ঢাকা: টানা অবরোধে ক্রেতা শূন্য হয়ে পড়েছে ধোলাইখালের পুরাতন যন্ত্রাংশের মার্কেট। দেশে গাড়ির পুরনো যন্ত্রাংশ বিক্রির সবচেয়ে বড় এ মার্কেটে বেচাকেনা প্রায় শূন্যের কোটায় নেমে এসেছে।
অবরোধর মধ্যে যারা দোকান খোলা রাখছেন তারাও ক্রেতা সমাগম না হওয়ায় অর্থিক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। অনেক খুচরা ব্যবসায়ী বড় ব্যবসায়ীদের কাছে কেনা দামে যন্ত্রাংশ বিক্রয় করে দিচ্ছেন।
ব্যবসায়ীদের দাবি টানা হরতাল-অবরোধে এখানকার ১০ হাজার ব্যবসায়ীর ক্ষতির পরিমাণ এক হাজার কোটি টাকার মতো। আর বেচাকেনা কমে গেছে শতকরা ৯০ শতাংশ। ধোলাইখালে যেখানে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে প্রতিদিন ২০ থেকে ৩০ হাজার ক্রেতার সমাগম হত, সেখানে ক্রেতার সংখ্যা দুই থেকে তিন শ’তে নেমে এসেছে।
ব্যবসায়ীরা ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, রাজনৈতিক কর্মসূচির বলি হচ্ছেন তারা। হরতাল-অবরোধে তারা ঢাকার বাইরের কোনো ক্রেতা ভিড়াতে পারছেন না। ব্যবসায়ীদের কথা না ভেবে রাজনৈতিক দলগুলো তাদের স্বার্থ হাসিলে ব্যস্ত বলেও জানান এখানকার ব্যবসায়ীরা।
রাজধানীর পুরান ঢাকার জনসন রোডের ট্রাফিক সিগন্যাল থেকে নারিন্দা পর্যন্ত ধোলাইখালের বিস্তৃতি। এখানে মোটরগাড়ি ও কলকারখানার পুরনো যন্ত্রাংশ, জাহাজভাঙা লোহালক্কড় ও ইলেকট্রিক সরঞ্জামাদিসহ প্রায় সব ধরনের পুরনো যন্ত্রাংশ পাওয়া যায়। কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে এখন নতুন যন্ত্রাংশও বিক্রি হচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠান লেদমেশিন ব্যবহার করে অনেক নতুন যন্ত্রাংশও তৈরি করছে। এসব যন্ত্র ব্যবহৃত হচ্ছে দেশের বিভিন্ন কলকারখানায়। তবে অবরোধে মন্দা এ ব্যবসায়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ধোলাইখালের পুরাতন যান্ত্রাংশের দোকান খুলে বসে থাকলেও ক্রেতার সংখ্যা একেবারেই নেই। দোকান কর্মচারীরা অলস সময় কাটাচ্ছেন। অন্য সাধারণ দিনের মতো ক্রেতা ভিড়ানোর জন্য হাক-ডাকের ব্যস্ততাও নেই তাদের। একিদে, একেবারে প্রয়োজন ছাড়া তেমন কোনো ক্রেতা আসছেন না। ক্রেতাদের কেউ কেউ অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে এসেছেন যন্ত্রাংশ ক্রয় করতে।
এমনই একজন অ্যাম্বুলেন্সে করে গাড়ির পুরাতন যন্ত্রাংশ কিনতে আসা গাজীপুরের ব্যবসায়ী সেলিম। কথা হয় তার সঙ্গে। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, কম দামে যন্ত্রাংশ কিনতে এখানে আসি। অবরোধে নিরাপত্তার জন্য অ্যাম্বুলেন্সে করে মালামাল পরিবহন করছি। উপায় নেই আর।
এখানকার ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, প্রতিদিন প্রত্যেক ব্যবসায়ীর বিশ হাজার থেকে আড়াই লাখ টাকা পর্যন্ত যন্ত্রাংশ বিক্রয় হয়। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রতিদিন বিক্রির পরিমাণ কমে মাত্র পাঁচ হাজার টাকায় এসে ঠেকেছে!
হৃদয় মোটরর্সের মালিক আনোয়ার হোসেন বাংলানিউজকে জানান, তার দোকানে প্রতিদিন ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকার গাড়ির যন্ত্রাংশ বিক্রয় হত। কিন্তু টানা অবরোধে বিক্রয় কমে দাঁড়িয়েছে দুই থেকে তিন হাজার টাকায়।
তিনি আরও বলেন, শতকরা ৮০ শতাংশ ক্রেতা ঢাকার বাইরে হওয়ায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ এখানে আসছেন না। দুই একজন যারা আসছেন তারা ঢাকার ক্রেতা।
ধোলাইখাল পুরাতন যন্ত্রাংশ বিক্রেতা মালিক সমিতির সভাপতি মো. হান্নান মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, সব ধরনের যন্ত্রাংশ পাওয়ার নিশ্চয়তা রয়েছে বলে সারাদেশের ক্রেতারা এখানে আসেন। যন্ত্রাংশের দামও কম। কিন্তু টানা অবরোধে ঢাকার বাইরের ক্রেতারা আসতে পাড়ছেন না।
তিনি বলেন, অনেক ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেন এখানে। অবরোধে আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের ঋণের পরিমাণও বাড়ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১১৪০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫