ঢাকা: দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখার স্বার্থে অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহার করতে এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)-এর পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছে।
এ ছাড়া সরকার ও বিরোধী দুটি পক্ষের মধ্যে সংলাপের আশু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণেরও আহ্বান জানানো হয়েছে।
শনিবার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি)-এর পক্ষে সচিব এম. নাজমুল করিম স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মুর্শেদী এ আহ্বান জানান।
বিবৃতিতে সালাম মুর্শেদী বলেন, পরিসংখ্যানের তথ্য অনুযায়ী, একদিনের অবরোধ ও হরতালে প্রায় ২৩০০ কোটি টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আর চলমান অবরোধ-হরতালে ২০ দিনে মোট ৪০ হাজার কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে।
এ পরিস্থিতিতে ৫০ বিলিয়ন ডলারের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়া তো দূরের কথা, এ শিল্পগুলিকে টিকিয়ে রাখাই এখন চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সালাম মুর্শেদী বলেন, দেশের সর্ববৃহৎ রফতানি খাত হচ্ছে, পোশাক খাত। এছাড়া চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য, জাহাজ শিল্প, ওষুধশিল্প, হিমায়িত চিংড়ি, সিরামিক, প্লাস্টিকপণ্য, ফার্নিচার, পাট ও পাটজাত দ্রব্য, হিমায়িত মাছ-মাংস, কাঁচাবাজার, দেশে প্রস্তুত মশলা ও চাল দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশে রফতানি হচ্ছে।
রফতানি শিল্পখাত অর্থনীতির চালিকা শক্তি। অবরোধ-হরতাল শিল্পখাতে আমদানি-রফতানিতে শুধু বাধগ্রস্তই হচ্ছে না, বরং রফতানিদ্রব্যের উৎপাদন, পরিবহন ও জাহাজিকরণের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে এবং বিদেশি ক্রেতাদের কাছে ইমেজ সংকট তৈরি করছে।
বিবৃতিতে উৎকণ্ঠা প্রকাশ করে ইএবি প্রেসিডেন্ট জানান, অবরোধ-হরতালে শিল্পপ্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের আসা-যাওয়ার ক্ষেত্রে পরিবহন সংকটে পড়তে হয়।
আব্দুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ২০১৩ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতা কাটিয়ে গেল বছর (২০১৪) রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা থাকায় শিল্পপ্রতিষ্ঠানগুলি ঘুরে দাঁড়াবার চেষ্টা করছিল। এ জন্য চীন, জাপান, কোরিয়া, রাশিয়াসহ বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশ বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে। এতে যেমন কর্মসংস্থান বৃদ্ধি পেতো তেমনি দেশের অর্থনীতিও তার লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অগ্রণী ভূমিকা রাখতো। কিন্তু এ রকম পরিস্থিতিতে দেশের অর্থনীতি মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে এবং দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে চরম অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
এমতাবস্থায়, এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) মনে করে, দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের পরিবেশ বজায় রাখার স্বার্থে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা আনয়ন এবং বাংলাদেশের ইমেজ সংকট থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
ইএবি প্রেসিডেন্ট আব্দুস সালাম মুর্শেদী রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আপনারা (রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ) অবগত আছেন যে, অবরোধ-হরতালের কারণে রফতানিপণ্য সময়মতো জাহাজীকরণ করতে ব্যর্থ হলে ক্ষেত্র বিশেষে মূল্যছাড়, ১০ গুণ খরচ বৃদ্ধিসহ আকাশপথে পণ্য পাঠাতে হয় নিজস্ব খরচে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে জাহাজীকরণ নির্ধারিত সময়ে না হলে বিদেশি ক্রেতারা পণ্যের কনসাইনমেন্ট বাতিল করে দেয়।
এতে করে রফতানিকারক সরাসরি আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ব্যাংকিংখাতও আর্থিক জটিলতার মুখে পড়ে।
তিনি বলেন, এ ছাড়া রফতানিকারকরা স্টকলট সমস্যার সম্মুখীন হন। আর স্টকলটের কারণে প্রতিষ্ঠানটি রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে (Sick Industry) পরিণত হওয়ার মুখোমুখি হয়।
এই পরিস্থিতিতে এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ইএবি) অবরোধ ও হরতাল আহ্বানকারীদের অবরোধ ও হরতাল প্রত্যাহারের অনুরোধ জানাচ্ছে এবং সরকার ও বিরোধী দুটি পক্ষের মধ্যে সংলাপের আশু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আহবান জানাচ্ছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫