ঢাকা, শনিবার, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে প্রসার হচ্ছে কুলের আবাদ

সোলায়মান হাজারী ডালিম, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৪৯ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ৪, ২০২৪
ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে প্রসার হচ্ছে কুলের আবাদ

ফেনী: ফেনীতে বাণিজ্যিকভাবে প্রসার হচ্ছে পুষ্টিকর ফল কুলের আবাদ। ভরা মৌসুমে কাঁচা-পাকা কুলে থোকায় থোকায় ভরে গেছে বাগানের গাছগুলো।

বলসুন্দরি, কাশ্মীরি, ভারত সুন্দরি ও টক-মিষ্টি কুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় জেলায় ছোট-বড় বাগান গড়ে উঠেছে। অল্পসময়ে লাভজনক হওয়ায় কৃষক ও শিক্ষিত বেকার যুবকরা ঝুঁকছেন ফলটি চাষে। চলতি মৌসুমে জেলার বিভিন্ন প্রান্তে নতুন করে কুল বাগান বেড়েছে। কৃষি বিভাগ বলছে, এ মৌসুমে উৎপাদন হবে এক হাজার মেট্রিক টনের বেশি কুল, যার বাজার মূল্য অর্ধকোটি টাকার বেশি।  

ফেনীর শহরতলীর আমিন বাজার এলাকায় তোফায়েল, জাহিদ ও রনি নামে স্থানীয় তিন যুবক মিলে জান্নাত অ্যাগ্রো নামে একটি কৃষি প্রকল্পে সাথি ফসল হিসেবে ছয় একর জমিতে সাত শতাধিক গাছের কুলের বাগান করেছেন।  

গত বছর বাগান থেকে সাড়ে তিন লক্ষাধিক টাকার কুল বিক্রি হয়েছিল। চলতি মৌসুমে গাছ আরও পরিপক্ব হওয়ায় ফলন বেড়েছে। প্রতিগাছে ফলন হয়েছে ২৫ থেকে ৩০ কেজি।  

এ মৌসুমে বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১২ লক্ষাধিক টাকা। এ তিন উদ্যোক্তা জানান, কুলের আবাদ সহজ এবং খরচও কম, যার ফলে সহজেই লাভের মুখ দেখেছেন তারা।  

তারা জানান, কুল আবাদে খরচ তেমন বেশি নেই, একটু যত্নশীল হলে অনায়াসে কুল চাষাবাদ করে লাভবান হওয়া যায়। সাথি ফল হিসেবেও কুল ভালো।  

শুধু এ বাগানটি নয়, জেলার কালিদহের কালিদাস পাহালিয়া নদী তীরের কে পাহালিয়া অ্যাগ্রোতেও ১০ একর জমিতে এক হাজারের বেশি গাছের বাগান করেছেন স্থানীয় কয়েকজন উদ্যোক্তা। বিগত বছর তারা ১০ লক্ষাধিক টাকার কুল বিক্রি করলেও এবার সেই লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৫ লাখ টাকা। বাগানটির উদ্যোক্তারা জানান, নদী পাড়ের খালি জমিকে কাজে লাগিয়ে তারা বাগানটি করেছেন এবং ফলনও মিলছে ভালো।  

এ বাগানটির উদ্যোক্তারা জানান, দুই বছর মিলিয়ে ২৫ লক্ষাধিক টাকার ফলনের আশা করছেন তারা।  

মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তারা জানান, যেসব জমিতে ধান-সবজি হয় না কিংবা পতিত, সেসব জমিকে কাজে লাগিয়ে কুলের বাণিজ্যিক আবাদ করা যায়। এক্ষেত্রে কৃষি বিভাগ পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করে থাকে।  

ফেনী সদরের কালিদহ এলাকার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মো. আবু তৈয়ব বলেন, কৃষকরা পরামর্শসহ নানা রকম সহযোগিতা পান কৃষি বিভাগ থেকে।  

বাগানে এসে নির্ভেজাল পুষ্টিকর বিভিন্ন রং ও স্বাদের কুল পেয়ে উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রাও। উৎপাদিত এসব কুল বাজারে নিতে হয় না। দূরদূরান্ত থেকে ক্রেতারাই বাগানে এসে কিনে নিয়ে যায়।  

ক্রেতারা বলছেন, বাজারের কুলের চাইতে বাগানের এসব কুল তাজা, স্বাদও বেশি।  

জেলার আমিন বাজার ও কালিদহের বড় দুটি বাগান ছাড়াও ফুলগাজীর আনন্দপুর, সদরের কাজীরবাগ, সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়ায় ছোট-বড় আরও বেশ কয়েকটি বাগান রয়েছে। অনেকে বাড়ির আঙিনায়ও লাগিয়েছে উন্নত জাতের এসব কুলের গাছ।

জেলার কৃষি সম্প্রসারণ অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০২২-২৩ মৌসুমে জেলায় কুলের আবাদ হয়েছিল ৮৬ হেক্টর জমিতে। তখন ফলন এসেছিল ৯৩৮ মেট্রিক টন।  

চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুমে ৯০ হেক্টর জমিতে কুলের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক হাজার ৮০ মেট্রিক টন।  

প্রতিকেজি কুল বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১৫০ টাকায়। লক্ষ্যমাত্রার আলোকে উৎপাদন হলে বাজার দাঁড়াবে প্রায় অর্ধকোটি টাকার বেশি।  

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক মো. জগলুল হায়দার বলেন, ফেনীর মাটি ও সামগ্রিক পরিবেশ কুলের আবাদের জন্য ইতিবাচক। এ জেলায় কুলের আবাদ আরও বেশি হতে পারে। এটি এ জনপদের জন্য আশার আলো।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৪৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২৪
এসএইচডি/আরবি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।