ঢাকা: কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনার পরও খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে পারেনি রাষ্ট্রায়াত্ব ব্যাংকগুলো। এ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
২০১৪ সালে সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী শীর্ষ খেলাপিদের কাছ থেকে ঋণ আদায় করতে পারেনি সরকারি ব্যাংকগুলো। দুই হাজার ১শ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে সোনালী ব্যাংক আদায় করেছে সাতশ ৩৮কোটি টাকা।
এক হাজার কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে অগ্রণী ব্যাংক চারশ ৪৫ কোটি, ১৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রূপালী ব্যাংক আদায় করেছে একশ ২৫ কোটি ও ৮শ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে জনতা ব্যাংক আদায় করতে পেরেছে চারশ ৮৫ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, ২০১৪ সাল শেষে রাষ্ট্রায়ত্ত সোনালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ৮ হাজার ২২৪ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ২৮.৫ শতাংশ।
রূপালী ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ হাজার ২৩৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১০.৩১ শতাংশ। জনতা ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ছিল ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা, যা বিতরণ করা ঋণের ১১.৪১ শতাংশ। ১৭ শতাংশের ওপরে খেলাপি ঋণ রয়েছে অগ্রণী ব্যাংকেরও।
তবে সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে বেসিক ব্যাংক। গত বছরের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকটির খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় ৬ হাজার ৩শ ৯ কোটি টাকা, বিতরণ করা ঋণের যা ৫৩.৩২ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে চলতি মাসের শুরুর দিকে সোনালী, রূপালী, অগ্রণী, জনতা ও বেসিক ব্যাংকে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এতে খেলাপি ঋণ আদায়ে কার্যকর ব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়েছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে ব্যাংকিং খাতের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার নির্দেশ ছিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ এ সময় সীমার মধ্যে থাকলেও তাতে ব্যর্থ হয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক।
বিরাজমান পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের খেলাপি ঋণ উদ্বেগজনক পর্যায়ে থাকার কারণ ব্যাখ্যাসহ তা আদায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী এ প্রসঙ্গে বলেন, সামগ্রিকভাবে খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে নেমে এলেও সরকারি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে তা হয়নি। এ কারণে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকগুলোকে বিশেষ তদারকির মধ্যে রাখা হয়েছে। ব্যাংকগুলোর খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ দাঁড়ায় ৯.৬৯ শতাংশ; সেপ্টেম্বর শেষে যেখানে খেলাপি ঋণের হার ছিল ১১.৬ শতাংশ। যদিও ২০১৩ সালে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণের হার ছিল বেশ কম ৮.৯৩ শতাংশ। আর ২০১২ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপি ঋণ ছিল বিতরণ করা ঋণের ১০.৩ শতাংশ।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম ফরিদ উদ্দিন বলেন, খেলাপি ঋণের বিষয়ে শাখা ও জোন ভিত্তিক লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে তা মনিটরিং করা হচ্ছে। এছাড়া বড় ঋণ গ্রহিতাদের সঙ্গে আমি নিজেই আলোচনা করছি। এভাবে চলতে থাকলে চলতি বছরই খেলাপি ঋণ কমিয়ে অন্যান্য ব্যাংকের চেয়ে ভালো অবস্থানে যাবে রূপালী ব্যাংক।
বাংলাদেশ সময়: ০৭২১ ঘণ্টা, মার্চ ২৩, ২০১৫