পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দেশে বর্তমান জ্বালানি সংকট নিরসনে খালাসপীর, জামালগঞ্জ ও ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্রের উন্নয়ন ও কয়লা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনার প্রস্তাব দিয়েছে বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্র কর্তৃপক্ষ।
এ ৩ কয়লাক্ষেত্রে দেশীয় কোম্পানির হাতে গেলে বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ের পাশাপাশি প্রায় ৫ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।
দেশে এখন পর্যন্ত ৫ কয়লাক্ষেত্র আবিস্কৃত হয়েছে। এগুলো হলো, দিনাজপুরের পার্বতীপুরে বড়পুকুরিয়া, ফুলবাড়ী, নবাবগঞ্জের দীঘিপাড়া, রংপুরের পীরগঞ্জে খালাসপীর ও জয়পুরহাটের জামালগঞ্জ কয়লাক্ষেত্র। এসব ক্ষেত্রে মজুদ কয়লার পরিমাণ ৩ হাজার ৩০০ মিলিয়ন টন। যা প্রায় ৭৭.৯৪ টিসিএফ গ্যাসের সমতুল্য। এরমধ্যে বড়পুকুরিয়া খনি হতে ২০০৫ সাল থেকে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উৎপাদন করা হচ্ছে।
সূত্র জানায়, দেশে জ্বালানি সংকট নিরসনে বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্র কর্তৃপক্ষ খালাসপীর, জামালগঞ্জ ও ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্রের ফিজিবিলিটি স্টাডি থেকে শুরু করে খনি উন্নয়নসহ কয়লা উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনায় আগ্রহী। এ লক্ষ্যে ওই ৩ কয়লাক্ষেত্রের লিজ চেয়ে পেট্রোবাংলার মাধ্যমে গত বছরের অক্টোবর মাসে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি বিভাগে আবেদন করে তারা। ওই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বড়পুকুরিয়া কর্তৃপক্ষের সক্ষমতা জানতে চেয়ে গত ডিসেম্বর মাসে জ্বালানি বিভাগ থেকে চিঠি দেওয়া হয়।
বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্র কর্তৃপক্ষ ১৯৮৮ সাল থেকে প্রিফিজিবিলিটি স্টাডি, ফিজিবিলিটি স্টাডি, খনি নিমার্ণের দরপত্র আহ্বান, দরপত্র মূল্যায়ন, চুক্তি নেগোসিয়েশন, চুক্তি স্বাক্ষর, শ্যাফট ফ্রিজ হোল ড্রিলিং, শ্যাফট কনস্ট্রাকশন, রোডওয়ে ডেভেলপমেন্ট, সাপ্লিমেন্টারি জিওলজিক্যাল অ্যান্ড হাইড্রোজিওলজিক্যাল ইনভেস্টিগেশন ওয়ার্ক, সাইসমিক সার্ভে, মাইন হ্যাজার্ড মিটিগেশন ওয়ার্ক, মাইন সার্ভে, মাইন ভেন্টিলেশন, অপারেশন, এনভায়রনমেন্টাল ইম্প্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট, লোকাল অ্যান্ড ফরেন প্রকিউরমেন্ট ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
প্রিফিজিবিলিটি স্টাডি থেকে শুরু করে কয়লা উৎপাদন ও বাজারজাতকরণে দীর্ঘদিন জড়িত থাকায় একদল দক্ষ জনবলও তৈরি হয়েছে এখানে। তাছাড়া খনির জন্য জমি ক্রয়, কয়লা উত্তোলনের ফলে অবনমিত ভূমি ও স্থাপনা উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দিয়ে ক্রয়সহ ক্ষতিগ্রস্ত জনসাধারণকে পুনর্বাসন এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগণের বিক্ষোভ-আন্দোলন সাফল্যের সঙ্গে মোকাবিলা করার অভিজ্ঞতা রয়েছে বড়পুকুরিয়া কর্তৃপক্ষের।
এসব উল্লেখ করে গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর এক চিঠির মাধ্যমে বড়পুকুরিয়া কর্তৃপক্ষ তাদের সক্ষমতা জ্বালানি বিভাগকে জানায়।
সূত্র আরো জানায়, বড়পুকুরিয়া কয়লাক্ষেত্র কর্তৃক প্রস্তাবিত ৩ কয়লাক্ষেত্রের মজুদ কয়লার পরিমাণ প্রায় ২ হাজার ২২৫ মিলিয়ন টন। এসব ক্ষেত্র থেকে উৎপাদিত কয়লা দিয়ে প্রায় ৫ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। এরমধ্যে খালাসপীরে ২২৮ থেকে ৫১০ মিটার গভীরে ৬০০ মিলিয়ন টন এবং জামালগঞ্জে ৬৪০ থেকে ১১৫৮ মিটার গভীরে ১ হাজার ৫৩ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ রয়েছে। ভূগর্ভস্থ পদ্ধতি ব্যবহার করে এ ২ ক্ষেত্র হতে বছরে প্রায় ৪ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা যাবে। যা দিয়ে ১ হাজার ৪০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করা সম্ভব।
এছাড়া ফুলবাড়ী কয়লাক্ষেত্রের মাত্র ১৫০ মিটার থেকে ২৫০ মিটার গভীরে ৫৭২ মিলিয়ন টন কয়লা মজুদ রয়েছে। ভূগর্ভের অনেক উপরে হওয়ায় এখান থেকে ভূগর্ভস্থ পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব নয়। সেজন্য উন্মুক্ত পদ্ধতিতে এখান থেকে বছরে প্রায় ১২ মিলিয়ন টন কয়লা উত্তোলন করা সম্ভব। এখানকার উৎপাদিত কয়লা দিয়ে ৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্লান্ট স্থাপন করা সম্ভব।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বড়পুকুরিয়া কোল মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের (বিসিএমসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিনুজ্জামান রোববার (১ ফেব্রুয়ারি) বাংলানিউজকে বলেন, জ্বালানি সংকট নিরসনের লক্ষ্যে ওই ৩ কয়লাক্ষেত্র লিজ চাওয়া হয়েছে। বড়পুকুরিয়া খনির অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে কয়লাক্ষেত্রগুলো উন্নয়নের মাধ্যমে কয়লা উত্তোলন করা হবে।
তিনি বলেন, এ বছর দেশের ইটভাটাগুলোতে তীব্র কয়লা সংকট দেখা দিয়েছে। বড়পুকুরিয়ার উৎপাদন ৭ মাস বন্ধ থাকায় এ সংকট দেখা দেয়। ২ কয়লাক্ষেত্র থাকলে এ সংকট হতো না।
তিনি আরো বলেন, নতুন কয়লাক্ষেত্রের জন্য কনসালটিং ফার্ম নিয়োগ করে পূর্ণাঙ্গ টেকনোইকোনমিক ফিজিবিলিটি স্টাডি, আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান মাধ্যমে ঠিকাদার নিয়োগ এবং খনি নির্মাণ ও উন্নয়ন ইত্যাদি কাজ শেষে কয়লা উত্তোলন করতে কমপক্ষে ৮ বছর সময় লাগবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৫৬ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ০২, ২০১৫