ঢাকা, শনিবার, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৮ মে ২০২৪, ০৯ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

ঈদ সামনে রেখে প্রস্তুত সাভারের চামড়া শিল্প নগরী

সাগর ফরাজী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১০ ঘণ্টা, জুন ২৩, ২০২৩
ঈদ সামনে রেখে প্রস্তুত সাভারের চামড়া শিল্প নগরী

সাভার (ঢাকা): বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের মধ্যেই চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে ১ কোটি কাঁচা চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্য নিয়েছে সাভারের চামড়া শিল্প নগরী। এ জন্য লবণ, রাসায়নিক দ্রব্য ও অতিরিক্ত শ্রমিক নিয়ে সাভারের ১৪২টি ট্যানারি চামড়া সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত আছে বলে নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএ)।

তবে কেন্দ্রীয় বর্জ্য শোধনাগার সিইটিপি ও কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।

বৃহস্পতিবার (২২ জুন) সাভারের তেঁতুলঝোড়া এলাকায় বিসিক চামড়া শিল্প নগরীতে গিয়ে দেখা গেছে, ঈদের বর্জের অতিরিক্ত চাপ সামলাতে সিইটিপি সংস্কারের কাজ চলছে। এছাড়া বিসিক এলাকার জমে থাকা বিভিন্ন আবর্জনা সরিয়ে ফেলা হচ্ছে, পরিষ্কার করা হচ্ছে পানি নিষ্কাশনের নালা। বিভিন্ন কারখানা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। নির্দেশনা মেনে অনেক কারখানার সামনেই লাগানো হয়েছে গাছ।

আসন্ন ঈদের প্রস্তুতির ব্যাপারে প্রিন্স লেদার ইন্ডাস্ট্রিজের প্রোপ্রাইটর মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, গত বারের তুলনায় এবার বস্তাপ্রতি লবণের দাম বেড়েছে ৩ থেকে ৪শ টাকা। পাশাপাশি যেসব কেমিক্যাল লাগে সেগুলোরও দাম বেড়েছে। বাড়তি দামেই আমাদের প্রস্তুতি নিতে হচ্ছে। আশা করছি আগের বারের মতই চামড়া সংগ্রহ করতে পারব।

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত উল্ল্যাহ বলেন, সাভারের ১৪২টি ট্যানারি চামড়া সংগ্রহের জন্য প্রস্তুত। লবণ থেকে শুরু করে অন্যান্য রাসায়নিক দ্রব্য সব প্রস্তুত আছে। দেশের বিভিন্ন জেলার মৌসুমি যে শ্রমিক আছে চামড়া প্রস্তুতের জন্য, তাদেরও প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সব মিলিয়ে আমাদের ট্যানারিগুলো প্রস্তুত। এ বছর গরু, মহিষ, ছাগল ও ভেড়া মিলিয়ে প্রায় ১ কোটি চামড়া সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে।

কোরবানীর ঈদের দিন ও তার পরদিন মূলত সারাদেশ থেকে কাঁচা চামড়া আসে সাভারের এই চামড়া শিল্পনগরীতে। ঈদের ৩য় দিনও খুব অল্প পরিমাণে আসে কাঁচা চামড়া। লবণ দেওয়া চামড়া আসতে শুরু করে এক সপ্তাহ পর। ঈদের বাড়তি চাপ ছাড়াও স্বাভাবিক সময়ের জন্যও এখনও পুরোপুরি প্রস্তুতি হতে পারেনি সাভারের বিসিক চামড়া শিল্প নগরী। কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো সুযোগই এখনো গড়ে উঠেনি। এছাড়া ডাম্পিং ইয়ার্ডও গড়ে তোলা হয়নি এখনো।

এ বিষয়ে সাখাওয়াত উল্ল্যাহ আরও বলেন, কিছু কাজ অসম্পূর্ণ রেখে ট্যানারিগুলো স্থানান্তর করা হয়েছে। ওই কাজ এখনো সম্পূর্ণ করা হয়নি। আর বর্জ্য ব্যবস্থাপনা এখনো ১ শতাংশও হয়নি। ডাম্পিং তো সমাধান না, রিইউজটা হচ্ছে সমাধান। ডাম্পিং নিয়ে কথা বলতে বলতে অনেকে চুপ হয়ে গেছেন। ৭-৮ বছর হয়ে গেছে শুধু ডাম্পিংই হচ্ছে।

সাভার শিল্প নগরীর সেন্ট্রাল এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টের (সিইটিপি) ক্ষমতা রয়েছে ২৫ হাজার কিউবিক মিটার পানি শোধন করার। তবে ঈদকে কেন্দ্র করে চাপ বেড়ে প্রায় ৩৫ হাজার কিউবিক মিটারে দাঁড়ায় বলে দাবি ট্যানারি মালিকদের। আর বিসিক কর্তৃপক্ষ বলছে আগের চেয়ে ভালো অবস্থানে আসার চেষ্টা করছেন কারখানা মালিকরা। তাই তরল বর্জ্যের পরিমাণ কমে আসছে।

এ বিষয়ে সাভার চামড়া শিল্প নগরীর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মাহফুজুর রহমান রিজওয়ান বলেন, ট্যানারি মালিকদের পানি ব্যবহারসহ বিভিন্ন কমপ্লায়েন্স নিয়ে সচেতনতা দেখা যাচ্ছে। হাইকোর্টের ৪টি নির্দেশনা তারা মেনে চলার চেষ্টা করছেন। পরিবেশ অধিদপ্তর তাদের মনিটরিং করছে। যাদের পরিবেশের সার্টিফিকেট নেই তাদের ইউটিলিটি লাইন কেটে দেওয়া হচ্ছে, উৎপাদন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। পরিস্থিতি অনুধাবন করেই মালিকরা এখন কমপ্লায়েন্সে আসার চেষ্টা করছেন। আমাদের সিইটিপির ওপর চাপটা অনেক কমই আসে এখন। আগে যেমন পানি আসত, সেই তুলনায় এখন অনেক কম আসছে। একদম রাতারাতি সব পরিবর্তন হয়ে যাবে তা তো আমরা আশা করতে পারি না। তবে, এবারে আমরা আশা করছি যেহেতু ওনারা এখন নিজেরা সচেতন হচ্ছেন, এছাড়া কোম্পানিতে ৬ জন মালিক পরিচালক আছেন তাই আশা করছি আমাদের হ্যান্ডেলিংটা অনেক ভালো হবে।

ঈদের অতিরিক্ত চাপ সামাল দিতে সিইটিপির যন্ত্রাংশগুলো মেরামত বা পরিবর্তনের কাজ শুরু হয়েছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

তিনি বলেন, আমরা নিজেরা ওভারহোলিং করে, মেশিনারিজ পরিবর্তন করে নিজেদের মত একটা ভালো প্রস্তুতির মধ্য দিয়ে আগাচ্ছি। আশা করছি ঈদের আগে আমাদের এই কাজগুলো শেষ হয়ে যাবে। ঈদকে কেন্দ্র করে গতবারের তুলনায় আমাদের আরও বেশি মনিটরিং থাকবে, মালিকদের সহযোগিতার মনোভাবও আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে।

পরিবেশ অধিদপ্তরের ঢাকা অঞ্চলের পরিচালক সৈয়দ নজমুল আহসান বলেন, ইতোমধ্যে আমরা ৩ জনের টিম করে দিয়েছি, তারা প্রতিদিন মনিটরিং করছে। ঈদের পরও আমাদের মনিটরিং বজায় থাকবে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪১০ ঘণ্টা, ২৩ জুন, ২০২৩
এসএফ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।