ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

আর্থিক খাতে দুষ্টের পালন ও শিষ্টের দমন চলছে: সালেহ উদ্দিন আহমেদ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯২৬ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৪
আর্থিক খাতে দুষ্টের পালন ও শিষ্টের দমন চলছে: সালেহ উদ্দিন আহমেদ

ঢাকা: আর্থিক খাতে দুষ্টের পালন ও শিষ্টের দমন চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ।

তিনি বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট ও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে ২০১৪ সাল-পরবর্তী সরকার ৫০০ কোটি টাকার ওপরে ঋণকে ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ঋণ পুনর্গঠনের সুযোগ দিয়েছিল।

এর মাধ্যমে আর্থিক খাতে দুষ্টের পালন ও শিষ্টের দমন করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংকে সত্যি মেধাবী মানুষ আছে! ৫০০ কোটি টাকার বড় ঋণকে বিশেষ সুবিধায় পুনঃতফসিলিকরণের নাম দিয়েছিলেন ঋণঃপুনর্গঠন। বিশেষ সুবিধায় দুষ্টের পালন এখনো করেই যাচ্ছেন তারা।

বৃহস্পতিবার (২৩ মে) রাজধানীর হোটেল লেকশোরে ‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরের জন্য সামনে কী আছে’ শীর্ষক সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সালেহ উদ্দিন আহমেদ এ কথা বলেন।  

সাবেক গভর্নর বলেন, সুদ নির্ধারণে গন্তব্য-স্টেশন ঠিক না করে বাংলাদেশ ব্যাংক টিউনিং ঠিক  করছে। এটা করে কোনো লাভ হবে না। এখন ব্যাংকের মালিক, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক একাকার হয়ে গেছেন। এটা পৃথিবীর কোথাও নেই। এখন সময় এসেছে ব্যাংকের মালিকানা ডাইভার্ট (পরিবর্তন) করার।

নীতিগ্রহণে বাংলদেশ ব্যাংক ভুল অবস্থানে আছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ঘন ঘন নীতির পরিবর্তন করা হচ্ছে। দুই-তিন বছর থেকে বৈদেশিক মুদ্রা চাপে আছে, আবার ১২ বিলিয়ন ডলার বিক্রি করে এখন মাথায় হাত। আশ-পাশের অনেক দেশ তাদের মুদ্রা পরিস্থিতি সামাল দিয়েছে। আমরা এক ডলারের দাম ৮৪ টাকা ধরে রাখলাম। এখন একদিনে সাত টাকা অবমূল্যায়ন করা হলো। এতে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সঠিক সময়ে সঠিক নিদ্ধান্ত না নিলে এমনই হবে। এটা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ব্যর্থতা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের স্বায়ত্তশাসন যতটুকু রয়েছে তা কাজে লাগানো হচ্ছে না বলেও মনে করেন এই সাবেক গভর্নর। তিনি বলেন, আমার সময়ে ব্যাংক অনুমোদনের কথা বলা হয়েছে, আমি দেইনি। কারণ প্রয়োজন ছিল না। স্বায়ত্তশাসন একটি অনুশীলনের ব্যাপার।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক অনেকটা সমবায় সমিতির মতো হয়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও ব্যবসায়ীরা এখন যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নেন। এখন বিজনেস মডেল চেঞ্জ হয়ে গেছে, যাকে আমরা খেলাপি ঋণভিত্তিক মডেল বলতে পারি। ঋণ নিয়ে দেবেন না (খেলাপি করা), এটাও একটি মডেল।

এ অর্থনীতিবিদ আক্ষেপ করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিলাসী শহর মায়ামিতে ১০ জন গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন। এখন আমাদের দেশের এমডিরা চলে যাবেন আমেরিকায়। এখন বাংলাদেশ ব্যাংকও এক্সপেনসিভ ওয়েতে (ব্যয়বহুল কায়দায়) প্রশিক্ষণ নিচ্ছে। ট্রেজারি ম্যানেজমেন্ট থেকে ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ পাঠানো হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক এখন এসব অহরহ করছে।  

সাবেক গভর্নর বলেন, আমার সময়ে আমি এটা করিনি। আমি পাঁচজনকে ট্রেনিংয়ের জন্য পাঠিয়েছি, তারা দেশে এসে ৩০ জনকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে।

দেশের উন্নয়নে তিনি শিল্পায়নের তাগিদ দেন। সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে শিল্পায়নে জোর দিতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে রিফাইন্যান্স করে মানুষের কাছে টাকা পৌঁছে দিতে হবে। এই সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি দিয়ে শিল্পায়ন হবে না, ক্রলিং প্যাক দিয়ে হবে না, সুদ হার বাড়িয়ে হবে না।

সিপিডির বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন সংসদে বিরোধী দলীয় উপনেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান প্রমুখ। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন।

বাংলাদেশ সময়: ১৯০৭ ঘণ্টা, মে ২৩, ২০২৪
জেডএ/এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।