ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

এফবিসিসিআইয়ের সব পদে সরাসরি নির্বাচনসহ কোটা প্রথা বাতিল দাবি 

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪
এফবিসিসিআইয়ের সব পদে সরাসরি নির্বাচনসহ কোটা প্রথা বাতিল দাবি 

ঢাকা: ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন দ্যা ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সব পদে সরাসরি নির্বাচনসহ কোটা বা মনোনীত প্রথা বাতিলের দাবি জানিয়েছেন সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ।  

একই সঙ্গে আমরা সংস্কার চাই, প্রথমে সংস্কার করতে হবে পরে নির্বাচন দিতে হবে।

পরপর দুই বারের বেশি পরিচালক নির্বাচন করতে পারবে না।  

শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) রাতে মিন্টু রোডস্থ ফজিলাতুন্নেছা কনভেনশন হলে সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদ আয়োজিত আগামীর এফবিসিসিআই শীর্ষক মতবিনিময় সভায় এ দাবি জানানো হয়।  

মতবিনিময় সভায় সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন রাজেশ, এফবিসিসিআই সাবেক পরিচালক হাফেজ হাজী মোহাম্মদ এনায়েতুল্লাহ, হাজী মোহাম্মদ আবুল হোসেন, আমির হোসেন, মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন, মাহবুবুল আলম রুনু, মেহেদী আলী, আনোয়ার হোসেন, টোয়াব সভাপতি রাফিউজ্জামান, বাংলাদেশ ইলেকট্রিক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শাহাদাত হোসেন ভুঁইয়া, বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।  

মতবিনিময় সভায় ব্যবসায়ীরা বলেন, এফবিসিসিআই সব সংগঠনের প্রাণ কেন্দ্র হবে। কোনো উৎসবের কেন্দ্র বিন্দুতে পরিণত হবে না। আমরা সংস্কার চাই, প্রথমে সংস্কার করতে হবে পরে নির্বাচন দিতে হবে। নমিনেটেড প্রথা বাতিল করতে হবে, দুইবার নির্বাচিত হওয়ার পর এক বছর বিরতি দিতে হবে। এসএমই খাতকে সম্পৃক্ত করতে হবে।

তারা আরও বলেন, দুই বছর পর কেউ নির্বাচন করতে পারবে না। নতুন নেতৃত্ব আসবে। তাহলে এফবিসিসিআইয়ে গণতন্ত্রের চর্চা হবে। জিবি মেম্বারদের ভোটে এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হতে হবে। এফবিসিসিআইয়ে জিবি মেম্বারদের মূল্যায়ন করা হয় না। তাদের মূল্যায়ন করতে হবে। কারণ এফবিসিসিআই হবে জিবি মেম্বারদের আশ্রয়ের জায়গা। নতুন ভবনে অ্যাসোসিয়েশনের অফিস হবে।  

সম্মিলিত ব্যবসায়ী পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নিজাম উদ্দিন রাজেশ বলেন, আজকের এই আয়োজনের মূল বিষয়বস্তু আগামীর এবিসিসিআইয়ের। আপনারা সবাই জানেন বর্তমানে ব্যবসা-বাণিজ্যে মন্দাভাব যাচ্ছে। ব্যাংক থেকে আমাদের ঋণ নিতে অনেক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। পরিবারের সদস্যদের ফিঙ্গার দিতে হয়। অথচ বড় ব্যবসায়ীদের ক্ষেত্রে আগে এইসব মানা হয় নাই। সহজ শর্তে তাদের ঋণ দিত। আমাদের এনবিআর, কাস্টমস থেকে হয়রানির স্বীকার হতে হয়। ভ্যাট, ট্যাক্স, কাস্টমস, এসএসকোডের নামে হয়রানি থেকে মুক্তি পেতে চাই। সাধারণ ব্যবসায়ীদের কথা বলবেন না এরকম ব্যবসায়ী সংগঠন আমরা চাই না।  

তিনি বলেন, আমরা শক্তিশালী ও জবাবদিহিতামূলক এফবিসিসিআই চাই। গত নির্বাচনে প্যানেল দিয়ে আমরা বিভিন্নভাবে হয়রানির শিকার হয়েছি। আমরা যৌক্তিক সংস্কার চাই। ৪ কোটি ব্যবসায়ীর সঙ্গে আমরা এফবিসিসিয়ের সংস্কার চাই। আমরা যৌক্তিক সংস্কার চাই। কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্বার্থে নয়৷ 

এফবিসিসিআইয়ের সাবেক পরিচালক আনোয়ার হোসেন বলেন, আমাদের ওপর গত ১৬ বছর যে চাপ ছিল, সেজন্য আমাদের হাড় কালো হয়ে গেছে। দেশের অর্থনীতিতে এক শতাংশ অবদান রাখে এফবিসিসিআই। নিজেদের স্বার্থের জন্য নির্বাচিত করেছেন। যোগ্য ব্যবসায়ীদের প্রতিনিধিদের এখানে আসা উচিত। আমরা আবার জেগে উঠবো। কোনো না কোনোভাবে আমরা এগিয়ে যাবো৷ দুর্নীতিবাজ রাজনীতি ও দুষ্ঠু আমলাদের কারণে আমরা পিছিয়ে গেছি। সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ দিতে হবে।  

সাবেক পরিচালক মো. জালাল উদ্দীন বলেন, গত ১৫ বছর স্বৈরাচার সরকারের দোসর যারা তাদের পায়ের আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে। আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। আমরা তাদের আর দেখতে চাই না। যারা জুলাই আগস্টে শহীদ হয়েছে, সেই রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে যারা তখনকার প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলো ব্যবস্থা নিতে। তারা অস্ত্র কেনার টাকাও দিয়েছিলো বলে জানা গেছে। সেই সভায় কারা কারা গিয়েছিল তাদের প্রত্যেকের নামের তালিকা রয়েছে। স্বৈরাচার সরকারকে যেসব ব্যবসায়ী সেদিন সহায়তা দিতে চেয়েছিল তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা হবে। কেউ রেহাই পাবেন না।

তিনি বলেন, আমরা আর অনির্বাচিত কোনো পরিচালক এফবিসিসিআইতে দেখতে চাই না।  আমাদের সাড়ে ৪ কোটি ব্যবসায়ীদের সংগঠন হলেও গত ১৫ বছর এফবিআইয়ের শুধু ৫শ থেকে ৭শ ব্যবসায়ী প্রতিনিধিত্ব করেছেন। এর ফলে গত ১৫ বছর এফবিসিসিআইয়ের তোষামোদের জন্য ৫শ থেকে ৭শ ব্যবসায়ী দেশ থেকে লাখ লাখ কোটি টাকা পাচার করতে পেরেছে। আমাদের দাবি হবে সেই পাচার হওয়া টাকা আমাদের দেশে ফেরত আনতে হবে। এ বিষয়ে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সংগঠন সব ব্যবসায়ীদের সেটা  ফেরত দিতে হবে। স্বৈরাচার সরকারের কোনো সুবিধাভোগীকে আর এফবিসিসিআইতে দেখতে চাই না।  

সাবেক পরিচালক মেহেদী আলী বলেন, আমরা এক দরবেশের গুহা থেকে বের হয়েছি আরেক দরবেশের গুহায় ঢুকতে চাই না। বিদেশ ভ্রমণের নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে।  

আমরা ব্যবসায়ীরা সর্বোচ্চ ট্যাক্স পেয়ার হওয়ার পরও আমাদের কোনো সামাজিক নিরাপত্তা নেই। আমরা সরকারকে ৫ শতাংশ ট্যাক্স দেই। অথচ একটি প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষক পেনশন পাচ্ছে। আমাদের কি আছে। আমরা আরও ৩ শতাংশ বেশি ট্যাক্স দিতে চাই। যাতে আমাদের টাকা থেকেই আমাদের পেনশন দেবে। আগামী নেতৃত্বে যারা আসবে তারা যেন এই বিষয়টা চূড়ান্ত করেন। একই সঙ্গে আগামীতে আমরা সুন্দর একটা এফবিসিসিআই দেখতে চাই।

ইলেকট্রিক অ্যাসোসিয়েশন সভাপতি শাহদাৎ হোসেন ভুঁইয়া বলেন, এফবিসিসিআইয়ে পরিবর্তন আনতে হবে। নির্বাচন ছাড়া যেন কেউ নির্বাচিত হতে না পারে। এ পর্যন্ত যে কয়জন এফবিসিসিআইয়ের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছে সেগুলো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করেছেন। আগামীতে যেন এটা না হয়। দেশ থেকে যে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট হয়ে যাচ্ছে সেটা কি এফবিসিসিআই জানতো না। তারাও জানতো কারণ তারা এই পাচারের সঙ্গে জড়িত ছিল।

টোয়াবের সভাপতি রাফিউজ্জামান বলেন, এফবিসিসিতে কোনো সিলেক্টেড, অটো সিলেক্টেড, কোটা নেতা চলবে না। জিবি সদস্যদের ভোটে নির্বাচিত সদস্যরায় এফবিসিসিআই প্রতিনিধিত্ব করবেন। প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিবিদদের আমরা বেশি সেট চাই না। যারা ব্যবসায়ীদের উন্নয়নের কাজ করবে। ব্যক্তি বিশেষ কাজ করবে না। দুইবারের পর কেউ যেন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন না করতে পারে সে বিষয় দেখতে হবে।  

বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, আমরা এফবিসিসি এর সংস্কার চাই গত ১৬ বছর ভোটের সুযোগ ছিল না ব্যবসায়ীদের। আমাদের সবার মধ্যে ঐক্য থাকতে হবে। ঐক্য নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

ব্যবসায়ী কবির আহমেদ বলেন, আমরা যেন কোনো লেজুর বৃত্তিতে না যাই সেই প্রতিজ্ঞা করতে হবে। ব্যবসায়ীদের পরিচয় ব্যবসায়ী। আগামীর এফবিসিসিআইকে বলবো এমন যেন একটা আইন করা হয় যাতে আমলাদের স্যার বলতে না হয়। এফবিসিসিআইয়ের কমিটিতে যেন খাত অনুযায়ী করা হয়। সত্যিকার অর্থেই যেন এফবিসিসিআই ব্যবসায়ীদের স্বার্থে পরিচালিত হয়। নেতৃত্বে যেন যোগ্য নেতৃত্ব আসে এবং আত্মীয়তার ঊর্ধ্বে গিয়ে যেন একটি নেতৃত্ব আসে।  

মতবিনিময় সভায় সংস্কার প্রস্তাবগুলো হলো: সভাপতি, সিনিয়র সহ-সভাপতি, সহ-সভাপতি সহ সব পদে সরাসরি নির্বাচন। নমিনেটেড ও সেক্টর ভিত্তিক নির্বাচনী প্রথা বাতিল করতে হবে। ৮০ এর পরিবর্তে সভাপতি ১ সিনিয়র সহ-সভাপতি ১, সহ-সভাপতি এসো ৩, সহ-সভাপতি চেম্বার ৩ পরিচালক এসো, ১৮, পরিচালক চেম্বার ১৮ মোট ৪০ জন। পরপর দুইবারের বেশি পরিচালক নির্বাচিত হতে পারবেন না

এছাড়া নির্বাচিত পরিচালকের ব্যক্তিগত মত আদর্শ যাই থাক এফবিসিসিআিইতে চেয়েছে তার কোনো প্রভাব পড়বে না। প্রেসিডেন্ট মহোদয়ের একক সিদ্ধান্তের পরিবর্তে ২/৩ অংশ সদস্যদের সমর্থনের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০০০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২৪
জিসিজি/আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।