শেরপুর (বগুড়া): চারদিকে সবুজে ভরে উঠেছে। মাঠে মৃদু বাতাস বইছে।
এভাবেই তারা নতুন জমি তৈরি আর খেতের রকমারি ফসল পরিচর্যা করে চলেছেন। তাদেরই একজন সবজি চাষি শাহ আলম। খেতের মধ্যে বসে কি যেন করছিলেন। কাছে যেতেই উঠে দাঁড়ালেন। কি করছেন, জিজ্ঞাস করতেই বললেন গাছের গোঁড়ালি ঠিক করে দিচ্ছি। যেন এক গাছ আরেক গাছের ওপর হেলে পড়তে না পারে।
বগুড়ার শেরপুর উপজেলার সবজি খ্যাত গ্রামের খেঁটে খাওয়া মানুষগুলোর নিত্যদিনের চিত্র এটি। কেননা তারা বছরজুড়েই আবাদ করেন রকমারি সব সবজি।
এরই ধারাবাহিকতায় এখন তারা উঠতি বিভিন্ন জাতের সবজি নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন বলে বাংলানিউজকে জানান শাহ আলম, আমজাদ হোসেন, রফিকুল ইসলামসহ একাধিক সবজি চাষি।
শামছুর রহমান ও গোলাম মোস্তফাসহ একাধিক সবজি চাষি বাংলানিউজকে জানান, এক বিঘা জমিতে ফুলকপি চাষ করতে সর্বোচ্চ ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা ব্যয় হয়। অথচ মাত্র কয়েক মাসের ব্যবধানে তা বিক্রি করে খরচ বাদ দিয়ে প্রায় ৩০-৪০ হাজার টাকা আয় হয়। তাই এসব গ্রামের কৃষকদের সবজি ছাড়া অন্য কোনো ফসল চাষের ব্যাপারে তেমন একটা আগ্রহ নেই।
সরেজমিন দেখা যায়, কেউ জমি থেকে সবজি তুলছেন, আবার কেউ খেতের পরিচর্যা করছেন। আবার কেউ কেউ নতুন করে জমি তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
কথা হয় বাংড়া গ্রামের সবজি চাষি জাবেদ আলী, মোসলেম উদ্দিন, ফুলবাড়ির আমজাদ হোসেন, আনছার আলী, রফিকুল ইসলাম, কালসিমাটির আব্দুল বাকী ও হায়দার আলীর সঙ্গে।
তারা বাংলানিউজকে জানান, প্রায় ২০-২৫ বছরের ব্যবধানে এসব গ্রামে সবজি চাষে বিপ্লব ঘটেছে। এখানকার কৃষকরা সবজি চাষে নিজেরাই অভিজ্ঞ হয়ে উঠেছেন। এসব গ্রামে শীত-গ্রীস্ম বলে কোনো কথা নেই। বছরের বারো মাসই এখানে বিভিন্ন জাতের সবজির চাষ করা হয়ে থাকে। সবজি চাষেও খরচ একেবারে কম নয় বলে জানান তারা। সবজির জমিতে প্রচুর পরিমাণ সার ও কীটনাশক দিতে হয়। তারপরও তারা সবজি চাষ করেই লাভবান হচ্ছেন।
এদিকে, দিন দিন এ উপজেলায় সবজি চাষির সংখ্যা বেড়েই চলেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বর্তমানে উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে গাড়িদহ ছাড়াও খামারকান্দি, খানপুর, মির্জাপুর, সুঘাট, সীমাবাড়ী ইউনিয়নে ব্যাপকভাবে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ হচ্ছে। এছাড়া অন্য ইউনিয়নগুলোতেও কিছু কিছু সবজি চাষ হচ্ছে বলে জানায় সূত্রটি।
এক নজরে সবজি চাষ
শেরপুর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তা আব্দুর রহিম বাংলানিউজকে জানান, এ উপজেলার মধ্যে গাড়িদহ ইউনিয়নের একটি বৃহৎ অংশে বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করা হয়ে থাকে। সেখানকার জমিও সবজি চাষের জন্য উপযোগী।
তিনি আরও জানান, অন্যান্য ফসল চাষের তুলনায় সবজি চাষ সবচেয়ে বেশি লাভজনক। ভোক্তা পর্যায়ে সব সময় সবজির চাহিদা রয়েছে। মানুষও এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি সবজি খায়। এছাড়া মানুষের পুষ্টিজ্ঞান অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। সব মিলিয়ে বাজারে সারা বছরই সমানহারে সবজির চাহিদা থাকায় কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ভাল দাম পাচ্ছেন। এসব কারণে বর্তমানে পুরো উপজেলায় সবজি চাষ ছড়িয়ে পড়েছে।
এই কর্মকর্তা জানান, সবজিখ্যাত গ্রামে গ্রামে তার অফিসের কর্মকর্তারা প্রায় নিয়মিত পরিদর্শনে যান। তারা ফসলের রোগ-বালাই সম্পর্কে কৃষকদের নানা পরামর্শ দিয়ে থাকেন। রোগের নমুনা দেখে প্রয়োজনীয় চিকিৎসার দিক নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এছাড়া বিভিন্ন সময় কৃষকদের প্রশিক্ষণ ও টেকনোলজি সাপোর্ট পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে বলে দাবি করেন এই কর্মকর্তা।
বাংলাদেশ সময়: ০১৪৫ ঘণ্টা, মার্চ ২২, ২০১৫