ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

‘দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ’ প্রদর্শনী শুরু

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
‘দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ’ প্রদর্শনী শুরু

ঢাকা: রাজধানীতে তিন দিনব্যাপী ‘দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ ইন বাংলাদেশ এক্সিবিশন-২০২৩’ শুরু হয়েছে।  চলতি বছরে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ’ -এর ১০ বছর পূর্তিতে শীর্ষ চাইনিজ কোম্পানিগুলোর অংশগ্রহণে এই এক্সিবিশন শুরু হয়েছে।

 

শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) দুপুরে পূর্বাচলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ- চায়না ফ্রেন্ডশিপ এক্সিবিশন সেন্টারে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া।

অনুষ্ঠানটি যৌথভাবে আয়োজন করছে বাংলাদেশ- চায়না চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (বিসিসিসিআই) ও দ্য অ্যাম্বাসি অব চায়না ইন বাংলাদেশ।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, দ্য বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) প্রকল্প বাংলাদেশ এবং চীনের সম্পর্ক আরও জোরদার করেছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অবকাঠামোগত, এনার্জি, টেক্সটাইল এবং অটোমোবাইল টেকনোলজিতে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ এবং চীন দুই দেশই অধিক জনসংখ্যার দেশ। তাই ইনভেস্টররা এই দুই দেশে বিনিয়োগে অনেক বেশি আগ্রহী। গত ১৫ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশ আজকে তার অবস্থান করে নিয়েছে।

বাংলাদেশের স্পেশাল ইকনোমিক জোনে ইনভেস্ট করলে কি সুবিধা হবে? এ বিষয়ে তিনি বলেন, দেশি এবং বিদেশি ইনভেস্টররা যদি আমাদের ইকনোমিকাল জোনে ইনভেস্ট করে তাহলে তারা ইমপোর্টে ১-২ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট ও ট্যাক্সের সুবিধা পাবে। এবং আগামী দশ বছরে র-মেটেরিয়াল ইমপোর্টে কোনো ভ্যাট-ট্যাক্স দিতে হবে না। এমনকি বিদেশি বিনিয়োগকারীরা চাইলে তাদের রেমিট্যান্স খুব সহজেই দেশের বাইরে পাঠাতে পারবেন। এছাড়া তাদের এই বিনিয়োগে বাংলাদেশের আইন অনুযায়ী শত ভাগ নিরাপত্তা দেওয়া হবে।

এশিয়ার অন্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে শ্রমিক খরচ কম যা ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে আগ্রহী করে তুলেছে - এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন,  আমি বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বলতে চাই, আপনারা যদি এ দেশের ইকনোমিকাল জোনগুলোতে বিনিয়োগ করেন, তাহলে দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সব থেকে কম খরচে শ্রমিক আমাদের এখানে পাবেন। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় ৬৭ মিলিয়ন প্রশিক্ষিত যুবশক্তি বাংলাদেশের চাকরির বাজারে কাজ করছে। বাংলাদেশে একজন শ্রমিকের গড় মজুরি ১৮০-২৬০ ডলার পর্যন্ত। যা দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোর তুলনায় অনেক কম। যা শ্রম বাজারে একটি প্রতিযোগিতামূলক মজুরি। বর্তমানে বাংলাদেশ বিনিয়োগের জন্য একটি আদর্শ জায়গা।

প্রধান বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশে চীনা দূতাবাসের চার্জ ডি’অ্যাফেয়ার্স ইয়ান হুয়ালং বলেন, বহু চাইনিজ কোম্পানি বাংলাদেশে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে। করোনা এবং ইউক্রেন রাশিয়ার ক্রাইসিসের পরও বাংলাদেশের জিডিপি গ্রোথ প্রতিবছর ৫-৬ ভাগ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা খুবই সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করেছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশর কালচার সংস্কৃতি খুবই সমৃদ্ধ। উন্নয়নশীল দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অনেক সম্ভাবনা ময়। তাই চীন সরকারের পক্ষ থেকে চাইনিজ কোম্পানি ও স্টুডেন্টদের উৎসাহিত করা হয় বাংলাদেশে আসার জন্য। পাশাপাশি আমি বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদেরও চীনে পড়াশোনার জন্য যেতে অনুরোধ করব। আমি আশা করি ‘রোড অ্যান্ড বেল্ট ইনেশিয়েটিভ’ দুই দেশের সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে চাইনিজ এন্টারপ্রাইজেস অ্যাসোসিয়েশন ইন বাংলাদেশের (সিইএবি) প্রেসিডেন্ট কে চাংলিয়াং বলেন, আজ থেকে ১০ বছর আগে বেল্ট এন্ড রোড ইনেশিয়েটিভের উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর ফলে বাংলাদেশসহ বিশ্বের বহু দেশ উপকৃত হচ্ছে। আমরা বর্তমানে আমাদের কার্যক্রম চালানোর জন্য ঢাকায় একটি রিজনাল হেডকোয়ার্টার স্থাপনের জন্য চেষ্টা করছি। আমি মনে করি বাংলাদেশ হচ্ছে চাইনিজ কমিউনিটির জন্য সেকেন্ড হোম। কারণ, বাংলাদেশের সঙ্গে বহু বছর ধরে চীনা কোম্পানিগুলো কাজ করে যাচ্ছে। আমার মনে হয় যা অন্য কোন দেশের সঙ্গে এত ভালোভাবে ব্যবসায়িক সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি।  

অর্থ মন্ত্রণালয়ের ইআরডি বিভাগের উইং প্রধান অতিরিক্ত সচিব মো আনোয়ার হোসেন বলেন, এই বিআরআই প্রকল্পের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী হচ্ছে। এর মাধ্যমে বাংলাদেশও অবকাঠামোর দিক থেকে অনেক এগিয়ে গেছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশের যে শুধু অর্থনৈতিক উন্নতি হয়েছে এমনটি নয়, একইসঙ্গে বাংলাদেশ এবং চায়নার মধ্যে এক ধরনের কালচারাল সম্পর্ক স্থাপন হয়েছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) ভাইস চেয়ারম্যান এ. এইচ. এম আহসান বলেন, চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং যখন বাংলাদেশে ভ্রমণে এসেছিলেন তখন থেকে চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। আজকের এই এক্সিবিশনের মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যিক অগ্রগতি আরও বাড়বে। ইপিবি সব সময় এ ধরনের উদ্যোগকে উৎসাহিত করে। আশা করব বাংলাদেশ এবং চীনের এই সম্পর্ক আরও বেশি সুফল বয়ে আনবে।

অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ- চায়না অ্যালামনাই’র (এবকা) চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ আহমদ বলেন, আমি আশা করছি এই এক্সিবিশনের মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং চীনের মানুষের সঙ্গে একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠবে। যা দুই দেশের জন্যই লাভজনক হবে। পাশাপাশি বাংলাদেশের বহু শিক্ষার্থী চীন থেকে পড়াশোনা করে দেশকে আগামীতে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে সাহায্য করবে।

উল্লেখ্য, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ (বিআরআই) হচ্ছে একটি চীনা প্রকল্প। ২০১৩ সালে চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং এই প্রকল্পের সূচনা করেন। প্রকল্পের উদ্দেশ্য বিশ্বের ১৫০টির বেশি দেশকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে উন্নতি সাধনের চেষ্টা করা। প্রায় ৪ ট্রিলিয়ন মার্কিন ডলার ব্যয়ে করার পরিকল্পনা আছে এ প্রকল্পের। এটি বাস্তবায়ন করতে ইতোপূর্বে আরও দুটি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে। তৃতীয় সম্মেলন হবে চীনের বেইজিংয়ে।

এর আগে, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ কর্মসূচির আওতায় ২০১৬ সালে ঢাকা সফরে আসেন চীনের প্রেসিডেন্ট সি জিনপিং। ওই সময় বাংলাদেশে ৪ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রতিশ্রুতি দেন। এর মধ্যে ২৪৪৫ কোটি ডলার অবকাঠামো প্রকল্পে এবং ১৩৬০ কোটি ডলার যৌথ উদ্যোগ বিনিয়োগের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০২৩
ইএসএস/এসএএইচ
 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।