ঢাকা: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) পেতে বাংলাদেশের আরও অগগ্রতি দেখতে চায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক পোশাক ক্রেতাদের জোট অ্যালায়েন্স।
বৃহস্পতিবার (০৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের সঙ্গে বৈঠক শেষে জোটটির নির্বাহী পরিচালক জেমস এফ মরিয়ার্টি এসব কথা বলেন।
মরিয়ার্টির নেতৃত্বে জোটের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রীর অফিস কক্ষে বৈঠক করেন ও শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপ করেন। বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তা বিষয়ে তারা কথা বলেন।
‘জিএসপি প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অগ্রগতিতে সন্তুষ্ট কি-না’- এমন প্রশ্নের উত্তরে বাংলাদেশে নিযুক্ত আমেরিকার সাবেক এ রাষ্ট্রদূতের উত্তর ছিল পুরোপুরিই কূটনৈতিক ধাঁচের।
তিনি বলেন, জিএসপি পেতে বাংলাদেশ অনেক ভালো অগ্রগতি দেখিয়েছে। আশা করি, আরও ভালো করবে। এতে আরও অগ্রগতি দেখতে চাই।
মরিয়ার্টি বলেন, শুধু অ্যালায়েন্স কর্মকর্তা হিসেবে নয়, পুরনো বন্ধুত্ব-সম্পর্কের সূত্র ধরেও এসেছি। বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপত্তা প্রশ্নে অগ্রগতি দেখতে এসেছি। আমরা চাই এদেশে কোনো ফ্যাক্টরি যেন বন্ধ না হয়, আরও ফ্যাক্টরি গড়ে ওঠে। শ্রমিকদের কর্মসংস্থান হোক। তারা তাদের প্রাপ্য নিরাপত্তা পাক।
বাংলাদেশের প্রতি অ্যালায়েন্সের ভূমিকাকে অনেকেই নেতিবাচক বলে জানেন। এ প্রসঙ্গে মরিয়ার্টি বলেন, লোকে কী বলে, তার চেয়ে জরুরি- এ দেশের শ্রমিকরা অধিকার পাচ্ছেন কি-না। অ্যালায়েন্স তাদের অধিকার পেতে দেখতে চায়।
তিনি বলেন, দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে আলাপ-আলোচনায় অগ্রগতির তথ্য উঠে আসবে। এটি ভালোই হবে।
অ্যালায়েন্স টিমের এ সফর বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক হবে বলে মনে করেন তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, অ্যালায়েন্স টিম আসায় ভালো হয়েছে। অ্যাকর্ড নিয়ে হয়তো কিছু কথা থাকতে পারে। কিন্তু অ্যালায়েন্স আমাদের সহযোগিতা করেছে।
বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক ক্রেতাগোষ্ঠীর আস্থা ফিরেছে বলেও মন্তব্য করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ক্রেতাগোষ্ঠী আমাদের প্রতি আস্থা ফিরে পেয়েছে। গত আগস্টে রফতানিতে বাংলাদেশ দুই দশমিক ৭১৯ বিলিয়ন ডলার আয় করেছে, গ্রোথ ২৭ শতাংশ। এভাবে চললে ২০২১ সালের ‘টার্গেট-৬০ বিলিয়ন’-এ পৌঁছানো মোটেই দুরূহ হবে না বলে মনে করেন এ মন্ত্রী।
মন্ত্রী বলেন, এর আগে দেশে বিরোধী দলের নাশকতা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে আস্থা কমে গিয়েছিল। ক্রেতারা অর্ডার কম দিয়েছিল। এখন দেশে চারদিক থেকে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি ভালো রয়েছে।
‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকার বাণিজ্য সুবিধা (জিএসপি) ফিরে পেতে যা যা করা সম্ভব, তার সবটুকুই বাংলাদেশ করেছে। আমেরিকার দেওয়া ১৬টি শর্তের সবগুলোই বাংলাদেশ যথাসম্ভব পূরণ করেছে। তাই জিএসপি বিষয়ে তাদের পুনর্বিবেচনা আশা করছি’- বলেন মন্ত্রী।
তিনি বলেন, রানা প্লাজা ধসের ঘটনাটি ছিল আমাদের জন্য ‘ওয়েক আপ কল’। আমরা সতর্ক হয়েছি। গত দুই বছরে এমন কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। ৩২টি ঝুঁকিপূর্ণ কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অ্যালায়েন্স বন্ধ করেছে ৫টি। এছাড়া বাকি ৩৫টি কম ঝুঁকির কারখানায় কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। অ্যালায়েন্স ও অ্যাকর্ড এক্ষেত্রে একসঙ্গে কাজ করেছে। সব মিলিয়ে ক্রেতাদের আস্থা ফিরে আসার ঘটনায় তিনি এসবের সংশ্লিষ্টতা দেখান।
তোফায়েল বলেন, আমাদের শ্রমিকদের বেতন ২১৯ শতাংশ বেড়েছে। কারও বেতনই এখন সাড়ে ৭ হাজার টাকার নিচে নয়। কারও কোনো অভিযোগ নেই। কাজের পরিবেশ অনেক ভালো। আমেরিকার প্রতিনিধিরা চাইলে শ্রমিকদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলতে পারেন। তাহলেই বুঝতে পারবেন যে, শ্রমিকরা ভালো আছেন। তাদের নিরাপত্তা রয়েছে।
শর্তের অন্যতম ‘ইপিজেড’ প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ইপিজেডে আমরা ওয়ার্কার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন (ডব্লিউডব্লিউএ) করেছি। শ্রমিক, মালিক ও সরকার- তিন পক্ষই এখানে খুশি আছে। শ্রমিকরা ভালো বেতন পান। দুর্ঘটনা হয় না, কারখানার পরিবেশ শান্ত। শ্রমিকরা ট্রেড ইউনিয়ন চান, তবে নেতা হতে হবে তাদের মধ্যে কেউ।
তিনি বলেন, ৩০ শতাংশ মিলে ট্রেড ইউনিয়ন করলে আমরা অনুমতি দেই। শর্ত মোতাবেক আমরা পরিদর্শক নিয়োগ দিয়েছি, ডাটাবেজ করেছি।
জিএসপি’তে ১২২ দেশের মধ্যে বাংলাদেশ নেই- প্রসঙ্গে ব্যাখ্যা দেন মন্ত্রী। তিনি বলেন, যাদের জিএসপি’র মেয়াদ শেষ হয়েছে, তারা সেটির নবায়ন পেয়েছে। এখানে বাংলাদেশকে মেলালে হবে না। আমাদের বিষয়টি ভিন্ন।
তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউএসটিআর প্রতিনিধিরা আসবেন, আমাদের সচিবদেরও যাওয়ার কথা রয়েছে। এভাবে এ বিষয়ে অগ্রগতিগুলো আলোচনা হবে। নভেম্বরে ‘টিকফা’ নিয়ে বৈঠক হবে।
প্রতিনিধি দলে আরও ছিলেন অ্যালায়েন্স ফর বাংলাদেশ ওয়ার্কার সেফটি’র যুক্তরাষ্ট্র অফিসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা মারা এম বাট, বাংলাদেশ অফিসের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা ইয়ান স্পলডিং, বাংলাদেশ অফিসের সহ সভাপতি ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মেসবাহ রবিন।
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৫
এসকেএস/এএসআর
** ৭৭৫ কোটির প্রকল্পের ব্যয় এখন ১৪৩০ কোটি!