ঢাকা, শনিবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অর্থনীতি-ব্যবসা

মধ্যপাড়া খনিকে সচল রাখতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ

মোস্তাফিজুর রহমান বকুল, পার্বতীপুর করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৮, ২০১৫
মধ্যপাড়া খনিকে সচল রাখতে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

পার্বতীপুর (দিনাজপুর): দিনাজপুরের পার্বতীপুরে মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনিতে পাথর বিক্রি ও উৎপাদনে মন্থরতা দেখা দেওয়ায় খনি সচল রাখতে একশ কোটি টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।

খনিকে সচল রাখতে এ অর্থ বরাদ্দ দিয়েছে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।



খনি সূত্র জানায়, মধ্যপাড়া কঠিন শিলাখনি ইয়ার্ডে প্রায় ৮০ কোটি টাকা মূল্যমানের ছয় লাখ টনেরও বেশি উন্নতমানের গ্রানাইট পাথর মজুদ রয়েছে। কিন্তু এ পাথর বিক্রিতে আশানুরুপ গতি নেই।

এছাড়া পাথর বিক্রিতে ধীরগতির কারণে অর্থ সংকটে পড়েছে খনি কর্তৃপক্ষ। অর্থাভাবে সময়মতো মাইনিং ইকুইপমেন্ট আমদানি করতে না পারায় দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি পাথর উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে।

ফলে খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি গত ১ আগস্ট থেকে তিন শিফটের মধ্যে দুই শিফটের কাজ বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়। এতে সাড়ে তিনশ শ্রমিক সাময়িকভাবে বেকার হয়ে পড়েছেন।

এ অবস্থায় খনিকে সচল রাখতে একশ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগ।

সূত্র জানায়, মধ্যপাড়া খনির পাথর মানসম্মত ও উৎকৃষ্ট মানের হলেও একটি বিশেষ গোষ্ঠী বিদেশ থেকে পাথর আমদানিতে আগ্রহী। সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পে মধ্যপাড়ার পাথর ব্যবহার করার সরকারি নির্দেশনা থাকার পরও তা মানছে না তারা।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে মধ্যপাড়া খনির এক কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, পাথর সংকটের কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চারলেন প্রকল্পের কাজ ব্যাহত হচ্ছে। এরপরও সড়ক ও জনপথ বিভাগের একটি চক্রের দৌরাত্মের কারণে সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মধ্যপাড়ার গ্রানাইট পাথর ব্যবহার করছে না। বিদেশ থেকে পাথর আমদানির পাঁয়তারা করছে তারা।

এদিকে, খনির উৎপাদন ও রক্ষণাবেক্ষণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জিটিসি চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে ভূগর্ভে নতুন স্টোপ (কূপের ধাপ) উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় মাইনিং ইকুইপমেন্ট আমদানির তাগাদা দিয়ে আসছে খনি কর্তৃপক্ষকে।

কিন্তু পাথর বিক্রি না হওয়ায় একদিকে অর্থ সংকট, অপরদিকে তৎকালীন দায়িত্বরতদের অদক্ষতায় জুলাই মাস পর্যন্ত তা আমদানি করা যায়নি।

এতে নতুন স্টোপ উন্নয়ন করতে না পারায় এবং বর্তমান উৎপাদনশীল পাঁচ ও ছয় নম্বর স্টোপে উত্তোলনযোগ্য পাথরের মজুদ প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে আসায় প্রতিদিন তিন শিফটের জায়গায় দুই শিফট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয় জিটিসি। এরফলে প্রতিদিন সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টন পাথরের পরিবর্তে গত ১ আগস্ট থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে মাত্র দেড় হাজার টন পাথর।

অপরদিকে, দুই শিফট বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাড়ে তিনশ শ্রমিককে অনির্দিষ্টকালের ছুটিতে পাঠানো হয়েছে। এছাড়া জিটিসিতে কর্মরত প্রায় ৭০ জন বিদেশি খনি বিশেষজ্ঞ ও কর্মকর্তার মধ্যে ৬০ জনই নিজ দেশে ফিরে গেছেন।

এ অবস্থায় খনির নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠান পেট্রোবাংলা গত ২২ জুলাই মধ্যপাড়া খনির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) প্রকৌশলী আবুল বাসারকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়। এছাড়া বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির এমডি আমিনুজ্জামানকে অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে মধ্যপাড়া খনির এমডির দায়িত্ব দেয়।

দায়িত্ব পেয়েই আমিনুজ্জামান অর্থ সংকট কাটিয়ে উঠতে চেষ্টা শুরু করেন। এরই অংশ হিসেবে গত ১৯ আগস্ট বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদের সভাপতিত্বে এক সভায় মধ্যপাড়া খনিকে ১০০ কোটি টাকা (ঋণ হিসেবে) বরাদ্দ দেওয়ায় সিদ্ধান্ত হয়।

মধ্যপাড়া গ্রানাইট মাইনিং কোম্পানি লিমিটেডের এমডি আমিনুজ্জামান সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) দুপুরে বাংলানিউজকে জানান, পাথর বিক্রি বাড়াতে সর্বাত্নক চেষ্টা চলছে। পাথর উত্তোলন যাতে বন্ধ না হয় সেজন্য শিগগির মাইনিং ইকুইপমেন্ট আমদানি করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮০৬ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৮, ২০১৫
এসআরd

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।