ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

হরতাল-অবরোধে ৫০ টাকার দুধ ১৫ টাকায়!

উপজেলা করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৫
হরতাল-অবরোধে ৫০ টাকার দুধ ১৫ টাকায়! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

তালা(সাতক্ষীরা): হরতাল-অবরোধের কারণে দৈনিক প্রায় ১০ হাজার লিটার দুধ নিয়ে বিপাকে সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জেয়ালা দুগ্ধপল্লীর খামারিরা।

প্রতিদিন এ দুধ বিক্রি করে প্রায় ১৫০টি পরিবারের সংসার চলে।

কিন্তু বাইরে দুধ পাঠাতে না পেরে ৪৫ থেকে ৫০ টাকা কেজি দরের দুধ বাধ্য হয়ে এলাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা দরে।

জেয়ালা ঘোষপাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতির সভাপতি প্রশান্ত ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, তাদের খামারে প্রতিদিন প্রায় ১০ হাজার লিটার দুধ উৎপাদন হয়। উৎপাদিত দুধ সাতক্ষীরা, খুলনা ও যশোর জেলা শহরে অবস্থিত বিভিন্ন কোম্পানিসহ দোকানে বিক্রি করে থাকেন।

কিন্তু হরতাল-অবরোধের কারণে কোনো কোম্পানি বা দোকানি দুধ নিচ্ছে না। একদিন নিলেও চারদিন নেওয়া বন্ধ রাখছে। আর যেটা নিচ্ছে তার টাকাও বকেয়া থাকছে। এ জন্য স্থানীয় বাজারসহ বিভিন্ন গ্রামে দুধ বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা।

খামারি বিপ্লব ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, প্রতিদিন সকালে-বিকেলে সাতক্ষীরার বিনেরপোতা, খুলনার ব্রাক আড়ং, আঠার মাইল, কাছিঘাটা ও জাতপুর প্রাণসহ বিভিন্ন কারখানায় তারা দুধ বিক্রি করতেন। কিন্তু এখন নিয়োমিত দুধ নিচ্ছে না তারা। আর যা নিচ্ছে তার টাকাও বকেয়া।

আরেক খামারি সুজন ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, তিনি গ্রামে দুধ সংগ্রহ করেন। কিন্তু গত দুইদিন দুধ বিক্রি করতে পারেননি। হরতাল-অবরোধ না গেলে তিনি আর দুধ সংগ্রহ করবেন না।

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা সদর থেকে ৮ কিলোমিটার উত্তরে (তালা ও ডুমুরিয়া) সীমানায় জেয়ালা গ্রাম। এ গ্রামের ঘোষপাড়ায় ১৫০টি পরিবারের প্রায় এক হাজার লোকের বসবাস। এ পাড়ায় মানুষের প্রধান কাজ কৃষি ও গরু পালন। এখানে রয়েছে ছোট-বড় ১৩৭টি দুগ্ধ খামার। এ দুগ্ধ খামারের আয়ে চলে তাদের সংসার।

শুক্রবার (৩০ জানুয়ারি) সকালে সরেজমিনে জেয়ালা ঘোষপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, খামারে বাঁধা ছোট বড় দেশি-বিদেশি গাভী। কেউ দুধ সংগ্রহ করছেন। কেউ খাবার দিচ্ছেন। কিভাবে কোথায় বিক্রি করা যায়, তা নিয়ে আলাপ করছেন তারা।
 
এসব খামারে বিভিন্ন জাতের গরু রয়েছে। এদের মধ্যে জার্সি, ফ্রিজিয়ান, শাহীওয়াল জাতের গরুর সংখ্যাই বেশি। এখানে যত গরীব পরিবারই থাকুক না কেন, তাদের কমপক্ষে ৫টি গরু রয়েছে। আর যাদের অবস্থা মোটামুটি ভালো তাদের ৫ থেকে ৫০টি গরু আছে।

এ দুগ্ধ খামারিদের ভাষায়,‘দুধ তো আর নষ্ট করা যাবে না। যেভাবে হোক কম দামে হলেও বিক্রি করতে হবে। দুধ নেওয়ার কোম্পানিগুলো দুধ নিচ্ছে না। দুধ নিলেও টাকা দিচ্ছে না। কিভাবে চলবে খামার ও সংসার। ’

খামারি বিপ্লব ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, তার খামারে ৭টি গরু রয়েছে। প্রতিদিন একটি গরুর পেছনে তার ২০০ টাকার মতো খরচ হয়। দুধ বিক্রি করে তার খরচের টাকা উঠতো। বর্তমানে দুধ বিক্রি না হওয়ায় খরচের টাকা উঠছে না। এতে তিনি বিপাকে পড়েছে।

দুধ বহনকারী চালক জুয়েল গাজী বাংলানিউজকে জানান, দুধ বহন করে তার সংসার চলতো। কিন্তু দুধ কোম্পানিগুলো দুধ না নেওয়ায় তিনি বাইরে যান না। বেকার সময় কাটছে বাড়িতে।

জেয়ালা ঘোষপাড়ার দিপংকর ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, তার বাড়িতে ৯টি গরু রয়েছে। প্রতিদিন তার ২২ থেকে ২৫ কেজি দুধ উৎপাদন হচ্ছে। দুধ বিক্রির মধ্য দিয়ে চলতো তার সংসার। কিন্তু এ দুধ বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে না। এমন বক্তব্য জেয়ালা দুগ্ধ পল্লীর অনেকের।

জেয়ালা ঘোষপাড়া প্রাথমিক দুগ্ধ উৎপাদনকারী সমবায় সমিতি’র সভাপতি দিবাস ঘোষ বাংলানিউজকে জানান, তার নিজের খামারে প্রতিদিন ২৮০ লিটার দুধ উৎপাদন হয়। বর্তমানে দুধ বিক্রি হচ্ছে না। এতে করে বিপাকে পড়েছেন তিনি। তার ভাষায়,‘খামারিরা এবার শেষ। ’

বাংলাদেশ সময়: ২২০৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৩০, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।