ঢাকা: বাংলাদেশ ও এর বাইরে একটি টেকসই এবং প্রতিযোগিতামূলক পোশাক শিল্পের জন্য নৈতিক, ন্যায়সংগত এবং পরিবেশবান্ধব শিল্পের ওপর দৃষ্টি দেওয়া দরকার বলে মনে করেন সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম-২০২৪ এর অংশগ্রহণকারী বক্তারা।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জ, আইএলও-আইএফসি বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশের সাথে অংশীদারিত্বে এবং জিআইজেড এবং ওয়াটারএইডের সহযোগিতায় মঙ্গলবার (৫ মার্চ) সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরাম-সাফ-২০২৪- এর আয়োজন করে।
হোটেল রেডিসনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে সরকারি কর্মকর্তা, শিল্প নেতারা এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অংশীজনরা আরও নৈতিক ও পরিবেশবান্ধব পোশাক শিল্পের প্রতি জোর দেন।
বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক হিসেবে এই খাতে ৪০ লাখেরও বেশি লোক কাজ করেন। বাংলাদেশ বিশ্বব্যাপী পোশাক সরবরাহ শৃঙ্খলে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সাফ ২০২৪ এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এই খাতের সব কর্মকর্তারা এক হয়ে প্রয়োজনীয় বিষয়গুলোতে আলোচনা করে সমাধানের পথকে ত্বরান্বিত করতে পারেন। এই ফোরাম পোশাক খাতের সেরা উদ্যোগগুলো এগিয়ে নিতে উৎসাহিত করেছে। পোশাকখাতে আরও টেকসই ভবিষ্যতের দিকে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেএই ফোরাম।
উদ্বোধনী বক্তব্যে বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা এবং ক্রমাগত উদ্ভাবন ও টেকসই চর্চার গুরুত্বের ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ও উন্নয়নে পোশাক শিল্প গুরুত্বপূর্ণ। এই গতি বজায় রাখার জন্য, আমাদের অবশ্যই স্থায়িত্ব এবং নৈতিক অনুশীলনকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
টেকসই প্রবৃদ্ধি অর্জনে উন্নয়ন সহযোগিতার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী সদস্য (অতিরিক্ত সচিব) অভিজিৎ চৌধুরী বলেন, পোশাক শিল্পের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা এবং অর্থবহ পরিবর্তনের জন্য সরকার, শিল্প এবং আন্তর্জাতিক অংশীদারদের মধ্যে সহযোগিতা অপরিহার্য।
আন্তর্জাতিক সহযোগিতার ভূমিকা উল্লেখ করে বাংলাদেশে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত এবং প্রতিনিধিদলের প্রধান চার্লস হোয়াইটলি, টেকসই অবস্থার দিকে বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করার জন্য ইইউর প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন।
তিনি বলেন, উন্নয়ন সহযোগিতা পোশাক শিল্পের মধ্যে নৈতিক অনুশীলন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং সামাজিক অন্তর্ভুক্তি প্রচারে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
সাসটেইনেবল অ্যাপারেল ফোরামে মূলত শিল্পের মধ্যে শোভন কর্মপরিবেশের প্রসার, সাফল্য এবং প্রতিযোগিতা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি রয়েছে।
অনুষ্ঠানে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পৌটিআইনেন সব কর্মীদের জন্য নিরাপদ এবং মর্যাদাপূর্ণ কাজের পরিবেশ তৈরির গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন।
তিনি বলেন, টেকসই উন্নয়নের জন্য শোভন কর্মপরিবেশ মৌলিক অংশ। ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কাজের পরিবেশ এবং কর্মজীবনে অগ্রগতির সুযোগগুলোকে অগ্রাধিকার দিয়ে, আমরা শ্রমিকদের মঙ্গল এবং শিল্পের দীর্ঘমেয়াদি সাফল্য নিশ্চিত করতে পারি। যেটি টেকসই ব্যবসাও নিশ্চিত করে।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) ভাইস প্রেসিডেন্ট মিরান আলী বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতামূলক থাকার জন্য টেকসই অবস্থার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন।
তিনি বলেন, টেকসই অবস্থা কেবল একটি নৈতিক বাধ্যবাধকতাই নয়, এটি ব্যবসায়িক দিক দিয়েও বাধ্যতামূলক। পরিবেশবান্ধব অনুশীলন এবং নৈতিক মানগুলো নেওয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের প্রতিযোগিতা বাড়াতে পারি এবং শিল্পের জন্য একটি সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে পারি।
ন্যাশনাল কো-অর্ডিনেশন কমিটি ফর ওয়ার্কার্স এডুকেশনের (এনসিসিডব্লিউই) সভাপতি মেসবাহউদ্দিন আহমেদ বৃহত্তর ক্ষমতায়ন এবং প্রতিনিধিত্বের আহ্বান জানিয়ে বলেন, শ্রমিকরা পোশাক শিল্পের মেরুদণ্ড। তাদের চাওয়া পাওয়া শোনা এবং তাদের অধিকার সুরক্ষিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ টেকসই পোশাক শিল্পের জন্য।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল বাংলাদেশ কাউন্সিলের সভাপতি আমিরুল হক আমিন বলেন, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সম্পৃক্ততার সাথে সরকার, মালিক ও শ্রমিকদের ইতিবাচক ভূমিকা পোশাক শিল্পের মধ্যে সম্প্রীতি ও টেকসই বৃদ্ধির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, সহযোগিতা এবং উদ্ভাবনের মাধ্যমে, আমরা এমন একটি ভবিষ্যৎ গঠন করতে চাই যেখানে বাংলাদেশের টেকসই পোশাক শিল্প এবং প্রতিযোগিতা একসঙ্গে কাজ করে।
সকাল থেকে শুরু হওয়া সাফ ২০২৪ এর ভিশন বাংলাদেশ ও পোশাক খাতের টেকসই উন্নয়নবিষয়ক আলোচনা, উপস্থাপনা এবং পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনসহ নয়টি অধিবেশন অন্তর্ভুক্ত ছিল। যেখানে পোশাকখাতে শোভন কর্মপরিবেশ এবং জীবিকা, নারী কর্মীদের ভূমিকা এবং তত্ত্বাবধায়ক অনুশীলনের দৃষ্টিকোণ, টেকসই উদ্ভাবনে ভবিষ্যতের সুযোগ; পোশাক খাতে পানির টেকসই ব্যবহার ও চ্যালেঞ্জ: সুযোগ এবং এগিয়ে যাওয়ার উপায়, শক্তির স্থায়িত্ব: বাংলাদেশে পোশাক ও বস্ত্র উৎপাদনের জন্য পরিবর্তনের পথপ্রদর্শক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। আলোচনা হয় পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে।
দিনব্যাপী ফোরামে প্রায় ৫শ জন দেশি ও বিদেশি প্রতিনিধি অংশ নেন। তারা আইএলও বেটার ওয়ার্ক বাংলাদেশ প্রোগ্রামের ১০টি বুথের মাধ্যমে পোশাক শিল্পের ভালো চর্চাগুলোর প্রদর্শন দেখেন। টেকসই উন্নয়ন এর মাধ্যমে এই ফোরাম বাংলাদেশ এবং তার বাইরে সামাজিক ন্যায়বিচার এবং পরিবেশগতভাবে টেকসই পোশাক শিল্পের যাত্রাকে আরও বেগবান করার মঞ্চ তৈরি করেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭০৮ ঘণ্টা, মার্চ ০৫, ২০২৪/আপডেট সময়: ১৭২৭ ঘণ্টা
টিআর/এসআইএ/এএটি