খাগড়াছড়ি: তিন পার্বত্য জেলায় পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে জুম চাষ অনেক আগে থেকেই হয়ে আসছে। এবার পাহাড়ে ধানের সঙ্গে উন্নত জাতের তুলা চাষের নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করেছে কৃষি বিজ্ঞানীরা।
এ প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা গেলে দেশে তুলা উৎপাদনে বিরাট মাইলফলক সূচিত হবে বলে মনে করছেন কৃষি বিজ্ঞানীরা।
পার্বত্য তিন জেলার পাহাড়ি টিলা ভূমির সনাতনী পদ্ধতির জুম চাষ করা হয়। ঐতিহ্যবাহী এ চাষে একই জমিতে ফলানো হয় ধান, নানা জাতের সবজি, আদা, হলুদ, তিলসহ হরেক রকম ফসল।
গবেষণায় জানা যায়, জুম চাষের উপযোগী জমিতে উন্নত জাতের তুলা চাষ করা সম্ভব। কৃষি বিভাগের হিসাব অনুযায়ী তিন পার্বত্য জেলায় ৫০ হাজার হেক্টর জুম চাষের উপযোগী জমি রয়েছে।
এ জমিগুলো উন্নত জাতের তুলা চাষের আওতায় আনা সম্ভব। জুমে উন্নত আমেরিকান জাতের তুলা চাষের সম্ভাব্যতা নিয়ে গত তিন বছর ধরে গবেষণা করে সফল হয়েছে তুলা উন্নয়ন বোর্ড।
সম্প্রতি কৃষি মন্ত্রণালয়ে ও কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা খাগড়াছড়ির বিভিন্ন স্থানে উন্নত জাতের তুলা গবেষণা প্লট পরিদর্শন করেন।
পরিদর্শন প্লটের তুলা চাষি জয়দেবী ত্রিপুরা জানান, আগে কার্পাস (জুম) তুলা চাষে করে ভালো ফলন হতোনা। কিন্তু উন্নত জাতের তুলা চাষ করার ফলে ফলনও ভালো, দামটাও অনেক বেশি। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার পাশাপাশি জুমিয়া (জুম চাষিদের) আত্মনির্ভরশীলতা তৈরি হচ্ছে, সেই সঙ্গে দেশে তুলা উৎপাদনে ব্যাপক ভুমিকা রাখতে পারে।
কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশনের (কেজিএফ) পৃষ্ঠপোষকতায় তুলা চাষে স্থানীয় জুম চাষিদের মধ্যে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। পাহাড়ে এর আগে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত তুলা দিয়ে পিনন, খাদি, গামছা তৈরির উপযোগী ছিল। এসব তুলা বিঘা প্রতি ৪৫ কেজি থেকে ৫০ কেজির বেশি উৎপাদন হতো না।
কিন্তু তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নতুন হাইব্রিড আমেরিকান জাতের টেক্সটাইল তুলার উৎপাদন দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। এ জাতের তুলা বিঘা প্রতি দেড়শ থেকে দু’শ কেজি উৎপাদন হচ্ছে। আড়া-আড়ি পদ্ধতিতে দুই লাইন ধানের পাশাপাশি এক লাইন তুলা পদ্ধতির চাষাবাদ মাটি ক্ষয় রোধসহ পরিবেশ সম্মত হওয়ায় জুম চাষিদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
তুলা উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক ফরিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, পাহাড়ের মাটি খুবই ঊর্বর। এই মাটিতে নতুন উদ্ভাবিত তুলা চাষ সম্ভব। আমরা যদি এখানকার ৫০ হাজার হেক্টর জুম চাষের উপযোগী জমিতে উন্নত জাতের তুলা চাষ করতে পারি, তাহলে দেশের ব্যাপক একটি চাহিদা পূরণ করা সম্ভব হবে। আর অন্য ফসলের সঙ্গে তুলা চাষ করে কৃষকদের আর্থিক উন্নয়ন ঘটানো যাবে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক হামিদুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, পাহাড়ের মানুষগুলোর জীবনের প্রধান অবলম্বন জুম চাষ। জুমে উৎপাদিত কৃষি পণ্য খেয়ে তারা বেঁচে থাকেন। এই চাষের সঙ্গে আয়বর্ধক দেশি তুলার সঙ্গে উন্নত জাতের তুলা যদি সংযোজন করা যায় তাহলে জুম চাষিরা বেশি লাভবান হবেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ জানান, জুমে পাহাড়িরা ধানের সঙ্গে বিভিন্ন ফসল চাষ করছে। এখন এই ফসলের সঙ্গী তুলা। জুম চাষিরা ধান কেটে ফেলার পরও উন্নত জাতের তুলা থেকে তারা অতিরিক্ত টাকা আয় করতে পারবেন। আর বাজারে এই তুলার মূল্য অনেক বেশি বলেও জানান তিনি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এ জাতের তুলা প্রান্তিক পর্যায়ে ছড়িয়ে দিতে পারলে দেশের গার্মেন্টস শিল্পের সর্বোচ্চ আমদানি পণ্য সুতার কাঁচামাল উৎপাদনে সহায়ক হবে।
বাংলাদেশ সময়: ০৯০৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
এসএইচ