লক্ষ্মীপুর: লক্ষ্মীপুরের বাজারগুলোতে সরকার নির্ধারিত দামে বেশিরভাগ পণ্য বিক্রি হচ্ছে না।
পাইকারি পর্যায়ে দাম বৃদ্ধি থাকায় কৃষি বিপণন অধিদপ্তর থেকে বেঁধে দেওয়া মূল্যে পণ্য সামগ্রী বিক্রি করতে পারছেন না দোকানিরা।
ফলে ভোক্তাদের ব্যবসায়ীদের নির্ধারিত দামেই পণ্য কিনতে হচ্ছে।
বিশেষ করে মাছ, মুরগি, গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। পেঁয়াজ ছাড়া অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদি পণ্য বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।
বিক্রেতারা জানায়, পাইকারি ক্রয় মূল্য হিসেবে তারা বিক্রয় মূল্য নির্ধারণ করেন। ফলে সরকারের বেঁধে দেওয়া দামে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না। ওই দামে তারা কিনতেও পারেন না।
পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে পাইকারি পর্যায়ে বড় বড় ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটকেই দায়ী করছে ক্রেতা এবং বিক্রেতারা।
তাদের মতে, পণ্যের মূল্য নিযন্ত্রণে পাইকারি পর্যায়ের সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তাহলে দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে।
লক্ষ্মীপুর শহর মাংস বাজার, সদর উপজেলার জকসিন ও মান্দারী বাজারে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায়। ছাগলের মাংসের কেজি ১ হাজার ১০০ টাকা। যদিও সরকার মূল্য নির্ধারণ করেছে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৬৬৫ টাকা, ছাগলের কেজি ১ হাজার ৪ টাকা।
জকসিন বাজারের মাংস ব্যবসায়ী তোফায়েল আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, খামারি বা ব্যাপারীদের কাছ থেকে বেশি দামে গরু কিনতে হয়। ওই গরু জবাই করে ৯০০ টাকা (হাঁড় ছাড়া) কেজি দরে বিক্রি করেও আমাদের পোষায় না।
তিনি বলেন, প্রয়োজনে ব্যবসা বন্ধ করে দিতে হবে, তারপরও সরকারি দামে কোনোভাবেই গরুর মাংস বিক্রি করা সম্ভব হবে না।
একই কথা জানিয়ে জেলা শহরের মাংস ব্যবসায়ী হেলাল উদ্দিন বলেন, সরকার মাংসের নির্দিষ্ট একটা মূল্য নির্ধারণ করে দিলেও ওই দামে আমরা বিক্রি করতে পারি না। ক্রেতারা এসে সরকারি দামে কিনতে চায়। এনিয়ে ক্রেতা-বিক্রেতার বাগবিতণ্ডাও হয়৷ তাই বেশিরভাগ দোকানি এখন মাংসের দোকান বন্ধ রেখেছেন।
লক্ষ্মীপুর শহরের মুরগির বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতিকেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২১০ টাকায়। সোনালী ৩১০, লেয়ার মুরগি কেজি ৩৫০ এবং কক ৩০০ টাকা কেজি ধরে। কিন্তু সরকারি নির্ধারিত মূল্যে ব্রয়লারের দাম ধরা হয়েছে ১৭৫ টাকা ৩০ পয়সা, সোনালী ২৬২ টাকা।
জানতে চাইলে বাজারের কয়েকজন মুরগি ব্যবসায়ী বাংলানিউজকে বলেন, খামার থেকেই বাড়তি দামে তাদেরকে মুরগি কিনতে হয়। সে হিসেবে খুচরা পর্যায়ে তারা দাম নির্ধারণ করেন। প্রতিদিন মুরগি এবং ডিমের দাম একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ হয়। দাম কমাতে হলে সেই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে।
এদিকে বাজারে সকল ধরনের মাছের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। নদীতে মাছ শিকার বন্ধ থাকায় দেশি মাছের ওপর চাপ পড়েছে। ফলে দামও বেশি। বাজারে নদীর মাছ থাকলে দাম সহনীয় পর্যায়ে থাকতো বলে জানায় মাছ ব্যবসায়ীরা।
রমজানের শুরুতে সবজি মূল্য ঊর্ধ্বগতিতে থাকলেও এখন অনেকটা নিম্নমুখী। কিছুটা স্বস্তি মিলেছে সবজি বাজারে।
অন্যদিকে বাজারগুলোতে দেশি এবং আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম সহনীয় পর্যায়ে বিক্রি হতে দেখা গেছে। প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৫ টাকা করে। আমদানিকৃত পেঁয়াজ ৭০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে। তবে আলুর দাম কেজিপ্রতি ৩৩ থেকে ৩৫ টাকা, ছোলাবুট ১০৫ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যা সরকারি নির্ধারিত মূল্যের থেকেও বেশি।
জেলা শহরের মুদি ব্যবসায়ী রিপন পাল, জকসিন বাজারের ব্যবসায়ী সফিকুল ইসলাম মান্দারী বাজারের ব্যবসায়ী সোহাগ বলেন, পাইকারি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে দাম নির্ধারণ করে দেয়। তাদের কাছ থেকে আমরা যে দামে পণ্য কিনি, তার সাথে সামান্য লাভ যোগ করেই খুচরা পর্যায়ে বিক্রি করি।
তারা বলেন, প্রশাসন শুধু খুচরা বিক্রেতার দোকানে অভিযান চালায়, কিন্তু বড় বড় পাইকারি দোকানে অভিযান চালায় না। দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে হলে বড় ব্যবসায়ীদের অভিযানের আওতায় আনতে হবে।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মনির হোসেন বাংলানিউজকে বলেন, বাজার দরের বিষয়ে ডিজি মহোদয়ের সাথে জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের যোগাযোগ চলছে। নতুন করে আবার বাজার দর নির্ধারণ করা হতে পারে। যেটা ভোক্তা পর্যায়ে সহনীয় হবে। এছাড়া এখন জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে কর্মকর্তাদের সাথে সমন্বয় করে বাজার মনিটরিং করা হচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৫২ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০২৪
এসএএইচ