ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

গরুর চামড়া ৩০০, ছাগলের ২৫ টাকা!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৫৩ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
গরুর চামড়া ৩০০, ছাগলের ২৫ টাকা!

নীলফামারী: উপযুক্ত গরুর চামড়া ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আর ছাগলের চামড়ার দাম মাত্র ২৫ টাকা। মন পোষালে দেন না হলে বাদ দেন।

এভাবে চামড়া কিনেছেন নীলফামারী জেলার মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।  প্রকৃত চামড়া ব্যবসায়ীরা পুঁজি সঙ্কটে চামড়া কিনতে পারেননি। ফলে অনেকেই বাধ্য হয়ে মাদ্রাসা ও এতিমখানায় দান করেছেন কোরবানির পশুর চামড়া।  

সূত্র জানায়, ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে পাওনা প্রায় তিন কোটি টাকা। বিগত পাঁচ বছরেও তা আদায় হয়নি। ফলে পুঁজি হারিয়ে নীলফামারীর সৈয়দপুরের চামড়া ব্যবসায়ীরা এবার বিপাকে পড়েন।  

চামড়া কেনার কোনো ধরনের প্রস্তুতি নিতে পারেননি পুঁজি সংকটে থাকা ব্যবসায়ীরা। বকেয়া টাকা আদায় ও মূলধনের সংকট কাটিয়ে উঠতে না পারায় অনেক ব্যবসায়ী এ ঈদে চামড়া কিনতে পারেননি।

জেলার সৈয়দপুরের কামারপুকুরের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জাবেদুল ইসলাম পাঁচ লাখ টাকায় গরু কিনে কোরবানি দেন। সেই গরুর চামড়া বিক্রি করেছেন ৩শ টাকায়।  

তিনি বলেন, ওই টাকায় ফকির-মিসকিনদের দান করবো কী? আর মাদ্রাসা-এতিমখানায় দেবোই বা কী? অনুরূপভাবে গরুর চামড়া ও ছাগলের চামড়া নামমাত্র মূল্যে কিনেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা।  

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, তাদের পথে বসিয়ে দিয়েছেন ঢাকার ট্যানারি মালিকরা। করোনা শুরুর আগের বছর থেকে ঢাকার ট্যানারি মালিকরা চামড়া কিনে ঠিকমতো টাকা পরিশোধ করেননি। ফলে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করলেও সব পুঁজি রয়ে গেছে ট্যানারি মালিকদের কাছে। বছরের পর বছর বকেয়া টাকা তুলতে না পেরে অনেকে আবার বাপ-দাদার আদি ব্যবসা ছেড়ে দেন অনেকেই। এখন সৈয়দপুরে চামড়া ব্যবসার সঙ্গে হাতেগোনা ১৩-১৪ ব্যবসায়ী জড়িত রয়েছেন।

চামড়া ব্যবসায়ী মো. সরফরাজ মুন্না জানান, চামড়া ব্যবসায়ীরা ঈদে বিভিন্ন জায়গা থেকে ঋণ নিয়ে চামড়া কিনেন। ট্যানারিতে চামড়া বিক্রি করে প্রাপ্ত টাকা দিয়ে ঋণ পরিশোধ করেন। কিন্তু কয়েক বছর ধরে ট্যানারি মালিকরা সৈয়দপুরের চামড়া ব্যবসায়ীদের প্রায় তিন কোটি টাকা বকেয়া রেখেছেন।

একদিকে পুঁজি সংকট আর অপরদিকে লবণের দাম বাড়ায় এবারও চামড়া ব্যবসায়ীদের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। গত বছর ৭০ কেজি ওজনের প্রতি বস্তার লবণের দাম ১ হাজার ৬০ টাকা ছিল। এবারও তা বেড়ে গিয়ে এক হাজার ৪শ টাকায় দাঁড়িয়েছে। তাই এবারে বিশেষ করে ছাগলের চামড়া সংরক্ষণ করতে গেলে চামড়া ব্যবসায়ীরা পথে বসতে হবে। ব্যবসায়ীরা পুঁজি হারাবে নিশ্চিত।

তিনি বলেন, সত্যিকারে ট্যানারি মালিকদের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে পড়েছি। জেলার ডোমার, ডিমলা, জলঢাকা, কিশোরগঞ্জের ও সদরের সবচেয়ে বড় চামড়ার মোকাম ছিল সৈয়দপুরে। এখান থেকে ঢাকার ট্যানারিতে চামড়া সরবরাহ করা হতো। কিন্ত পুঁজি সংকটে ব্যবসায়ীরা আর আগের মতো চামড়া কিনছেন না। তারা ভিন্ন পেশায় চলে গেছেন।  
জেলার মৌসুমি চামড়া ব্যবসায়ীরা চামড়া কিনে পার্শ্ববর্তী জেলা রংপুরের তারাগঞ্জের বড় বড় ব্যবসায়ীর সঙ্গে ব্যবসা করছেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৯, ২০২৩
 এএটি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।