ঢাকা: সারাদেশে উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়নের অগ্রগতির চেয়ে ব্যয় ও সময় বৃদ্ধিই যেন এখন প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। পরিকল্পনায় অদূরদর্শিতা ও বাস্তবায়নের মন্থর গতির কারণে বার বার সময় ও ব্যয় বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পটির।
এপ্রিল ২০১১ থেকে জুন ২০১৫ মেয়াদে প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৭৭৪ কোটি ৮৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। বর্তমানে এই প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা।
মূল অনুমোদিত প্রকল্পে ২০০টি উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়। সর্বশেষ প্রকল্পের আওতায় ২৭টি উপজেলাকে অতিরিক্ত অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। অথচ এই অজুহাত দেখিয়ে ৬৬৫ কোটি টাকা বাড়তি অর্থের আবেদন করেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতর (এলজিইডি)।
পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশন বরাবর বাড়তি অর্থের আবেদন করেছে এলজিইডি।
সময় ও অস্বাভাবিক ব্যয় বাড়ানো প্রসঙ্গে এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মুসলেহ উদ্দিন বাংনিউজকে বলেন, প্রকল্পের কার্যক্রম ২০০৯ সালে শুরু হয়েছিল। তখনকার রেট-শিডিউল আর বর্তমানের রেট-শিডিউল এক নয়। প্রকল্প বাস্তবায়নের উপকরণ রড, সিমেন্ট ও শ্রমিকের মজুরি খরচ সবই বেড়েছে। যে কারণে পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে।
সময় কেন বাড়ানো হয়েছে? প্রশ্নের জবাবে প্রকল্প পরিচালক বলেন, প্রকল্পের আওতায় নতুন কিছু উপজেলাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যে কারণে সময়ও বাড়ানো হয়েছে।
এলজিইডি সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পের প্রধান উদ্দেশ্য উপজেলা পর্যায়ে সম্প্রসারিত অফিস ভবন নির্মাণ করে প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা নিশ্চিত করা। নানা অজুহাতে সময় ও ব্যয় বেড়েছে প্রকল্পের। এপ্রিল ২০১১ থেকে জুন ২০১৫ মেয়াদে প্রকল্পের মোট ব্যয় ছিল ৭৭৪ কোটি ৮৫ লাখ ৩৪ হাজার টাকা। পরবর্তীতে প্রকল্পের ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ১৯৯ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। সময় বাড়ানো হয় এপ্রিল ২০১১ থেকে জুন ২০১৭ সাল নাগাদ। আর একই মেয়াদে আবারও প্রকল্পের ব্যয় ১ হাজার ৪৩০ কোটি টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে এলজিইডি।
মূল অনুমোদিত প্রকল্পের আওতায় ২০০টি উপজেলা কমপ্লেক্স নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রথম সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় ২০৪টি উপজেলা প্রকল্পের আওতায় আনা হয়। প্রস্তাবিত দ্বিতীয় সংশোধিত প্রকল্পের আওতায় মোট উপজেলার সংখ্যা দাঁড়ায় ২২৭টি।
এলজিইডি জানায়, নতুন চারটি উপজেলা নাটোরের নলডাঙ্গা, ময়মনসিংহের তারাকান্দা, খাগড়াছড়ির শুইমারা ও সিলেটের ওসমানী নগর উপজেলাকে প্রকল্পের আওতায় আনা হয়েছে। এই চারটিসহ প্রকল্পের আওতায় এখন মোট উপজেলার সংখ্যা ২২৭টি।
এছাড়া, ৪৫টি উপজেলায় আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে পাহাড়ি উপজেলা থানচি, রুমাসহ কিছু কিছু উপজেলায় পুরান জরাজীর্ণ আবাসিক ভবনের জায়গায় নতুন আবাসিক ভবন নির্মাণ করা হয়েছে।
এলজিইডি সূত্র জানায়, ১৯৮২ সালের অনুমোদিত ডিজাইন অনুযায়ী দেশের প্রতিটি উপজেলায় ৪০ হাজার বর্গফুট অফিস স্পেস থাকার কথা। কিন্তু অধিকাংশ উপজেলায় অফিস স্পেস অনুমোদিত ডিজাইনের চেয়ে কম। ফলে আশির দশকে নির্মিত অধিকাংশ উপজেলা কমপ্লেক্সগুলোতে অফিসের স্থান সংক্রান্ত সমস্যা দেখা দিয়েছে।
এতে উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যানদের অফিস স্থাপন, উপজেলা কমপ্লেক্স সম্প্রসারণের জন্য একটি আলাদা একতলা হলরুমসহ চার তলা ভবন নির্মাণের জন্য প্রকল্পটি গ্রহণ করা হয়। কিন্তু বাস্তবায়নে বিলম্বের কারণে প্রকল্পের সুফল পাওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলাবাসী।
এলজিইডি সূত্র জানায়, জুন ২০১৫ পর্যন্ত প্রকল্পটির অনুকূলে ২১৩ কোটি ৫৮ লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। যা অনুমোদিত প্রকল্পের মাত্র ১৭ দশমিক ৮১ ভাগ। এই সময়ে প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি মাত্র ২২ শতাংশ। প্রকল্পের জন্য ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে।
প্রকল্পটি সরকারি নিজস্ব তহবিলের অর্থ দিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। প্রস্তাব অনুযায়ী প্রকল্পটি অনুমোদিত হলে আগামী ২০১৬-১৭ অর্থবছরে অবশিষ্ট ১ হাজার ১১৬ কোটি ৪২ লাখ বরাদ্দ দেওয়ার কথা। এই অর্থ বরাদ্দ না পেলে নতুনভাবে আবারও জটিলতায় পড়বে প্রকল্পটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৫২৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৫
এমআইএস/জেডএস
** ভবিষ্যতে ৬০ লাখ মুসলমান হজ করতে পারবেন