ঢাকা: বাংলাদেশে বিনিয়োগ, বাণিজ্য ও পারস্পরিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে কানাডার সিনেটর ও সংসদ সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন সে দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার কামরুল আহসান।
রাজধানী অটোয়ার পার্লামেন্ট হিলে গত ২৮ জানুয়ারি বাংলাদেশ হাইকমিশন আয়োজিত এক মধ্যাহ্নভোজ ও কর্মশালায় তিনি এ আহ্বান জানান।
কানাডার কনজারভেটিভ পার্টির ১১ জন ফেডারেল এমপি ও সিনেটর, প্রধান বিরোধীদল এনডিপির চারজন ফেডারেল এমপি এবং সংসদের তৃতীয় বৃহত্তম প্রতিনিধিত্বকারী লিবারেল পার্টির দুইজন ফেডারেল এমপি, স্পোর্টস বিষয়ক ফেডারেল প্রতিমন্ত্রী বাল গোসালসহ মোট ১৮ জন গুরুত্বপূর্ণ জনপ্রতিনিধি এ কর্মসভায় যোগদান করেন।
পার্লামেন্ট অধিবেশন চলাকালে বাংলাদেশ হাইকমিশনের উদ্যোগে আয়োজিত এ কর্মসভায় হাইকমিশনার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার একটি মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে চলেছে।
সে ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রাখার জন্য তিনি কানাডার প্রতি আহ্বান জানান।
কানাডীয় আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থার (সিডা) ভূয়সী প্রশংসা করে তিনি বলেন, উত্তর আমেরিকায় বাংলাদেশের অন্যতম বাণিজ্য অংশীদার কানাডা এবং দেশটি আমাদের তৈরি পোশাক, চামড়া, হিমায়িত খাদ্য ও মৎস্য শিল্পের জন্য অন্যতম বৃহৎ বাজার।
তিনি বলেন, বিদ্যমান এসব শিল্পপণ্যের পাশাপাশি ক্রমবিকাশমান জাহাজ নির্মাণ শিল্প, ওষুধ শিল্প, হাল্কা প্রকৌশল শিল্প প্রভৃতি খাতেও বাংলাদেশের বড় রফতানিক্ষেত্র হতে পারে দেশটি ।
এ সময় গভীর সমুদ্র বন্দর প্রকল্প, কয়লাভিত্তিক একাধিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্প, ঢাকার মেট্রোরেল প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্প এবং কর্ণফুলী ও পদ্মা সেতুসহ দেশের বিভিন্ন অবকাঠামোগত উন্নয়নের চিত্র তুলে ধরেন তিনি।
কানাডীয় বৃহৎ কম্পানিগুলোকে বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আহ্বান জানানোর মাধ্যমে বাংলাদেশের হাইকমিশনার বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের ক্ষেত্রে আগামী ১০ বছর পর্যন্ত কানাডীয় জিএসপি সুবিধা প্রদান এবং কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন ও ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের সভাপতি পদে বাংলাদেশের নির্বাচনে সমর্থনের জন্য কানাডার পার্লামেন্ট এবং সরকারকে ধন্যবাদ জানান।
কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশি কমিউনিটির কল্যাণে, বিশেষ করে কানাডার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিচ্ছু বাংলাদেশি ছাত্র-ছাত্রীদের ভিসা প্রক্রিয়া সহজতর করার ক্ষেত্রে এবং সম্প্রতি কারিগরি যোগ্যতার ভিত্তিতে ইমিগ্রেশনপ্রাপ্ত বাংলাদেশি-কানাডিয়ানদের যথাযথ কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে ভূমিকা পালনের জন্য পার্লামেন্টারিয়ান এবং সিনেটরদের প্রতি আহ্বান জানান বাংলাদেশের হাই কমিশনার কামরুল আহসান।
এরপর একে একে সিনেটর ও সংসদ সদস্যরা বক্তব্য রাখেন।
ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (আইপিইউ) বিষয়ক কানাডার বিশেষ প্রতিনিধি সিনেটর সালমা আতাউল্লাহজান বলেন, কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন (সিপিইউ) এবং আইপিইউ নির্বাচনে কানাডা বাংলাদেশকে সমর্থন দিয়েছে এ কারণে যে, বাংলাদেশের প্রার্থীরা জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী এবং সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী তাদের প্রজ্ঞা, অভিজ্ঞতা ও সুযোগ্য নেতৃত্বের সঙ্গে এই আন্তর্জাতিক সংগঠন দুটিকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন বলে তারা বিশ্বাস করেন।
কানাডার আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের পার্লামেন্টারি সেক্রেটারি লোয়া ব্রাউন বলেন, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রগতির প্রতি কানাডার গভীর আগ্রহ রয়েছে। মাতৃ ও শিশুমৃত্যুর হার হ্রাস, বাল্যবিবাহ নিরোধ, শিক্ষার বিস্তার, গার্মেন্টস শিল্পে বিপুল সংখ্যক নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ, নারীর ক্ষমতায়ন এবং অপরাপর সামাজিক ক্ষেত্রগুলোতে বাংলাদেশের অর্জন তাৎপর্যপূর্ণ, যা অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত।
কানাডা এ সব ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে অব্যাহতভাবে সহযোগিতা প্রদান করে যাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাংলাদেশ কানাডা-বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফ্রেন্ডশিপ গ্রুপের চেয়ার এবং টরন্টোর বাংলাদেশি অধ্যুষিত বিচেস-ইস্টইয়র্ক আসন থেকে নির্বাচিত এমপি ম্যাথিউ ক্যালওয়ে বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশে অগ্রগতির ভূয়সী প্রশংসা করেন।
২০১৩ সালে রানা প্লাজা ধসের পর ২০১৪ সালে সেখানে সফরের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, রানা প্লাজাসহ আরো কয়েকটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি তিনি পরিদর্শন করেছেন। শ্রমিক নেতা, ব্যবসায়ী ও সরকারের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমঅধিকার বাস্তবায়নে সচেষ্ট রয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে আশানুরূপ অগ্রগতি অর্জিত হবে বলে আশা করেন ম্যাথিউ ক্যালওয়ে।
বাংলাদেশের মহান ভাষা আন্দোলন এবং আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার দিবসের স্মারক হিসেবে টরন্টোতে একটি শহীদ মিনার স্থাপনের জন্য তিনি কাজ করছেন এবং এ বিষয়ে সবার সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।
ক্যালগেরি নর্থইস্ট থেকে নির্বাচিত এমপি দেবীন্দর শোরি জানান, বাংলাদেশ এবং কানাডার মধ্যে ভবিষ্যতে ব্যবসা-বাণিজ্য ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে বিশ্বাস করেন তিনি।
এ ছাড়া ক্যালগেরিতে তার নির্বাচনী এলাকায় বাংলাদেশি প্রকৌশলী এবং ব্যবসায়ীরা সমাজ কল্যাণমূলক বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
নোভা স্কোশিয়ার শ্যাকভিল-ইস্টার্ন শোর থেকে নির্বাচিত এমপি পিটার স্টোফার বলেন, আজ থেকে পাঁচ বছর আগে ২০১০ সালে বাংলাদেশ সফরে তার অভিজ্ঞতা ছিল অত্যন্ত চমৎকার এবং ফলপ্রসূ।
তিনি বলেন, তখন রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক সহাবস্থান ও সংসদীয় গণতন্ত্রের যে চর্চা বাংলাদেশে তিনি দেখেছেন, তা কানাডাসহ অনেক দেশের জন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করেন তিনি।
সভায় আরো যোগদান করেন কমনওয়েলথ সংক্রান্ত কানাডার বিশেষ প্রতিনিধি ও ব্রিটিশ কলাম্বিয়ার সাউথ সারি থেকে নির্বাচিত এমপি রাসেল জেমস হিবার্ট, সিনেটর ন্যান্সি রুথ, সাইপ্রেস হিল গ্রাসল্যান্ডের এমপি ডেভিড অ্যান্ডারসন, এলগিন-মিডলসেক্স লন্ডনের (অন্টারিও) এমপি জো প্রেস্টন, টরন্টোর ওয়েস্টইয়র্ক থেকে নির্বাচিত এমপি জুডি এ. স্গ্রো, স্ক্যারবোরো-গিল্ডউড থেকে নির্বাচিত এমপি জন ম্যাককেই, কিচেনার থেকে নির্বাচিত এমপি হ্যারল্ড অলব্রেখ্ট এবং অটোয়া ডাউনটাউন থেকে নির্বাচিত বিরোধীদলের এমপি ও পররাষ্ট্র বিষয়ক সমালোচক পল দিওয়ার।
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৫