ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

ব্যাংকিংসহ নানা সেবা যুক্ত হচ্ছে ডাক বিভাগে

মফিজুল সাদিক, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৩ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫
ব্যাংকিংসহ নানা সেবা যুক্ত হচ্ছে ডাক বিভাগে

ঢাকা: বর্তমান যুগে ই-মেইল, মোবাইল, ফেসবুক-টুইটারে দ্রুততম যোগাযোগের সুযোগ অবারিত। এ কারণে ডাক বিভাগের মান্ধাতা আমলের কার্যক্রম এখন সংকুচিত ও বিলুপ্তপ্রায়।

চিঠি, টেলিগ্রাম আর মানি অর্ডার  করার সাবেকি পদ্ধতির প্রয়োজনও আজ ফুরিয়েছে। অথচ এক সময় মানুষে-মানুষে যোগাযোগের মাধ্যম বলতে ছিল এই চিঠি, টেলিগ্রাম ইত্যাদি। সাধারণত দূরদূরান্ত থেকে একটি চিঠির জন্য দিনের পর দিন ধরণা দিতে হতো ডাকঘরে। আজ ডাকঘরের সেসব ভূমিকা ক্রমশ সংকুচিত হতে হতে পুরনো ডাক ব্যবস্থাই বলতে গেলে প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় ডাক ব্যবস্থার আধুনিকায়ন এখন সময়ের দাবি।

এই দৈন্যদশা থেকে ডাক বিভাগ তথা দেশের সাড়ে ৮ হাজার ডাকঘরের কার্যক্রমকে নতুনভাবে সাজাতে উদ্যোগী হয়েছে সরকার।
 
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, তথ্য ও প্রযুক্তির সঙ্গে তাল মিলিয়ে আবারও ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশের ডাকঘরগুলো। বাণিজ্যিক ব্যাংকিংসহ নানা ধরনের আধুনিক সেবা যুক্ত হবে ডাক ব্যবস্থায়। গ্রামীণ ডাক ঘরগুলোতে ই-সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া জনসাধারণকে এই সুবিধা দেওয়া হবে। বর্তমানে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় মুক্তিযোদ্ধা ভাতা, দরিদ্র নারীদের মাতৃত্বকালীন ভাতা, বিধবা ভাতা, পরিত্যক্ত মহিলা ভাতাসহ আরও কিছু ভাতা এখন পাওয়া যায় ডাকঘরগুলোর মাধ্যমে।
 
বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মতো অটোমেডেট টেলার মেশিন (এটিএম) কার্ডের মাধ্যমে বাংলাদেশ ডাক বিভাগ প্রবর্তিত পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে টাকা তোলা যাবে। চলমান ‘পোস্ট ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্পের আওতায় এ সুবিধা পেতে যাচ্ছে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি।
 
বাংলাদেশ ডাক অধিদফতর সূত্র জানায়, ডাকঘরের মাধ্যমে বাংলাদেশের গ্রামীণ জনসাধারণকে পোস্ট ই-সেন্টারের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে ই-কমার্স, এম-কমার্স, ইউটিলিটি বিল, মোবাইল মানি অর্ডার, পোস্টাল ক্যাশ কার্ড, মোবাইল ব্যাংকিং, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং বিমা প্রিমিয়ামের সুবিধা দেওয়া হবে। এছাড়া গ্রামের সাধারণ জনগোষ্ঠিকে ভাতার টাকার জন্য ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের কাছে আর ধর্না দিতে হবে না। তারা এখন ডাকের মাধ্যমে টাকা ওঠাতে পারবেন।
 
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. ফিরোজ সালাহউদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ইন্টারনেটে যত আধুনিক সেবা পাওয়া সম্ভব তার সবই ডাক বিভাগে পাওয়া যাবে। খুব সহজে ই-মানি ট্রান্সফারও করা যাবে। গ্রামের পিছিয়ে পড়া মানুষ ইন্টারনেট-ভিত্তিক সকল সুযোগ সুবিধা ভোগ করতে পারবেন। বাণিজ্যিক ব্যাংকসহ নানা প্রকারের ব্যাংকিং সুবিধা মিলবে ডাকঘরে। ’
 
তিনি আরও বলেন, প্রকল্পের আওতায় নানা ধরনের ইক্যুইপমেন্ট কেনা হবে। এর সব টাকা সরকারি তহবিল থেকে মেটানো হবে। ’
 
ডাকঘরগুলোকে হালফিল প্রযুক্তিতে সজ্জিত করে এগুলোর সেবাদান কার্যক্রমকে ঢেলে সাজাতে ব্যয় করা হবে ৫৪০ কোটি ৯৮ লাখ টাকা। এটা করা হবে ‘পোস্ট-ই-সেন্টার ফর রুরাল কমিউনিটি’ প্রকল্পের আওতায়।
 
ডাক অধিদফতর জানায়, ২০১৭ সালের জুন নাগাদ ডাকঘরগুলোর মাধ্যমে যাবতীয় আধুনিক সুবিধা পাবেন পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠি।
 
ডাক অধিদফতর সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী দেশের সব ডাকঘরের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় সব ভাতা ইলেকট্রনিক পদ্ধতিতে দ্রুত প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন।
 
এরই পরিপ্রেক্ষিতে ডাকঘরগুলোতে ই-সেন্টার স্থাপনের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় এসব ভাতা দিতে সংশোধিত প্রকল্প উন্নয়ন প্রস্তাব (ডিপিপি) প্রস্তুত করেছে ডাক অধিদপ্তর। ডিপিপি’তে পয়েন্ট অব সেল (পিওএস) মেশিনসহ অন্যান্য যন্ত্র ক্রয়ের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
 
সূত্র আরও জানায়, পোস্টাল ক্যাশ কার্ডের মাধ্যমে ভাতার টাকা দেওয়ার লক্ষ্যে ডাক অধিদপ্তর ৮ হাজার ৫০০ ডাকঘরের প্রতিটিতে ২টি করে মোট ১৭ হাজার পিওএস মেশিন এবং ১টি করে ৮৫০০টি ও অতিরিক্ত আরও ১৫০০টিসহ মোট ১০ হাজার ফিঙ্গার ভেইন ডিভাইস কেনার উদ্যোগ নিচ্ছে।
 
পয়েন্ট অব সেলস (পিওএস) ও ফিঙ্গার ভেইন ডিভাইস কিনতে ৭৬ কোটি ১০ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এ ব্যয় অনুমোদিত ডিপিপিতে জেনারেটর ক্রয় ও জেনারেটর পরিচালনার জন্য জ্বালানি বাবদ বরাদ্দকৃত ৮৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা থেকে খরচ করা হবে। দেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতি হওয়ায় প্রায় সব ডাকঘরেই বৈদ্যুতিক সংযোগ নেওয়া সম্ভব হবে।
 
তাই জেনারেটর কেনা ও জ্বালানি বাবদ ৮৩ কোটি ৫৫ লাখ টাকা সাশ্রয় হবে। এই সাশ্রয়কৃত অর্থ থেকে পিওএস ও ফিঙ্গার ভেইন ডিভাইসগুলো কিনবে ডাক বিভাগ।   এছাড়া প্রতিটি ডাকঘরে একটি করে জেনারেটর থাকবে। এই লক্ষ্যে ২৫ কোটি টাকা খরচ করা হবে।

অপরদিকে জেনারেটর পরিচালনার জ্বালানি বাবদ খরচ করা হবে ৫৯ কোটি টাকা।
 
ডাকঘরগুলোতে আধুনিক সেবা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য প্রতিটি ডাকঘরে তিনটি করে মোট ২৫ হাজার ৫০০ ল্যাপটপ ও কম্পিউটার দেওয়া হবে।
অপরদিকে ল্যাপটপ ছাড়ও প্রতিটি ডাকঘরে দু’টি করে প্রিন্টার, একটি করে স্ক্যানার, একটি মডেম, একটি ওয়েব ক্যামেরা, একটি ফটোপ্রিন্টার ও একটি স্মার্টফোন দেওয়া হবে।
 
ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ সূত্র জানায়, গ্রামীণ এলাকায় ডাক বিভাগের ৮ হাজারটি এক্সট্রা ডিপার্টমেন্টাল কেন্দ্র, ৪৮৮টি উপজেলা ও ১২টি সাব ডাকঘরকে ই-সেন্টারে রূপান্তর করা হবে। এর মধ্য দিয়ে দেশব্যাপী প্রত্যন্ত অঞ্চলে অবস্থিত ডাক নেটওয়ার্কের মাধ্যমে আইসিটি ভিত্তিক সেবাসমূহ জনসাধারণকে পৌঁছে দেওয়া হবে। ’
 
প্রকল্পটি জানুয়ারি ২০১২ থেকে ডিসেম্বর ২০১৫ মেয়াদে প্রকল্পের বাস্তবায়ন মেয়াদ ধরা হয়েছিল। কিন্তু ব্যাংকিংসহ নানা আধুনিক সেবা যুক্ত করায় প্রকল্পের মেয়াদ দুই বছর বাড়ানো হয়েছে।
 
পরিকল্পনা কমিশনে সময় বৃদ্ধির প্রস্তাবে প্রকল্প পরিচালক এস এস ভদ্র স্বাক্ষরিত চিঠিতে দেখা গেছে, দেশব্যাপী প্রত্যন্ত অঞ্চলের ডাকঘরগুলোর মাধ্যমে জনসাধারণের কাছে আইসিটিভিত্তিক সেবাসমূহ পৌঁছে দেওয়া হবে। সেই লক্ষ্যে প্রকল্পের মেয়াদ আরও দুই বছর বাড়ানো হয়েছে।

পিওএস মেশিন ব্যবহারের জন্য ডাকঘরে রাখা হবে ম্যাগনেটিক স্ট্রিপ কার্ড, চিপ-বেইজপ কার্ড। পাওয়া যাবে বাণিজ্যিকসহ সব ধরনের আধুনিক ব্যাংকিং সুবিধা।

বাংলাদেশ সময়: ১৯৫৭ ঘণ্টা, মার্চ ২৮, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।