ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ১৬ মে ২০২৪, ০৭ জিলকদ ১৪৪৫

অর্থনীতি-ব্যবসা

বাংলাদেশে বিমা ব্যবসার সনদ পেলো ভারতের এলআইসি

সাঈদ শিপন, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫১ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
বাংলাদেশে বিমা ব্যবসার সনদ পেলো ভারতের এলআইসি

ঢাকা: বংলাদেশে জীবন বিমা ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনা করতে নিবন্ধন সনদ পেয়েছে ভারতের বৃহত্তম জীবন বিমা কোম্পানি ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন অব ইন্ডিয়া (এলআইসি)’। প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশে ‘লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশ’ নামে ব্যবসা করবে।



এটি দেশের প্রথম দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানার বিমা কোম্পানি। বাংলাদেশ থেকে এই বিমা কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা হিসেবে আছে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এমটিবিএল) ও ওয়েস্টিন গ্রুপের অ্যাসেট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি (এসিএমএল)।

রোববার (২০ ডিসেম্বর) বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) থেকে প্রতিষ্ঠানটিকে জীবন বিমা কোম্পানি হিসেবে নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়। এই নিবন্ধন সনদে সই করেছেন আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ।

আইডিআরএ থেকে দেওয়া নিবন্ধন সনদ থেক জানা যায়, বিমা আইন ২০১০’র ৮ ও ৯ নম্বর ধরা অনুযায়ী লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশকে বিমা ব্যবসার নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির ঠিকানা হিসেবে দেখানো হয়েছে গুলশান-১’র উদয় টাওয়ার।

আইডিআরএ সূত্রে জানা যায়, দেশি-বিদেশি যৌথ মালিকানার এই বিমা কোম্পানিটিতে উদ্যোক্তা অংশের ৫০ শতাংশ থাকেবে এলআইসির দখলে। উদ্যোক্তা অংশের বাকি ১০ শতাংশের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে এসিএমএ উদ্যোক্তা হিসেবে ৭ শতাংশ শেয়ার ধারণ করবে। আর এমটিবিএল উদ্যোক্তা হিসেবে শেয়ার ধারণ করবে ৩ শতাংশ।

এছাড়া, কোম্পানির বাকি ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হবেন সাধারণ শেয়ারহোল্ডাররা। এ জন্য বাংলাদেশের বিমা আইন অনুযায়ী ৩ বছরের মধ্যে এই কোম্পানিটিকে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হতে হবে। প্রতিষ্ঠানটিতে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ভারতীয় নগরিক অরূপ দাস গুপ্ত।

আইডিআরএ জানায়, লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশকে বিমা ব্যবসার চূড়ান্ত সনদ নিতে আইডিআরএ থেকে গত ১৭ নভেম্বর চিঠি দেওয়া হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘কর্তৃপক্ষের পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর আপনাদের প্রস্তাবিত কোম্পানির সংঘবিধি ও সংঘস্মারক কোম্পানি গঠনের লক্ষ্যে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতর থেকে Certificate of Incorporation and Certificate for Commencement of Business সংগ্রহ করে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের কাছে জমা দিয়ে বিমা ব্যবসায় নিবন্ধন সনদ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করা হলো। ’

ওই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদফতর থেকে সনদ সংগ্রহ করে আইডিআরএ’তে পাঠায় লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশ। এরই অংশ হিসেবে রোববার প্রতিষ্ঠানটিকে জীবন বিমা ব্যবসার সনদ দিলো আইডিআরএ।

প্রতিষ্ঠানটিকে জীবন বিমা ব্যবসার সনদ দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ বাংলানিউজক বলেন, ব্যবসার নিবন্ধন সনদ নেওয়ার জন্য লাইফ ইন্স্যুরেন্স করপোরেশন (এলআইসি) অব বাংলাদেশকে যে শর্ত দেওয়া হয়েছিলো, তা তারা পূরণ করেছে। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটিকে নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়েছে। এই নিবন্ধন সনদে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠানটি জীবন বিমা ব্যবসা করতে পারবে।

এর আগে গত ৬ জুন আটটি শর্তে প্রতিষ্ঠানটিকে সনদ দেওয়ার প্রাথমিক সম্মতিপত্র দেয় আইডিআরএ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উপস্থিতিতে এলআইসির চেয়ারম্যানের হাতে এই সম্মতিপত্র তুলে দেন আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান এম শেফাক আহমেদ। এ নিয়ে বাংলানিউজে একাধিক প্রতিবেদনও প্রকাশ হয়।

এলআইসিকে যে ৮টি শর্ত দেওয়া হয়েছিলো তার দু’টিই প্রাথমিক সম্মতিপত্র পাওয়ার আগেই পূরণ করে প্রতিষ্ঠানটি। ওই শর্ত দু’টি হলো ১০০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনে যৌথ জীবন বিমা প্রতিষ্ঠান করা এবং পরিশোধিত মূলধনের ৫০ শতাংশ শেয়ার এলআইসি ধারণ করা।

বাকি ৬টি শর্ত প্রাথমিক সম্মতিপত্র পাওয়ার ৬ মাসের মধ্যে পূরণ করে নিবন্ধন সনদ নেওয়ার আহবান জানানো হয় প্রতিষ্ঠানটিকে। এরমধ্যে ছিল চূড়ান্ত নিবন্ধন সনদের জন্য বিদেশি ও স্থানীয় উদ্যোক্তাদের ৬০ শতাংশ পরিশোধিত মূলধনের সমপরিমাণ ৬০ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা দিয়ে প্রমাণপত্র আইডিআরএ’র কাছে জমা দিতে হবে। এই ৬০ কোটি টাকার মধ্যে বিদেশি উদ্যোক্তাদের অংশ বৈদেশিক মুদ্রায় জমা দিতে বলা হয়।

প্রতিষ্ঠানটিতে বাংলাদেশ থেকে উদ্যোক্তা রাখার বিষয়ে শর্ত দেওয়া হয়, পরিশোধিত মূলধনের বাকি ১০ শতাংশ বাংলাদেশের কোনো উদ্যোক্তা ধারণ করবে। তবে পাইওনিয়ার ইন্স্যুরেন্স উদ্যোক্তা হিসেবে থাকতে পারবে না। এই প্রতিষ্ঠানটির পরিবর্তে বাংলাদেশের যে কোনো জীবন বিমা প্রতিষ্ঠানকে উদ্যোক্তা হিসেবে রাখতে হবে।

আর মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগের বিষয়ে বলা হয়, কোম্পানির মুখ্য নির্বাহী পদের জন্য যোগ্য ও উপযুক্ত ব্যক্তিকে মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ ও অপসারণ প্রবিধানমালা ২০১৩সহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি, প্রবিধান প্রতিপালনের মাধ্যমে মনোনীত করে যথাযথ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ আইডিআরএ’র অনুমোদনের পর কার্যকর হবে।

অন্যান্য শর্তের মধ্যে ছিল, কোম্পানির এ সংক্রান্ত কর্মপরিকল্পনা যথাযথ ক্ষমতাপ্রাপ্ত ব্যক্তির স্বাক্ষরে আইডিআরএ’র কাছে জমা দিতে হবে।

প্রস্তাবিত কোম্পানির নিবন্ধন সনদ বিমা আইন-২০১০, বিমাকারীর নিবন্ধন প্রবিধানমালা-২০১৩ এবং বিদেশি উদ্যোক্তার শেয়ার ক্রয় বিধিমালা-২০১৩সহ সংশ্লিষ্ট আইন, বিধি-বিধান অনুসরণ করে বিবেচনা করা হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৯ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২০, ২০১৫
এএসএস/টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।