ঢাকা: স্বল্পোন্নত দেশগুলোকে (Least Development Countries) প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উন্নয়ন সহায়তা দিতে উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছে জাতিসংঘ।
সম্প্রতি, জাতিসংঘ সদর দফতরে স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি বিষয়ক) চতুর্থ জাতিসংঘ সম্মেলনের অগ্রগতি পর্যালোচনা সভায় এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ।
বৃহস্পতিবার (২৯ জানুয়ারি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে উন্নত দেশগুলোর মোট জাতীয় আয়ের শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ উন্নয়নশীল দেশকে এবং শূন্য দশমিক ১৫ থেকে শূন্য দশমিক ২০ শতাংশ স্বল্পোন্নত দেশকে উন্নয়ন সহায়তা দেওয়ার কথা। কিন্তু, অধিকাংশ উন্নত দেশই তাদের প্রতিশ্রুতি থেকে অনেক দূরে রয়েছে বলে সভায় উল্লেখ করা হয়।
২০১১ সালের ৯-১৩ মে এলডিসি বিষয়ক চতুর্থ জাতিসংঘ সম্মেলন ইস্তাম্বুলে অনুষ্ঠিত হয়। সম্মেলনে সদস্য রাষ্ট্রগুলো ২০১১-২০২০ সালের জন্য একটি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করে।
এ কর্মপরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে- দারিদ্র্য বিমোচন, আন্তর্জাতিকভাবে নেওয়া সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমডিজি) অর্জন এবং ২০২০ সালের মধ্যে ৪৮টি এলডিসির অর্ধেক সংখ্যক দেশকে উচ্চতর স্তরে নিতে এলডিসিগুলোর কাঠামোগত ঝুঁকি মোকাবেলা করা।
এ ছাড়া স্বল্পোন্নত দেশগুলোর উন্নয়নে উন্নত দেশগুলোর উন্নয়ন সহায়তা (ওডিএ) বিষয়ক প্রতিশ্রুতি পূরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে সভায় মত দেন বক্তারা।
পর্যালোচনা বৈঠকে জানানো হয়, ২০১৩ সালে এলডিসিগুলোতে দ্বিপাক্ষিক ওডিএ প্রবাহ ১২ দশমিক তিন শতাংশ বেড়েছে। যদিও ২০১২ সালে তা নয় দশমিক চার শতাংশ হ্রাস পেয়েছিল।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বল্পোন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবের ঝুঁকিতে রয়েছে বলে সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন বক্তারা। দেশগুলো ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, সমুদ্রস্তর বৃদ্ধি ও উপকূলীয় এলাকা ধসের শিকার হচ্ছে। এর ফলে খাদ্য নিরাপত্তা, দারিদ্র্য বিমোচন ও টেকসই উন্নয়ন আরো হুমকির মুখে পড়েছে।
এলডিসিগুলোর প্রয়োজনীয়তা, জটিল ঝুঁকি এবং সম্পদ-বৈষম্যের কথা বিবেচনায় নিয়ে উন্নয়ন সহায়তা বরাদ্দের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানায় সাধারণ পরিষদ।
স্বল্পোন্নত দেশ হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশ দ্রুত এলডিসি থেকে উত্তরণে ব্যাপক উন্নয়ন করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে মাথাপিছু মোট জাতীয় আয়, মানবসম্পদের সূচক এবং অর্থনৈতিক ঝুঁকি সূচক এই তিনটি ক্ষেত্রেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশ বলেও জানানো হয় ওই বিজ্ঞপ্তিতে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আরো বলা হয়, ২০০৮ সালে মাথাপিছু আয় ছয়শ ৩০ মার্কিন ডলার থেকে এক হাজার দুইশ ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা এলডিসি উত্তরণ-সীমা এক হাজার দুইশ ৪২ ডলারের কাছাকাছি। দারিদ্র্যের হার ২০০৫ সালের ৪০ শতাংশ থেকে ২৪ শতাংশে নেমে এসেছে।
দেশে শিক্ষার ক্ষেত্রে মাধ্যমিক স্তর পর্যন্ত লিঙ্গসমতা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। পাঁচ বছরের কম শিশু মৃত্যুর হার ২০০৮ সালের ৬৫ থেকে ৩৪-এ নেমে এসেছে।
বাংলাদেশ অবশ্য এরই মধ্যে প্রতিকূল আবহাওয়া উপযোগী ধানসহ বিভিন্ন ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছে। ধস রোধ এবং ভূগর্ভস্থ কার্বন ধরে রাখতে উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক বনায়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করছে। তথ্যপ্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে দুর্যোগ সতর্কতা ও ব্যবস্থাপনা কৌশল শক্তিশালী করা হয়েছে।
উপকূলীয় অঞ্চল জুড়ে আশ্রয়কেন্দ্র নির্মাণসহ ব্যাপক অবকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩২৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫