ঢাকা: দেশের রপ্তানির বাণিজ্যের প্রায় ৮৫ ভাগ জুড়ে আছে একটি মাত্র পণ্য, তা হলো তৈরি পোশাক। আর এ তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রধান বাজার হলো ইউউরোপ-আমেরিকা।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের জুলাই-ডিসেম্বর ছয় মাসে অপ্রচলিত বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানি ১২ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ৫৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ৪ দশমিক শূন্য ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছিল। প্রধান অপ্রচলিত বাজারগুলোর মধ্যে জাপান, অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ কোরিয়াতে রপ্তানি যথাক্রমে ১০ শতাংশ, ২৫ শতাংশ এবং ১৯ শতাংশ বেড়েছে।
একই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে ১১ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। যা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ২৪ শতাংশ কমেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার জার্মানিতে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ১৭ শতাংশ রপ্তানি কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৮৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে। ৪ শতাংশ রপ্তানি কমেছে ইতালিতে।
তবে স্পেন, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস এবং পোল্যান্ডে রপ্তানি বেড়েছে যথাক্রমে ৬ দশমিক ৫৬ শতাংশ, ২ দশমিক ১৫ শতাংশ, ৯ দশমিক ১১ শতাংশ এবং ১৯ দশমিক ১৫ শতাংশ।
কোভিড-১৯ এর মহামারির কারণে রপ্তানি তলানিতে নামে। মহামারি পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করলে রপ্তানি বাড়তে থাকে। কিন্তু রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ পরিস্থিতিকে আরও নাজুক করে তোলে। যুদ্ধের প্রভাবে ইউরোপ-আমেরিকার অর্থনীতি সংকটে পড়ে। পণ্য উৎপাদন, বিপণন ও সরবারহে খরচ বেড়ে যায়; বিশ্বজুড়ে মূল্যস্ফীতিতে ধাক্কা লাগে। তে মানুষের জীবনযাপনের ব্যয় বেড়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে কেনা-কাটাতে। কমে যায় রপ্তানি।
এমন পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনে ইসরাইলের গণহত্যাকে কেন্দ্র করে লোহিত সাগরে উত্তপ্ত আকার ধারণ করে। পণ্য রপ্তানিতে নতুন করে খরচ বাড়তে শুরু করে। এ অবস্থায় এশিয়ার বিকল্প বাজারে রপ্তানি বাড়া অনিবার্য হয়ে পড়ে।
এমন পরিস্থিতিতে আমাদের পরবর্তী লক্ষ্য এশিয়ার বাজার। আমরা সেভাবে কাজ করছি। সরকারও সহায়তা দিচ্ছে। আগামী ১০ বছরে দেখা যাবে ইউরোপ বাজার নির্ভরতা কমে গেছে। বিকল্প বাজার হিসেবে এশিয়ার বাজার বড় হচ্ছে, মনে করেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত রপ্তানিকারক সমিতির (বিকেএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম।
তিনি বাংলানিউজকে বলেন, পশ্চিমের বাজারে যে হারে তৈরি পোশাক রপ্তানি কমেছে, আমাদের হিসাবে আরও বেশি কমার কথা ছিল রাশিয়া-ইউক্রেনে যুদ্ধের ফলে ইউরোপের অর্থনীতিতে সংকট তৈরি হয়েছে। একই অবস্থা তৈরি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে। সেখানে তৈরি পোশাকের চাহিদা কমেছে। এ কারণে সেখানে রপ্তানি কমেছে। এ সময়ে অপ্রচলিত বাজারে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যদিও এসব বাজারে রপ্তানি খুবই কম।
বাংলাদেশের রপ্তানির ৮০ ভাগ হয়ে থাকে ইউরোপ-আমিরকার বাজারে। বাকি ২০ ভাগ রপ্তানি হয়ে থাকে বিশ্বের বাকি দেশগুলোতে। ইউরোপ-আমেরিকার বাজারে রপ্তানি কমলে যে পরিমাণে কমবে তা এশিয়ার বাজারে রপ্তানি বাড়িয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব না। তারপরও আমরা চেষ্টা করছি যাতে নতুন বাজারগুলোতে রপ্তানি বাড়ে। এর ফলও পাচ্ছি বলে মনে করেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহিদুল্লাহ আজিম।
তিনি বলেন, আগে যেমন অস্ট্রেলিয়ায় তিনশ মিলিয়ন রপ্তানি হতো, এখন সেখানে এক বিলিয়নের বেশি রপ্তানি হচ্ছে; ভারত, জাপানেও এক বিলিয়ন ছাড়িয়েছে। মধ্যপ্রাচ্যের বাজারে চেষ্টা করছি। টিকে থাকতে হলে আমাদের এটা করতে হবে, এর বিকল্প নেই।
মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের কারণে ইউরোপ আমেরিকার ক্রেতারা চাইবে টার্কি তা কাছের কোনো দেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানি করতে। কখন কোথায় যুদ্ধ লাগবে বলা যায় না। লোহিত সাগরে যেমন এখন সংকট তৈরি হয়েছে।
চায়না আমাদের বড় মার্কেট হতে পারে। চায়নাকে আমরা বলেছি বিনিয়োগ করতে। সেখানে রপ্তানি যেমন বাড়তে পারে-আবার বিনিয়োগও হতে পারে। পূর্বে বাজার সম্প্রসারণ করতে বাজার বিকেন্দ্রীকরণের পাশাপাশি পণ্য বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে। আমরা সেটা করছি। পণ্যের মানের উন্নতি করছি, যাতে রপ্তানি আরও বাড়ানো যায়। চায়না-ভারতের হাত ধরতে পারলে আমাদের পশ্চিমের বাজার না হলেও চলবে; বলেন এ উদ্যোক্তানেতা।
তবে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রণোদনাসহ নতুন বাজারে রপ্তানি বাড়ানোর জন্য সরকার যে প্রণোদনা চালু ছিল, এটা পর্যায়ক্রমে তুলে নেওয়ার কাজ শুরু করেছে। নতুন বাজারের জন্য প্রদত্ত প্রণোদনা ৪ শতাংশ থেকে কমিয়ে এরই মধ্যে ৩ শতাংশ করা হয়েছে। বিকল্প বাজার বাড়ানোর পথে প্রণোদনা প্রত্যাহার ঝুঁকি তৈরি করবে বলছেন উদ্যোক্তা।
বাংলাদেশ সময় ১৬৩৩ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২, ২০২৪
জেডএ/জেএইচ