ঢাকা: সরকারি চাকরিজীবীরা যাতে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে জন্য মন্ত্রিসভায় অনুমোদিত পে-স্কেল থেকে সিলেকশন গ্রেড-টাইম স্কেল বিলুপ্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
সিলেকশন গ্রেড-টাইম স্কেল বিলুপ্তির কারণ জানিয়ে সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে কয়েকটি যুক্তি তুলে ধরা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, সিলেকশন গ্রেড-টাইম স্কেলে ১৯৭৩ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হতো। অনুমোদিত পে-স্কেলের প্রস্তাবে ৫ শতাংশ থেকে ৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে ক্রমপুঞ্জিত ইনক্রিমেন্ট দেয়া হবে। ২০০৯ সালের বেতনস্কেলে ২০তম গ্রেডের সঙ্গে ১৯তম গ্রেডের পার্থক্য (৪২৫০-৪১০০) মাত্র ১৫০ টাকা। নতুন পে স্কেলে ২০তম গ্রেডে বেতন বৃদ্ধি ১৯০ টাকা এবং ১৯ তম গ্রেডে ২১০ টাকা।
এতে দেখা যায়, সিলেকশন গ্রেড বা টাইমস্কেল পেলে একজন চাকরীজীবীর বেতন বাড়ে সামান্য। একই সঙ্গে যথাক্রমে ৮-১২ ও ১৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়। কিন্তু প্রস্তাবিত বেতন স্কেলে এই সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এতে ২০তম গ্রেডের চাকরিজীবীর বেতন ৫ শতাংশ হারে বেড়ে প্রথম বছরেই বাড়বে (৮৬৭০-৮২৫৯) ৪২০ টাকা। পরবর্তী বছর থেকেই ক্রমপুঞ্জিত হারে ৪৪০ টাকা করে বৃদ্ধি পেতে থাকবে।
একই সুবিধা প্রযোজ্য হবে প্রত্যেক গ্রেডের জন্য। এমনকি যারা ব্লক পদে চাকরি করেন তারাও স্বীয় স্কেলে এই ক্রমপুঞ্জিত আর্থিক সুবিধা পাবেন। যা সিলেকশন গ্রেড-টাইম স্কেল থেকে অনেক সহজলভ্য। প্রস্তাবিত বেতন স্কেলে ক্রমপুঞ্জিত ইনক্রিমেন্টের বিধান রাখা হয়েছে ৩ দশমিক ৭৫ থেকে ৫ শতাংশ। কারণ সনাতন পদ্ধতি অনুসারে বেতনস্কেল প্রস্তাবিত এই বেতনস্কেলে ইনক্রিমন্টে প্রতি বছর ক্রম বর্ধমান হারে বাড়তে থাকবে।
আগের বেতনস্কেলে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণীর চাকরিজীবীর জন্য একই ধরণের সিলেকশন গ্রেড বা টাইম স্কেলের বিধান থাকায় ক্যাডার, নন ক্যাডার ও ব্লক পদধারীদের মধ্যে অনেক পার্থক্য ছিল। এটি নতুন পে স্কেলে নেই।
চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীদের মধ্যে যারা সচিবালয়ে কর্মরত তারা ৮-১২-১৫ বছরে টাইম স্কেল প্রাপ্তির পাশাপাশি ১০ম বছরে সিলেকশন গ্রেড পেতেন। সচিবালয়ের বাইরের কর্মচারীরা এটি না পাওয়ায় তাদের মধ্যে চরম অসন্তোষ বিরাজ করতো। বর্তমান পে স্কেলে এগুলো দূর করা হয়েছে।
জাতীয় বেতন স্কেল ২০০৯ এর ৭(৬) দফা অনুযায়ী প্রথম শ্রেণীর পদে নিয়োজিত পঞ্চম গ্রেডের কর্মকর্তাদের জন্য ১০বছর পূর্তিতে শতভাগ সিলেকশন গ্রেড প্রদানের যে বিধান ছিল তা পরবর্তীতে ক্যাডার বৈষম্যের কারণে ২০১১ ও ২০১৩ সালে দুইবার সংশোধন করা হয়েছে। তারপরও আন্ত:ক্যাডার ও অন্ত:ক্যাডার বৈষম্যের নিরসন হয়নি।
এছাড়া সিলেকশন গ্রেড-টাইম স্কেল প্রদানের সময় চাকরির কাল গণনা ও স্কেল নির্ধারণের বিষয়ে জটিলতার সৃষ্টি হতো এসব জটিলতাকে কেন্দ্র করে সারা বছর মামলার উদ্ভব হতো। যা নিষ্পত্তি করতে দীর্ঘ সময় ও অর্থের ব্যয় হচ্ছে। নতুন পে-স্কেলে এ ধরণের বিষয়গুলো নেই।
এছাড়া আগে প্রকল্প হতে রাজস্ব খাতে স্থানান্তরিত বিভিন্ন গ্রেডের কর্মচারীদের ক্ষেত্রে প্রকল্পের প্রকৃত চাকরিকাল গণনা করে সিলেকশন গ্রেড-টাইম স্কেল গ্রেড প্রদানের সুযোগ ছিল না। এই সুযোগ সৃষ্টি করতে অনেক কর্মচারী রিট করে নিজের পক্ষে রায় নিয়েছেন। নতুন ঘোষিত পে স্কেল বাস্তবায়িত হলে এই সমস্যাগুলো আর থাকবে না।
বাংলাদেশ সময়: ২১০৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৭, ২০১৫
এসই/আরআই