ঢাকা: দেশিয় কাঁচা চামড়ার বাজারে ধসের আশঙ্কায় রয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বিশ্ববাজারে কাঁচা চামড়ার দাম পড়ে যাওয়ার পর দেশি চামড়াশিল্প চরম বিপর্যয়ে বলে আশঙ্কা করছেন তারা।
গত কোরবানির সময় সংগৃহীত চামড়া অধিকাংশ ট্যানারিতেই মজুদ রয়েছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। তাই, এবার ঈদের সময় কাঁচা চামড়ার বাজারে ব্যাপক ধসের আশঙ্কা করছেন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।
বিশ্ববাজারে বর্তমান প্রতি বর্গফুট চামড়া বিক্রি হচ্ছে ১ ডলার ৭০ সেন্ট থেকে ৮০ সেন্ট পর্যন্ত; যা গত কোরবানির সময় ছিল ২ ডলার ২৫ সেন্ট। গত কোরবানির পর থেকে অব্যাহতভাবে চামড়ার দাম কমতে থাকায় এবার বড় ধরনের ধসের শঙ্কা করা হচ্ছে।
এছাড়া বাংলাদেশের ট্যানারিপল্লীর পরিবেশ ভালো নয়, এ অজুহাতে যুক্তরাষ্ট্রের ক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে চামড়া কিনতে অনাগ্রহ দেখাচ্ছেন বলেও ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ইতোমধ্যে, এ অজুহাতে বেশকিছু এলসি বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এটা এ ব্যবসার জন্য বড় ধরনের হুমকি হিসেবে দেখছেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা। একাধিক ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে এ সব তথ্য জানা যায়।
বাংলাদেশ ফিনিস লেদার, লেদার গুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের (বিএফএলএলএফইএ) সভাপতি আবু তাহের বাংলানিউজকে জানান, গত বছরের (২০১৪) মতো এবারও ৩০-৪০ লাখ পশু কোরবানি হতে পারে। তবে এবার কাঁচা চামড়ার বাজার অনেক কমে যাবে। কারণ, বিশ্ববাজারেই দাম কম। তাছাড়া আমাদের দেশের প্রতিটি ট্যানারিতেই গত ঈদের ৪০ ভাগের বেশি চামড়া এখনো মজুদ রয়েছে। এইগুলোই বিক্রি করতে পারছি না। নতুন চামড়া কিনবো কীভাবে!
আসছে ঈদ-উল আজহায় কাঁচা চামড়ার বাজারে ধসের আশঙ্কা প্রকাশ করে ফিনিস লেদার অ্যান্ড লেদার গুডস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি এবং হেলাল ট্যানারির সত্ত্বাধিকারী মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বাংলানিউজকে মোবাইল ফোনে বলেন, বর্তমানে বিশ্ব বাজারে চামড়ার দাম অনেক কম। আমরা সাধারণত যেসব দেশে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য পাঠাই, সেখানে এখন শতকরা ২০ শতাংশ কম দামে এ সব পণ্য বিক্রি হচ্ছে। এর প্রভাব আমাদের বাজারেও পড়বে।
তিনি বলেন, আমাদের কাঁচা চামড়ার সিংহভাগই আসে ঈদ-উল আজহার সময়। কিন্তু এই সময় বিশ্ব বাজারে দাম পড়ে যাওয়া চামড়া শিল্পের ওপর একটি নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
তিনি আরো জানান, গত ঈদের সময় সংগৃহীত চামড়ার ৩০ থেকে ৪০ ভাগ এখনো স্টকে রয়েছে। এবার আবার নতুন করে কীভাবে চামড়া সংগ্রহ করবো, সেটা নিয়েই দুঃশ্চিন্তায় আছি।
বাংলাদেশের রফতানিযোগ্য পণ্যের মধ্যে কাঁচা চামড়াও প্রথম সারির একটি। রফতানি আয়ের দিক দিয়ে কাঁচা চামড়ার স্থান তৃতীয় স্থানে। দেশে প্রস্তুতকৃত চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের প্রায় ৯৫ ভাগই বিদেশে রফতানি হয়। প্রতিবছর কোরবানির ঈদে সবচাইতে বেশি চামড়া সংগ্রহ করা হয়। এ চামড়ার প্রায় ৬০ শতাংশই আসে ঈদ-উল আজহায়।
ব্যবসায় ঝুঁকির কথা স্বীকার করে আনোয়ার টেনার প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক দিলজাহান ভূঁইয়া বাংলানিউজকে বলেন, বর্তমানে আমাদের ফরেন (বিদেশি) মার্কেট খুবই খারাপ। ফরেন মার্কেটে চামড়ার চাহিদা অনেক কমে গেছে। গত ঈদে যে সব চামড়া স্টকে রাখা ছিল, সেগুলোই এখনো বিক্রি করতে পারিনি। তাই, আসছে কোরবানির ঈদে চামড়া বাজার কী হবে, তা নিয়ে শঙ্কায় আছি।
তিনি বলেন, দাম কমা বা বৃদ্ধি বড় কথা নয়; আমরা চামড়া রফতানি করতে পারবো কিনা, সেটাই এখন দেখার বিষয়।
বাংলাদেশের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের বড় বাজার হলো- জার্মানি, ইতালি, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস, স্পেন, রাশিয়া, ব্রাজিল, জাপান, চীন, সিঙ্গাপুর, তাইওয়ান, কোরিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। সারাবিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ঈদ-উল আজহার সময় কোরবানির চামড়ার সিংহভাগ আসে। কাঁচা চামড়ার মধ্যে গরু, মহিষ, ছাগলের চামড়াই উল্লেখযোগ্য।
তবে এবার বিশ্বের বাজারে দাম কমার অজুহাত দেখিয়ে ব্যবসায়ীরা সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করতে পারেন বলে অভিযোগ করেছেন অনেকেই। বিশেষ করে মধ্যসত্ত্বভোগীরা।
বাংলাদেশ সময়: ১৬০০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০২, ২০১৫
এসএম/এবি