ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধিতে অদৃশ্য হাত কাজ করছে: ভোক্তার ডিজি

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫১ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৩
কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধিতে অদৃশ্য হাত কাজ করছে: ভোক্তার ডিজি ছবি: জিএম মুজিবর

ঢাকা: সম্প্রতি কাঁচা মরিচের আকাশছোঁয়া দাম বৃদ্ধির পেছনে অদৃশ্য হাত কাজ করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি) এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান।

তিনি বলেছেন, কাঁচা মরিচের মূল্য ১০ গুণ বাড়ার কোনো কারণ নেই।

প্রতি বছর বর্ষার সময় মরিচের উৎপাদন কমে, দাম বাড়ে। তাই বলে কোনো বছরই মরিচের দাম এভাবে রেকর্ড করেনি। তার মানে বাজারে কোনোভাবে অদৃশ্য হাত কাজ করেছে। সেটার ফলাফল কাঁচা মরিচের দাম এক হাজার টাকা হয়েছে। এর জন্য আমরা সবাই একটি বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি। এটি কোনো সভ্যতার লক্ষণ নয়।

রোববার (৯ জুলাই) চিনি, কাঁচামরিচ, আদা ও রসুনের মূল্য এবং সরবরাহ স্থিতিশীল রাখার লক্ষ্যে সুপারশপ, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।  

রাজধানীর কারওয়ান বাজারে অবস্থিত জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয়ের সভাকক্ষে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।

সভায় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের ডিজি বলেন, অভিযান ও ভারত থেকে আমদানি শুরুর পর কাঁচা মরিচের দাম কিছুটা স্বস্তির জায়গায় এসেছিল। ২৫০ থেকে ৩০০ টাকার মধ্যে নেমেছিল। এখন কিন্তু আবার দাম বাড়তি। মরিচের মূল্য বৃদ্ধির কয়েকটি যৌক্তিক কারণ রয়েছে। এর মধ্যে বৃষ্টি, কোরবানির ঈদের সময় পরিবহন সংকট, বর্ডার বন্ধ থাকা। কিন্তু এসব কারণ দিয়ে কোনোভাবেই কাঁচা মরিচের কেজি ৮০০-১০০০ টাকা হবে, সেটা মেনে নেওয়া যায় না।

তিনি আরও বলেন, ভারতীয় কাঁচা মরিচের দাম তিন-চারদিন ধরে বাড়তি। এটা এর আগে বাড়তি ছিল না। কিন্তু তখনও বাজারে স্বস্তি ছিল না। কারওয়ান বাজার থেকে যদি ৪০০ টাকা দরে মরিচ কিনে আমাদের ডিপার্টমেন্টাল স্টোরগুলো ৬২০ টাকায় বিক্রি করে, এটা কোনোভাবেই যৌক্তিক নয়। এসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধির পেছনে তারাও একটি প্রভাবক হিসেবে কাজ করছে। তারা যদি সুপার শপে ৬২০ টাকা কাঁচা মরিচ বিক্রি করে তাহলে খোলা বাজারেও দাম বেড়ে যাবে।

ডিজি বলেন, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের আইন অনুযায়ী, কাঁচামালে উৎপাদক পর্যায়ে ৪০ শতাংশ, পাইকারি পর্যায়ে ২০ শতাংশ ও খুচরা পর্যায়ে ৩০ শতাংশ লাভ করার নিয়ম রয়েছে। তারপরও সুপারশপ ও বিক্রেতারা এর থেকে বেশি লাভ করেছেন।

এ. এইচ. এম সফিকুজ্জামান আরও বলেন, কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষিতে রাজধানীসহ সারাদেশে আমাদের অভিযান পরিচালিত হয়েছে। এমনকি কারওয়ান বাজার ও যাত্রাবাড়ীতে গভীর রাতেও অভিযান চালানো হয়েছে। সেখানে আমরা বিক্রেতা ও ব্যবসায়ীদের বারে বারে বলেছি, ক্রয় ও বিক্রয় রশিদ রাখতে হবে। কিন্তু তাদের কাছে এগুলো পাওয়া যায় না। কারণ যাতে আমরা ২০০ টাকার মরিচ কীভাবে ৪০০ টাকা হয়ে যায়, সেটি ধরতে না পারি। তার মানে এখানে প্রতিটি স্তরে যেমন ইচ্ছা তেমন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

রশিদ না দেখাতে পারলে জরিমানা করা হবে জানিয়ে তিনি বলেন, কারওয়ান বাজারে ট্রাক থেকে কোনো পণ্য নামার পর যে দাম থাকে সেটি বাজার থেকে বের হওয়ার সময় দেড়গুণ-দ্বিগুণ দাম হয়ে যায়। তাহলে আমরা কীভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করব? সেজন্য বিক্রেতাদের ক্রয়-বিক্রয় রশিদ রাখতে হবে। তা না হলে আমরা জরিমানা করব। প্রয়োজনে আরো কঠোর থেকে কঠোরতম জায়গায় যাবে। কারণ এভাবে তো চলতে পারে না। আপনারা কারওয়ান বাজারের চার, পাঁচ বা ১০ জন লোক সারা বাংলাদেশকে জিম্মি করে ফেলছেন। কারণ কারওয়ান বাজারে কোনো জিনিসের দাম বাড়লে সারা বাংলাদেশে এর প্রভাব পড়ে।

তিনি আরো বলেন, এসব সমস্যা সমাধানে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। আমরা পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের সময় রশিদ দেওয়া নিশ্চিত করতে চাই। এটি আমাদের আইনেও বাধ্যতামূলক করা আছে। আমরা এখন থেকে এটি পরীক্ষা করব। কাঁচা মরিচ সুপারশপগুলোতে কম বেশি ৪২০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। শুধু একটি প্রতিষ্ঠান ৬২০ টাকা বিক্রি করেছে। যারা এভাবে আপ-ডাউন মালামাল বিক্রি করেছে তাদের লিখিত নোটিশ দেওয়া হবে আজ। তারা তিন দিনের মধ্যে এর জবাব দিবে। জবাব সন্তোষজনক না হলে তাদের বিরুদ্ধে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পরিচালক মনজুর মোহাম্মদ শাহরিয়ার বলেন, কেউ কেউ হঠাৎ করে বাজারের স্বাভাবিক পরিস্থিতি নষ্ট করে ফেলেন। উন্মুক্ত বাজার হবে অবাধ, স্বাধীন। কিন্তু সেই স্বাধীনতার সুযোগ নিয়ে জনগণকে পরাধীন করার পাঁয়তারা করেন কিছু ব্যবসায়ী। সুপারশপগুলোকে আমরা নির্দেশনা দিয়েছিলাম, যখন কোনো কিছুর মূল্য হঠাৎ করে বেড়ে যায়, তখন সেসব প্রতিষ্ঠানের কর্ণধাররা যেন ব্যক্তিগত সেই বিষয়ে মনোযোগ দেন। কিন্তু আমরা দেখেছি, এর ব্যত্যয় ঘটেছে। যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আগামীতে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করে সুপারশপ বন্ধ করে দিতে আমাদের বাধ্য করবেন না।

তিনি আরও বলেন, কেউ যদি বিক্রয় রশিদ না দেয়, তাহলে ট্রাকসহ মালামাল বাজেয়াপ্ত করার ক্ষমতা আমাদের দেওয়া আছে। আমাদের ভোক্তা অধিকার আইন খুবই শক্তিশালী। আমরা যদি এই আইনের প্রয়োগ করতে থাকি, তাহলে যারা কারসাজি করেন, তারা ভালো থাকবেন না। আপনারা (ব্যবসায়ী) ব্যবসা করবেন, লাভ করবেন। কিন্তু সেই লাভটা যেন সাধারণ মানুষের চোখে বা যারা বাজার নিয়ে কাজ করেন তাদের চোখেও গ্রহণযোগ্য হয়। তাই আমাদের অনুরোধ থাকবে, সাধারণ মানুষ যেন আরাম পায়, সেভাবে পরিমিতবোধ রেখে ব্যবসা করুন।

এ সময় আড়তদার, খুচরা ব্যবসায়ী ও সুপারশপের প্রতিনিধিরা নিজ নিজ পক্ষে কাঁচা মরিচের দাম বৃদ্ধির কারণ তুলে ধরেন।

কারওয়ান বাজার মালিক সমিতির সাংগঠনিক সভাপতি মো. ফজলুল হক রিমন বলেন, কাঁচা মরিচ পচনশীল পণ্য। এটি চাইলেও আমরা একদিনের বেশি দুইদিন রাখতে পারব না। যারা আমদানি করে তারা কত টাকা দিয়ে পণ্যটি কিনেছে সেটি আমরা জানি না। সরকারি ট্যাক্স, পরিবহন খরচ এমনকি কারওয়ান বাজারের ভ্যানভাড়া পর্যন্ত তারা দিচ্ছে। তারা আমাদের ঘরে পণ্যটি পৌঁছে দেয়। কিন্তু তারা আমাদের কখনো দাম বলে না। আমরা বিক্রয় রশিদ দেই। কিন্তু যারা আমাদের কাছে পণ্য পাঠান, তারা আমাদের ক্রয় রশিদ দেয় না। ক্রয় রশিদ চাইলে আমাদের বলে, পণ্য কিনলে কিনেন, না কিনলে নাই।

এফবিসিসিআই, ক্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধি মতবিনিময় সভায় উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৬ ঘণ্টা, জুলাই ৯, ২০২৩
এসসি/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।