ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

যে কারণে সিরাজগঞ্জে চালের দাম ১ মাসেই বাড়ল ৮ টাকা 

স্বপন চন্দ্র দাস, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৫৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
যে কারণে সিরাজগঞ্জে চালের দাম ১ মাসেই বাড়ল ৮ টাকা 

সিরাজগঞ্জ: সিরাজগঞ্জে চালের দাম বেড়েই চলেছে। গত এক  মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি চিকন চালের দাম ৮ টাকা ও মোটা চালের দাম বেড়েছে ৬-৭ টাকা।

চড়া দামের ফলে নিম্ন আয়ের শ্রমজীবী মানুষ বিপাকে পড়েছেন।  

খুচরা ও পাইকারি চাল বিক্রেতাদের কেনাবেচা ও আয় কমে গেছে।  

রোববার (২২ ডিসেম্বর) সিরাজগঞ্জ শহরের বড় বাজার চালপট্টিতে গিয়ে জানা যায়, ৫০ কেজি বস্তার কাটারিভোগ চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার টাকায়। অর্থাৎ প্রতি কেজি চালের দাম পড়ছে ৮০ টাকা। গত নভেম্বর মাসে যার মূল্য ছিল প্রতি বস্তা ৩ হাজার ৬০০ টাকা অর্থাৎ প্রতি কেজি ৭২ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে কাটারিভোগ চালের দাম বস্তায় ৪০০ টাকা আর কেজিতে বেড়েছে ৮ টাকা।  

অপরদিকে ২৮ চালের খুচরা মূল্য প্রতি বস্তা ৩৫০০ টাকা, কেজি ৭০ টাকা। নভেম্বর মাসে যেটার বস্তা ছিল ৩২০০ টাকা ও কেজির মূল্য ছিল ৬৪ টাকা। মাসের ব্যবধানে বস্তায় ৩০০ ও কেজিতে ৬ টাকা বেড়েছে। এছাড়া নাজির শাইল, ২৯, স্বর্ণা, পাইজাম চালের দাম কেজি প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।  

কথা হয় খুচরা বিক্রেতা আল-আমিন মুন্সীর সঙ্গে। তিনি বলেন, দুই-তিন মাস ধরেই হু হু করে বাড়ছে চালের দাম। গত এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজি ৬ থেকে ৮ টাকা বেড়েছে।  

খোকন চন্দ্র শীল, আনোয়ার হোসেন, আব্দুল হামিদসহ বেশ কয়েকজন খুচরা বিক্রেতা বলেন, চালের দাম বাড়ার কারণে যে সব গ্রাহক ১০ কেজি চাল নিতেন, বাধ্য হয়ে তাদের ৬/৭ কেজি নিতে হচ্ছে। আমাদের বেচাকেনাও অনেক কমে গেছে।  

চাল কিনতে আসা রিকশাচালক হামিদুল ইসলাম বলেন, সপ্তাহে সপ্তাহে চালের দাম বাড়ায় আমরা বিপাকে পড়েছি। আগে যে টাকায় ২০ কেজি চাল কিনেছি, এখন তা দিয়ে ১৭ কেজি চাল কেনা যায়।  

পাইকারি বিক্রেতা আশরাফ ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আশরাফুল ইসলাম বলেন, আমরা বগুড়ার শেরপুরের মিল থেকে চাল আমদানি করি। দুই মাস আগে কাটারিভোগ ৩ হাজার ৪০০ টাকা বস্তায় কিনে ৩ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি করতাম। এখন চালকল থেকেই প্রতি বস্তায় ৩ হাজার ৮০০ টাকা দাম ধরা হচ্ছে। আমরা ৪ হাজার টাকায় বিক্রি করছি।  

অপর পাইকারি বিক্রেতা শামসুল আলম স্বপন ও নরেন্দ্রনাথ সাহা বলেন, এক মাসের মধ্যে প্রতি কেজি মোট চালে ৫/৬ টাকা এবং চিকন চালে ৭/৮ টাকা বেড়েছে। চালের দাম বাড়ার কারণে আমাদের আয়ও কমে গেছে। আগে যেখানে ২ হাজার টাকা পুঁজি খাটিয়ে ২০ টাকা আয় হতো। এখন ৪ হাজার টাকা খাটিয়ে ২০ টাকাই আয় হয়।  

এদিকে চালকলে পুরোনো চালের সঙ্গে নতুন চাল মিশিয়ে বস্তায় বিক্রির অভিযোগ করেন অনেক ব্যবসায়ী। কৃষ্ণ কুমার ঘোষসহ একাধিক পাইকারি বিক্রেতা বলেন, মিলে পুরোনো ধানের সঙ্গে নতুন ধান মিশিয়ে চাল তৈরি করা হচ্ছে। বাধ্য হয়ে আমাদের ওই চাল আনতে হচ্ছে।  

চালের দাম বাড়ার বিষয়ে মিল মালিকদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, ধানের দাম ব্যাপক বেড়েছে। সে তুলনায় চালের দাম বাড়ানো হয়নি। পুরোনো চালের সঙ্গে নতুন চাল মিশিয়ে বিক্রির বিষয়টি তারা অস্বীকার করেন।  

টাঙ্গাইলের গোপালপুর এলাকার একতা ফুড প্রোডাক্টের স্বত্বাধিকারী রমিজুল ইসলাম বলেন, এক মাসে আগে ২৯ ধানের দাম প্রতি মণ ১৫০০ টাকা ছিল। যেটা এখন হয়েছে ১৬৮০ টাকা। ধানের দামের হিসেবে প্রতি বস্তা চাল ৩৫০০ টাকায় বিক্রি করার কথা। কিন্তু আমরা ২০০ টাকা লোকসান দিয়ে ৩৩০০ টাকা বস্তা বিক্রি করছি।  

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শেরুয়া বটতলা এলাকার লাকী সেভেন চালকলের মালিক মিন্টু সেখ বলেন, ধানের দাম বাড়ার কারণেই চালের দাম বাড়ানো হয়েছে। এক মাস আগে কাটারিভোগ ধান মনপ্রতি ১৭৫০ টাকা ছিল। এখন ১৯০০ টাকা।

এ ব্যাপারে জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ মো. হারুন-অর-রশিদ বলেন, সরকার মোটা চালের মূল্য নির্ধারণ করেছে ৪৭ টাকা কেজি। তবে ওই দামে বাজারে এখন চাল পাওয়া যায় না। বিষয়টি দেখাশোনার দায়িত্ব জেলা বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের।

সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক ও বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্সের সভাপতি মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম বলেন, আমাদের বাজার মনিটরিং কমিটি রয়েছে। তারা বাজারে গেছেন। চালের মূল্য যদি অস্বাভাবিক হারে বেড়ে থাকে, ব্যবস্থা নেব।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬৫২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।