ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

চোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন খেজুর রস সংগ্রহ

জিএম মুজিবুর, সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১১৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১, ২০২৪
চোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে ছেড়ে দিচ্ছেন খেজুর রস সংগ্রহ খেজুর রস সংগ্রহের কাজে মো. কবির গাজী। ছবি: জিএম মুজিবুর

ঢাকা: শীত মানেই খেজুর রস। এই রসে হয় অমৃত স্বাদের পায়েস।

হয় মুখরোচক হরেক পিঠাপুলি। অনেকে সারা বছরের জন্য এই রস থেকে গুড়ও বানিয়ে ফেলেন।  এই রস যে গাছ থেকে হয়, সেই খেজুরগাছ আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। এমনকি খেজুর রস যারা সংগ্রহ করেন, কমে গেছে তাদের সংখ্যাও।  

অল্পসংখ্যক যেসব মানুষ খেজুর রস সংগ্রহের মাধ্যমে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছেন, তাদের মধ্যে কেউ কেউ চোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ। অনেকে চোরের কারণে এই পেশা ছেড়ে ভিন্ন কর্মসংস্থানে ঝুঁকছেন।

চোরের উৎপাতে অতিষ্ঠ এমনই একজন খুলনার ডুমুরিয়া থানার রামকৃষ্ণপুরের মো. কবির গাজী। তিনি বাংলানিউজকে বলছিলেন, বিগত তিন বছর যাবত আমি খেজুর গাছ কেটে রস ও গুড় বিক্রি করে সংসার চালাই, আর  ঐতিহ্যটাকে ধরে রাখার জন্য অনেক পরিশ্রম করে আসছি। কিন্তু এখন আর স্বস্তি নেই। কারণ একটাই, রস চোর বেড়ে গেছে। বিকেলে গাছ কেটে রেখে যাই, রাতে চুরি করে পেড়ে খায় এবং সকালে ঠিলেসহ (সংগ্রহের পাত্র) রস চুরি করে নিয়ে যায়।

মো. কবির গাজীস্বামী-স্ত্রী ও তিন সন্তান নিয়ে পাঁচজনের সংসার কবিরের। তার ছোট ছেলে ষষ্ট শ্রেণিতে পড়ে। তার পড়াশোনা আর সংসারের খরচ মিলিয়ে কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি।

আফসোস করে কবির গাজী বলেন, সারাদিন কষ্ট করি বউ-বাচ্চা নিয়ে একটু ভালো থাকার জন্য। কিন্তু চোরের অত্যাচারে আর সম্ভব নয়। প্রায় ১০০ গাছ কাটি আমি। প্রতিদিন ২০-২৫ ঠিলে রস হয়। এর মধ্যে অর্ধেক গাছের মালিকদের দিতে হয়। আর অর্ধেক আমি পাই, তা দিয়ে মানুষের রসের চাহিদা মেটানোর চেষ্টা করি। আশপাশের দূর-দূরান্ত থেকে অনেকে আমার কাছে রস কিনতে আসেন। রস খেয়ে তারা খুশি হন। কিন্তু সবাইকে আমি এখন আর রস দিতে পারি না চোরের কারণে।

তিনি বলেন, এক ঠিলে রস বিক্রি করি ৫-৬ শ’ টাকায়, গুড় বিক্রি হয় আরও বেশি টাকায়। কিন্তু রস ঠিকঠাক পাই না বলে এখন সংসার চালাতে টানাটানি হয়ে যায়। আমি অনেককেই বলেছি, আপনারা রস আমার কাছ থেকে খেয়ে যান, খেতে দেব, কত খাবেন। দয়া করে চুরি কইরেন না, কেউ আমার কথা শোনে না। প্রতিদিনই চুরির মাত্রা বেড়ে যাচ্ছে।

গ্রামে রস চোরের উৎপাত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রামকৃষ্ণপুরের ইউপি সদস্য (মেম্বার) গোলাম রাব্বানী শেখ বাংলানিউজকে বলেন আমি বিগত কয়েক বছর যাবত ওই কবির চাচাকে চিনি, তিনি অনেক কষ্ট করে খেজুর গাছ কাটেন। বহুদূর থেকে মানুষ এসে ওনার কাছ থেকে রস ও গুড় নিয়ে যান। তিনি খুব ভালো মানুষ  তবে আপনার মাধ্যমে জানতে পারলাম যে ওনার রস চুরি হয়ে যাচ্ছে। হ্যাঁ শখের বসে পোলাপান দুই-একবার না বলে খেতে পারে। তার মানে এই না যে, প্রতিদিনই রাতের বেলায় রস চুরি করে নিয়ে যাবে, আর সেই কষ্টে তিনি গাছ কাটা ছেড়ে দিয়ে ওনার কর্মসংস্থান হারাবেন।

গোলাম রাব্বানী বলেন, এই বিষয়টা ন্যক্কারজনক। আমি ধিক্কার জানাই। আমি ওই চাচার সঙ্গে কথা বলবো। বিষয়টা যদি সত্যি হয় তবে আমার এলাকার চৌকিদার দিয়ে রাতে ডিউটি করে চোর ধরে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করব।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ডুমুরিয়ার রঘুনাথপুর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক হাওলাদার সানোয়ার হোসাইন মাসুম বাংলানিউজকে জানান, এমন কোনো অভিযোগ জানা নেই, কেউ অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২১০৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০১, ২০২৪
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।