দিনাজপুর: দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দরের পর এবার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) অর্থায়নে শিগগিরই বিরল স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানি শুরু হতে যাচ্ছে।
স্থলবন্দর বাস্তবায়ন করতে নিজস্ব প্রতিনিধির মাধ্যমে ভারতের সঙ্গেও আলোচনা করে এ ব্যাপারে পদক্ষেপ নেবে এডিবি।
রোববার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে বিরল স্থলবন্দরের রেলপথ ও সড়কপথ পরিদর্শন এবং ইমিগ্রেশন, কাস্টমস, পুলিশ ও স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে সাংবাদিকদের এসব কথা জানিয়েছে এডিবির প্রতিনিধি দল।
বাংলাদেশের স্থলবন্দরগুলোর মধ্যে দিনাজপুরের বিরলই একমাত্র স্থলবন্দর, যা ব্যবহার করে একই সঙ্গে রেল ও সড়কপথে বাংলাদেশ থেকে ভারত, ভুটান ও নেপালে পণ্য আমদানি-রপ্তানি করা যাবে।
স্থলবন্দরের সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের জন্য এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (এডিবি) পরামর্শক দলটি এ পরিদর্শন করে।
বিকেল পৌনে ৫টায় এডিবির প্রতিনিধি দল স্থলবন্দরের সড়কপথ পরিদর্শন করে। এর আগে তারা রেলপথ পরিদর্শন করে। এসময় ম্যানিলার এডিবির প্রধান পরিবহন বিশেষজ্ঞ মি. ইয়াসুশি তানাকা, এডিবি বাংলাদেশের সিনিয়র পরিবহন বিশেষজ্ঞ মি. অমৃতা রাও, প্রজেক্ট ম্যানেজার কাজী মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিম, প্রকল্প পরিচালক ড. ডেভিড লুপটন, ডেপুটি টিম লিডার নাসিরউদ্দিন আহমেদ, জ্যান টমসিক, হেলেন এলিজাবেথ ম্যাকনাট, বিরল স্থলবন্দর লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন, পরিচালক আজিজুল ইকবাল চৌধুরীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে এডিবির প্রজেক্ট ম্যানেজার কাজী মোহাম্মদ আশরাফুল মুনিম বলেন, আমাদের এখানে আসার মূল উদ্দেশ্য ছিল, সবার সঙ্গে আলোচনা করা। আমরা একমত হতে পেরেছি যে বিরল স্থলবন্দর হবে বাংলাদেশের একটি মডেল স্থলবন্দর। স্থলবন্দর, কাস্টমস, ইমিগ্রেশন সব কিছুই এক ছাতার নিচে রয়েছে। আশা করছি, শিগগিরই এ স্থলবন্দরের কার্যক্রম শুরু হবে।
কথা হলে বিরল স্থলবন্দর লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শহীদুর রহমান পাটোয়ারী মোহন বলেন, এডিবি, কাস্টমস, পুলিশের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। স্থলবন্দর বাস্তবায়নের জন্য এডিবি অর্থায়নের ইচ্ছা প্রকাশ করেছে। প্রত্যাশা করা হচ্ছে, শিগগিরই ইমিগ্রেশন চালু হবে। রেলপথ ও সড়কপথ চালুর ব্যাপারে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। যাত্রী যাতায়াত ও মালামাল আমদানি-রপ্তানির ব্যবস্থা করতে এডিবি ইচ্ছা পোষণ করেছে। এ স্থলবন্দর দিয়ে যাতে যাত্রী চলাচল করতে পারে, সেজন্য অচিরেই ভারতীয় হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনা করে পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
বন্দরের বাংলাদেশ অংশে রয়েছে দিনাজপুরের বিরল উপজেলা ও ভারত অংশে রয়েছে উত্তর দিনাজপুরের রাধিকাপুর। ব্রিটিশ আমল, স্বাধীনতার পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে দিনাজপুরের বিরলের এ অংশ দিয়ে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম চললেও এখানে পূর্ণাঙ্গ স্থলবন্দর ছিল না। স্থলবন্দর না থাকায় রেলওয়ের মাধ্যমে আসা পণ্য খালাস হতো পার্বতীপুর কিংবা অন্যান্য স্থানে। রেলওয়ে ও সড়কপথে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারত, নেপাল ও ভুটানের বাণিজ্যিক লেনদেনের সম্ভাবনা দেখে ২০০৫ সালে বিরল স্থলবন্দর স্থাপনের কার্যক্রম শুরু হয়। ২০০৬ সালে ভারত সরকার সীমান্তের ওপারে রাধিকাপুর পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথকে ব্রডগেজে রূপান্তর করে। কিন্তু বিরল স্থলবন্দর থেকে পার্বতীপুর পর্যন্ত ব্রডগেজ রেলপথ না থাকায় ওই বছরই এ স্থলবন্দর দিয়ে ভারত, নেপাল ও ভুটানের সঙ্গে বাণিজ্যিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপরই বন্ধ হয়ে যায় স্থলবন্দরের কার্যক্রম। ২০১১ সালে পার্বতীপুর থেকে বিরল সীমান্ত পর্যন্ত মিটারগেজ রেললাইনকে ব্রডগেজে রূপান্তর করা হয়। ২০১৭ সালে ওই ব্রডগেজ রেলপথ দিয়ে বাণিজ্য শুরু হয়। বর্তমানে রেলপথ দিয়ে তেলবাহী ট্রেন বাংলাদেশে প্রবেশ করছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪২১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ১৯, ২০২৪
এসআই