ডিসিসিআই সভাপতি মো. সামীর সাত্তার বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে চারটি পিলার- স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট সিটিজেন প্রয়োজন। এর অন্যতম সাবপিলার হচ্ছে স্মার্ট এডুকেশন।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)-এর সভাপতি মো. সামীর সাত্তার বলেছেন, একটা দেশকে এগিয়ে নিতে স্থিতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা বাংলাদেশকে দেখলে বোঝা যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি। ২০০৮ সালে আমাদের মাথাপিছু আয় ছিল ৬৭৬ মার্কিন ডলার, আজ সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৭৬৫ মার্কিন ডলারে। এ বছর ২১.৬১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিট্যান্স এসেছে। দেশের রপ্তানি আয় বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৫৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছে। সবচেয়ে বড় গৌরবের বিষয় আমরা ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হতে যাচ্ছি। অপ্রতিরোধ্য গতিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এটা আর স্লোগান নয়, এটা বাস্তবতা। এ বাস্তবতাকে সম্ভব করেছে স্থিতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব, যা আমরা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছ থেকে পেয়েছি।
সামীর সাত্তার বলেন, স্থিতিশীল রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও রাজনৈতিক পরিবেশ না থাকলে সিঙ্গাপুর আজ সিঙ্গাপুর হতো না, মালয়েশিয়া আজকের অবস্থানে যেতে পারত না। আমি বিশ্বাস করি স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশনের সঠিক বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াকে ছাড়িয়ে যেতে পারব। তিনি বলেন, এপ্রিল মাসে প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গী হিসেবে আমার জাপানে যাবার সুযোগ হয়েছিল। সেখানে এক সেমিনারে দেখতে পাই অনেক বিনিয়োগকারী বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। তাদের আগ্রহের পেছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে বেসরকারি খাত, যারা বাংলাদেশের অর্থনীতির লাইফলাইন। দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকার কারণেই বেসরকারি খাত দেশকে এগিয়ে নিতে পারছে।
ঢাকা চেম্বারের সভাপতি বলেন, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশন গৌরবের বিষয়। তবে এই গ্র্যাজুয়েশন ব্যবসায়ীদের জন্য কিছু চ্যালেঞ্জ নিয়ে আসবে। এ জন্য আমাদের প্রয়োজন গবেষণা ও উদ্ভাবন। এদিকে কঠোর নজর দেওয়া উচিত। যেটা ইতোমধ্যে আমাদের প্রধানমন্ত্রী তাঁর স্মার্ট বাংলাদেশ ভিশনের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। তবে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে হলে চারটি পিলার- স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি ও স্মার্ট সিটিজেন প্রয়োজন। এর অন্যতম সাবপিলার হচ্ছে স্মার্ট এডুকেশন। আর স্মার্ট এডুকেশন বলতে বুঝি জ্ঞান ও উদ্ভাবনাভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি, দক্ষতা উন্নয়ন, কারিগরি ও ভোকেশনাল প্রশিক্ষণ এবং শিক্ষাব্যবস্থার সঙ্গে শিল্পের সংযোগ।
দক্ষতাভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে সরকার ইতোমধ্যে এটুআই ও ন্যাশনাল স্কিলস ডেভেলপমেন্ট অথরিটি প্রতিষ্ঠা করেছে, যার মূল লক্ষ্য দক্ষতা উন্নয়ন, বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান বিষয়ক নানামুখী কাজ করা। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবারের বাজেটেও গবেষণা ও উদ্ভাবনের ওপর আলোকপাত করে কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। যেমন- বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণা ও উদ্ভাবনা কেন্দ্রের মাধ্যমে ৮০ হাজার যুবক-যুবতীকে আধুনিক প্রযুক্তি ও উদ্ভাবনা নিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া; গবেষণা, উদ্ভাবনা ও উন্নয়নের জন্য ১০০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ রাখা, শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিভিত্তিক শিক্ষায় গুরুত্ব দেওয়া ইত্যাদি।
আমাদের বিপুলসংখ্যক তরুণ জনসম্পদ রয়েছে যা অন্যান্য দেশে নেই। ইনোভেটিভ ও স্মার্ট লার্নিং বেজড শিক্ষার প্রতি আমাদের জোর দিতে হবে। কারণ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের তথ্যমতে ভবিষ্যতে অটোমেশন, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ক্রিয়েটিভ থিংকিং এবং ডেটা অ্যানালিসিস ব্যবহারের চাহিদা বৃদ্ধি পাবে। এ প্রক্রিয়ায় বেসরকারি খাতকে যুক্ত করে শিল্পের চাহিদাভিত্তিক শিক্ষা কারিকুলাম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। আমরা বেসরকারি খাত এ ধরনের উদ্যোগে আপনার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে এক হতে কাজ করতে সবসময় প্রস্তুত আছি। আমি আশা করি আগামী দিনে আপনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ একটি বেসরকারি খাতনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে পরিচিত হবে এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা বাস্তবায়ন হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১১০৫ ঘণ্টা, জুলাই ১৭, ২০২৩
এসআইএস