ছাড় পাবেন না। লিভ ফেয়ার অ্যাসিস্ট্যান্স (এলএফএ) এখন থেকে করের আওতায় অন্তর্ভুক্ত হবে। এছাড়া সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করা কি আদৌ বিনিয়োগ হিসেবে গন্য হবে কি না এবং সেটা থেকে করে কর ছাড় পাওয়া যাবে কি না সে বিষয়টি পরিষ্কার করে বলা নেই।

মিউচুয়াল ফান্ড/ইউনিট তহবিল এবং সরকারি সিকিউরিটিজে বিনিয়োগের সীমা ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত বেঁধে দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়। বেসরকারি স্বীকৃত ভবিষ্য তহবিলে কর আরোপ করা কর্মীদের আয় হ্রাস করবে এবং সরকারি ভবিষ্য তহবিলকে করমুক্ত হিসাবে রাখার বিষয়টি বৈষম্য সৃষ্টি করবে। ফিকি সরকারকে এই বিধানটি পুনর্বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করে কারণ এটি ব্যক্তির মোট আয়ের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে। সরকারের কাছে ফিকি আহ্বান জানায় যেন তারা আয়কর আইন (আইটিএ) ২০২৩ এর একটি নির্ভুল ইংরেজি সংস্করণ তৈরি, ম্যাপিং এবং সূচিকরণ করে।

বিদেশি বিনিযোগকারীদের শীর্ষ এই সংস্থাটি আরও জানায় যে, প্রস্তাবিত আইনে স্পষ্ট বিধান অন্তর্ভুক্ত করা উচিত যাতে প্রস্তাবিত আয়কর আইন ২০২৩ ‘অবিলম্বে কার্যকর’-এর পরিবর্তে ভবিষ্যতের জন্য তৈরি হয়ে ১ জুলাই ২০২৩ থেকে কার্যকর হয়।

২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট এবং খসড়া আয়কর আইন ২০২৩-এর বিষয়ে ফিকি-এর সভাপতি নাসের এজাজ বিজয় বলেন, আমাদের সরকার যে প্রগতিশীল পরিবর্তনগুলো বাস্তবায়নের দিকে নজর দিচ্ছে তা প্রশংসনীয়। তবে, কিছু বিধান বাস্তবায়ন হলে ব্যবসা এবং ব্যক্তির প্রবৃদ্ধির হার কমে যেতে পারে। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত মোবাইল ফোনের ওপর আরোপিত ভ্যাট এবং লোকসানে থাকা কোম্পানিগুলোর ওপর করের বোঝা বাড়ার কারণে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন ফিকি’র সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট দীপাল আবেইউক্রেমা, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আব্দুর রশীদ, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির কো-অর্ডিনেটর সাজ্জাদ রহিম চৌধুরী, ট্যারিফ-ট্যাক্সেশন ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স কমিটির সদস্য দেবব্রত রায় চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক টিআইএম নুরুল কবির এবং কনসালট্যান্ট স্নেহাশীষ বড়ুয়া।

ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ফিকি) হলো বাংলাদেশের ২১টিরও বেশি সেক্টরে বিশ্বের ৩৫টি দেশের ২০০টিরও বেশি বহুজাতিক কোম্পানি এবং বিদেশি বিনিয়োগকারীদের শীর্ষ চেম্বার।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১৩ ঘণ্টা, জুন ১৪, ২০২৩
এমকে/এমজেএফ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।