ঢাকা: বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল নতুন একটি রেলসেতু তৈরিতে আগ্রহ দেখিয়েছে জাপান। সে কারণে যমুনা নদীর নিচে বহুমুখী টানেলে অর্থায়নে আগ্রহ নেই দেশটির।
তবে বাংলাদেশ সরকার যমুনা নদীর নিচে বহুমুখী টানেল প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন করতে চায়। জাপান প্রতিশ্রুত ৬০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা থেকে বাংলাদেশ এ অর্থ নির্বাহ করতে আগ্রহী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ইআরডি সূত্র জানিয়েছে, যমুনা নদীর নিচে বহুমুখী টানেলে আগ্রহ কম থাকলেও বাংলাদেশের আরেকটি অন্যতম অগ্রাধিকারমূলক গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পে অর্থায়নে ভারতের ইতিবাচক মতামতকে গুরুত্ব দিচ্ছে জাপান।
এদিকে, আগামী ৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া বাংলাদেশ-জাপানের পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে এসব বিষয় গুরুত্ব পাবে বলে জানা গেছে। এছাড়া ওই বৈঠকে দুই প্রধানমন্ত্রীর সফরের যৌথ বিবৃতির সবগুলো বিষয়ও আলোচনা হবে বলে জানা যায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল একটি রেলসেতু নির্মাণে সহজ শর্তে ঋণ বা ওডিএ দেওয়ারও পরিকল্পনা রয়েছে জাপানের। তবে বাংলাদেশ সরকার যমুনা নদীর নিচে বহুমুখী টানেল প্রকল্পটিও বাস্তবায়ন করতে চায়।
যমুনা নদীর নিচে বহুমুখী টানেলে অর্থায়নে জাপানের অনাগ্রহের বিষয়টির সত্যতা স্বীকার করে ইআরডি সূত্র জানায়, জাপানের কিছুটা অনাগ্রহ থাকলেও প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ।
এ বিষয়ে জাপান অর্থায়ন না করলে অন্য কোনো দেশের ঋণ সহযোগিতাও খোঁজা হতে পারে।
এদিকে, বাংলাদেশের অন্যতম অগ্রাধিকারমূলক গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য অন্যতম মিত্র ভারতের ইতিবাচক মতামত লাগবে বলে বাংলাদেশকে জানিয়েছে জাপান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র জানায়, ফেব্রুয়ারির ৫ তারিখে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার প্রথম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকে যোগ দিতে তিন সদস্যের প্রতিনিধি দল নিয়ে ঢাকা আসছেন জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী (সচিব পদমর্যাদা)।
প্রতিনিধি দলে ঢাকাস্থ জাপান দূতাবাসের কর্মকর্তারাও উপস্থিত থাকবেন।
পররাষ্ট্র সচিব মো. শহিদুল হক বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বৈঠকে নেতৃত্ব দেবেন। বৈঠকে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যকার দ্বিপাক্ষিক ইস্যুগুলো আলোচনা হবে।
গত বছরের মে মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সফরে আগামী ৪ থেকে ৫ বছরে ৬০০ কোটি ডলার ঋণ সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দেয় জাপান। গঙ্গাবাঁধ প্রকল্প, বঙ্গবন্ধু সেতুর সমান্তরাল একটি রেলসেতু, যমুনা নদীর নিচে বহুমুখী টানেল, ইস্টার্ন বাইপাস এবং ঢাকার চারটি নদী পুনরুদ্ধার প্রকল্পে এ অর্থ ব্যয় করা হবে বলেও জানানো হয়।
সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জাপান সফরের পর প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে সমীক্ষায় দেশটির একটি প্রতিনিধি দল ঢাকা সফর করে। সে সময় অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সঙ্গে বৈঠকে গঙ্গাবাঁধ প্রকল্পে অর্থায়নের বিষয়ে ভারতের ইতিবাচক সংকেতের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দেয় জাপান।
তবে তখন প্রাথমিক আলোচনা হলেও এ বিষয়টি নিয়ে এবারের পররাষ্ট্র পর্যায়ের বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হতে পারে বলে জানান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা।
জানা যায়, বাংলাদেশের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক করার প্রতিশ্রুতিতে আবদ্ধ হতে চায় না বলে পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক বা ফরেন অফিস কনসালটেশন নিয়ে কোনো চুক্তি করতে চায় না জাপান। দুই দেশের কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতিতেও কোনো ধরনের চুক্তি করতে চায় না দেশটি। এক্ষেত্রে নোট ভারবালের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া চালিয়ে নিতে চায়। ফলে, যেকোনো সময়ে কোনো আপত্তি থাকলে তা বন্ধ করে দিতে পারে।
বর্তমানে কূটনৈতিক পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতি নিয়ে বাংলাদেশ নোট ভারবাল পাঠিয়েছে। আর অফিসিয়াল পাসপোর্টধারীদের ভিসা অব্যাহতির বিষয়টি বিবেচনায় রয়েছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র আরো জানায়, জাপানের চাহিদা অনুযায়ী ঢাকার আশেপাশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।
এ জন্য মুন্সীগঞ্জ এলাকার কথা দেশটিকে জানানো হতে পারে। এছাড়া মহেশখালীতে জাপানের অর্থায়নে গভীর সমুদ্র বন্দর, নিরাপদ পরমাণু সহযোগিতা, জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কেন্দ্রনির্মাণ, পিসবিল্ডিং সেন্টার তৈরি, বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, প্রাথমিক জ্বালানি নিরাপত্তা ও বিদ্যুত্খাতে সহযোগিতা, অবকাঠামোগত সহযোগিতা, বে অব বেঙ্গল ইন্ডাস্ট্রিয়াল গ্রোথ বেল্ট (বিজ-বি) সহযোগিতাসহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনা হবে বলে জানা গেছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৩ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৯, ২০১৫